ঢাকা, রবিবার, ২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৬ জুন ২০২৪, ০৮ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

রামুতে শ্বাশুড়িকে কুপিয়ে হত্যা, পুত্রবধূ তিনদিনের রিমান্ডে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০০ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০২২
রামুতে শ্বাশুড়িকে কুপিয়ে হত্যা, পুত্রবধূ তিনদিনের  রিমান্ডে

কক্সবাজার: কক্সবাজারের রামুতে মমতাজ বেগম (৬৫) নামে এক বৃদ্ধাকে ছয় টুকরো করে হত্যার পর মাটি চাপা দেওয়ার অভিযোগে পুত্রবধূ রাশেদা বেগমকে (২৫) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। শনিবার (২৩ জুলাই) সকালে জেলা কারাগার থেকে রাশেদাকে রামু থানায় নেওয়া হয়।

এরপর হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

এর আগে বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে রামু থানার পুলিশ। শুনানি শেষে বিচারক তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

পুলিশ জানায়, গত ১৬ জুলাই বিকেলে উপজেলার দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের পশ্চিম উমখালীতে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় মমতাজ বেগমকে। এরপর তার মরদেহ ছয় টুকরা করে বস্তায় ভরে বাড়ির আঙিনায় পুঁতে ফেলা হয়। ১৭ জুলাই সন্ধ্যায় মাটি খুঁড়ে নিহতের মরদেহের টুকরাগুলো উদ্ধার করে পুলিশ। একই সঙ্গে মমতাজের একমাত্র ছেলে মো. আলমগীরের স্ত্রী রাশেদা বেগমকে গ্রেপ্তার করে। ১৮ জুলাই বিকেলে আদালতের মাধ্যমে রাশেদাকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।

এর পরদিন  ১৯ জুলাই মমতাজের মেয়ে আয়েশা বেগম বাদী হয়ে রাশেদা বেগম, তার দুই ভাই অলী উল্লাহ, তারেক উল্লাহ এবং বাবা সৈয়দ নুরের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন।

রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ারুল হোসাইন বাংলানিউজকে  বলেন, এ মামলার প্রধান অভিযুক্ত রাশেদা বেগম। কারগার থেকে আনার পরই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পারিবারিক কলহের জের ধরে রাশেদা বেগম ধারালো অস্ত্র দিয়ে শাশুড়ি মমতাজকে হত্যা করেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এ হত্যাকাণ্ডে অন্য কারও সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা, তার অনুসন্ধান চলছে। মামলার অন্যান্য আসামিদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।

আলোচিত এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও রামু থানার পরিদর্শক (তদন্ত) অরূপ কুমার চৌধুরী বলেন, চাঞ্চল্যকর মমতাজ হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি খুব গুরুত্ব সহকারে  তদন্ত করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য গত ১৬ জুলাই বিকেলে মমতাজ বেগমকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন ছেলের বউ রাশেদা বেগম।   এরপর মরদেহ কেটে ছয় টুকরা করে বাড়ির আঙিনায় টিউবওয়েলের পাশে গর্ত করে পুঁতে রাখেন। এ সময় ছেলে মো. আলমগীর (৩২) বাড়িতে ছিলেন না। তিনি কক্সবাজার সৈকতের একটি আবাসিক হোটেলের কর্মচারী।

শনিবার বিকেলে  মো. আলমগীর বাড়িতে এসে মাকে না পেয়ে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন।   না পেয়ে ফেসবুকে মায়ের ছবি দিয়ে সন্ধান চেয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন। এতেও তিনি মায়ের খোঁজ পাননি। পরদিন  বিকেল পাঁচটার দিকে তিনি বাড়ির আঙিনার টিউবওয়েলের পাশে মায়ের শাড়ির অংশ দেখতে পেয়ে মাটি খুঁড়তেই তার শাড়ি ও মরদেহ দেখতে পান। এরপর থানায় খবর দেওয়া হলে পুলিশ এসে মমতাজ বেগমের ছয় টুকরো মরদেহ উদ্ধার করে।

এদিকে শুক্রবার (২২ জুলাই) বিকেলে উমখালী গ্রামে মমতাজ বেগমের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও পুত্রবধূ রাশেদার ফাঁসি দাবি করে মানববন্ধন করেছেন এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ। উপজেলার দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের উমখালী হাজির পাড়া এলাকায় নিহতের বাড়ির পাশে রাজারকুল-চেইন্দা সড়কে এই কর্মসূচি পালন করেন তারা।
এ সময় তারা  বলেন, বৃদ্ধা শ্বাশুড়িকে ছেলের বউ কেটে ৬ টুকরো করে মাটিচাপা দেওয়ার ঘটনা সব বিবেকবান মানুষকে হতবাক করেছে। এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত শাস্তির দাবি করে এবং জড়িত সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত  না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার  ঘোষনা দেন তারা।

নিহতের পরিবারের সদস্য সিরাজুল হকের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে রামু উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন, মিঠাছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান খোদেশতা বেগম রীনা, রামু প্রেসক্লাবের সভাপতি নীতিশ বড়ুয়া, মিঠাছড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি জহুর আলম, সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম রানা, ইউপি সদস্য আমির হামজা ও আজিজুল হক দুদু মিয়া, আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল হামিদ ও হাজীরপাড়া জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সংবাদকর্মী নুর মোহাম্মদ বক্তব্য দেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৯ ঘণ্টা, জুলাই ২৩,২০২২,
এসবি/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।