ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ মে ২০২৪, ০০ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

টাঙ্গাইলে ঢালাইয়ের ১ মাস পরেই দেবে গেলো সেতু

সুমন কুমার রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৪ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০২২
টাঙ্গাইলে ঢালাইয়ের ১ মাস পরেই দেবে গেলো সেতু ছবি: বাংলানিউজ

টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলে ঢালাই দেওয়ার এক মাস পরেই সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুর মাঝখানে দেবে গেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদার ও ইঞ্জিনিয়ারের গাফিলতিতে সেতুটি নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই দেবে গেছে।

সেতুটি টাঙ্গাইল-বেড়াডোমা-ওমরপুর সড়কের বেড়ডোমা এলাকার লৌহজং নদীর ওপর অবস্থিত।

বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) রাত সাড়ে ১০ টায় দেবে যায় এ সেতু।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই সেতুটি দেবে যাওয়ায় এ সড়ক ব্যবহারকারীদের আরও দুর্ভোগ বাড়ল। দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতু নির্মাণ শেষ করার দাবি জানিয়েছেন এলাকার মানুষ। এদিকে পৌরসভার ইঞ্জিনিয়ার জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কমিটি করা হবে।

পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তরের আওতায় টাঙ্গাইল পৌরসভা সেতুটির বাস্তবায়ন করছে। আট মিটার প্রশস্থ ও ৩০ মিটার দীর্ঘ সেতুটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে তিন কোটি ৬০ লাখ ১৮ হাজার টাকা।

২০২০ সালের ১২ নভেম্বর থেকে ব্রিক্স অ্যান্ড ব্রিজ লি. অ্যান্ড দ্য নির্মিতি নামের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে কাজটি বাস্তবায়ন শুরু করে। গত ১১ মে কাজটি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ৫৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। গত সপ্তাহে সেতুটির ওপরের অংশে ঢালাই করা হয়। বৃহস্পতিবার রাতে সেতুটির সেন্টারিং সাটারিং সরে গিয়ে মাঝখানে সাড়ে তিন ফুট দেবে যায়। ফলে নির্মাণকৃত সেতুটি কোনো কাজেই আসছে না ব্যবহারীকারীদের।

এতে এক দিকে সরকারের সাড়ে তিন কোটি টাকা অপচয় হলো, অন্য দিকে পশ্চিম টাঙ্গাইলের পশ্চিমাঞ্চলের লাখের বেশি মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়ে গেলো।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, লৌহজং নদীর মাঝখান থেকে গাছ ও বাঁশের পাইল সরে গেছে। সেতুটি মাঝখানে দেবে যাওয়ায় স্থানীয় লোকজন ভিড় করেছে। কয়েকজন শ্রমিক সেতু নির্মাণে কাজ করে যাচ্ছে। দেবে যাওয়া স্থান পৌরসভা ইঞ্জিনিয়ার ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা পরিদর্শন করেছেন।

বেড়াডোমা এলাকার বাসিন্দা হাফিজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ইতোপূর্বে এখানে যে বেইলি সেতু ছিল সেটিও দুবার ভেঙে আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে কয়েক বছর। এ সেতু নির্মাণের কারণেও দুর্ভোগ অব্যাহত আছে। অপর দিকে সেতু না থাকার কারণে এলাকার কেউ বাসা ভাড়া নিতে চায় না। জমির দামও অনেক কমে গেছে।

খোরশেদ হোসেন নামে একজন বাংলানিউজকে বলেন, ইঞ্জিনিয়ার ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে সেতুটি দেবে গেছে। এতে আমাদের আরও কয়েক বছর দুর্ভোগ পোহাতে হবে।

পথচারী আজাদ মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, পার্ক বাজার থেকে বাজার করে নিজেই বহন করে আনতে হয়। কোনো রিকশা আসে না। দু’বছরের অধিক সময় ধরে আমাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

কাশেম মিয়া নামে একজন বলেন, সেতু না থাকায় পাশ্ববর্তী অস্থায়ী সেতুতে মাঝে মধ্যেই যানজটের সৃষ্টি হয়। ছোট খাটো দুর্ঘটনাও ঘটে।

জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সোলায়মান হাসান বাংলানিউজকে বলেন, এ সেতুটির নির্মাণ কাজ অন্যজন পেয়েছিলেন। স্থানীয় এমপি তার কাজ থেকে প্রভাব খাটিয়ে কাজটি হাতিয়ে নেন। পরে তার কর্মী আমিরুলসহ তার অনুসারীদের কাজটি দিয়েছেন। যারা কখনও সেতু নির্মাণ করা দেখেই নাই তারা সেতু নির্মাণ করতে এসেছেন। এটা দুঃখজনক।

তিনি আরও বলেন, নদীতে তেমন পানি না থাকলেও সেতুটি দেবে গেছে। সঠিক পদ্ধতিতে মানসম্মত সেতু নির্মাণ করার দাবি জানালেও তারা সব সময় এমপি দোহাই ও ক্ষমতা দেখিয়েছেন। সরকারের অর্থের অপচয় করার জন্য বাস্তবায়নকারীদের বিচার দাবি করছি।

৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবুল কালাম আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, দুর্ভোগ লাঘবে কাজটি শেষ করার জন্য বারবার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পৌরসভার ইঞ্জিনিয়ার ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন কোনো কথাই শুনেন না। সেতুটি দেবে যাওয়ায় লাখ লাখ মানুষের কয়েক বছরের জন্য দুর্ভোগ বেড়ে গেলো।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আমিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঢাকার। তবে জামিল ভাইসহ কয়েক জন বাস্তবায়ন করছে। আমার নেতৃত্বে কোনো কাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে না।

পৌরসভার ইঞ্জিনিয়ার শিব্বির আহমেদ আজমী বাংলানিউজকে বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রকল্প পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবগত করা হয়েছে। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি করে মূল রহস্য উদঘাটন করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৪ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০২২
জেডএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।