ঢাকা, বুধবার, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২২ মে ২০২৪, ১৩ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

কোরবানির পর বিয়ের কথা ছিল ফায়ার ফাইটার শাকিলের

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৯ ঘণ্টা, জুন ৬, ২০২২
কোরবানির পর বিয়ের কথা ছিল ফায়ার ফাইটার শাকিলের

খুলনা: শাকিলের বিয়ের জন্য মেয়ে দেখা হয়েছিল। কোরবানির ঈদের পর বিয়ের কথা ছিল।

ঘর বাড়ি ভালো করে করা হয়নি বলে বিয়েতে একটু দেরি হচ্ছিল। তার আগেই চলে গেল ভাই আমার।

সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন নেভাতে গিয়ে নিহত ফায়ার সার্ভিস কর্মী শাকিলের মেজ ভাই আসাদুজ্জামান তরফদার সোমবার (০৬ মে) সকালে বাংলানিউজকে এসব কথা বলেন।

কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আমি নিজেও ফায়ার সার্ভিসে চাকরি করি। শনিবার বিকেল ৫টায় মায়ের সঙ্গে ফোনে সবশেষ কথা হয় শাকিলের। এরপর আর আমাদের কারো সঙ্গে কথা হয়নি। শাকিলের মরদেহ আনতে আমার বড় ভাই গেছেন। মরদেহ আসতে দেড়ি হবে। আজকে আসবে কিনা বলা যাচ্ছে না।

খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার সুখদারা গ্রামের সাত্তার তরফদার ও জেসমিন বেগমের ৩ ছেলের মধ্যে সবার ছোট শাকিল হাসান তরফদার (২৪)। কর্মরত ছিলেন ফায়ার সার্ভিসের কুমিরা ইউনিটে ফায়ার ফাইটার পদে। শনিবার রাতে বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুনের খবর শুনে কুমিরা ইউনিটের সঙ্গে তিনিও ছুটে গিয়েছিলেন আগুন নেভাতে। বিস্ফোরণে ফায়ার সার্ভিসের অন্য কর্মীদের সঙ্গে নিহত হন শাকিল। তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

তার মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকে গ্রামের বাড়িতে শুধু শোকের মাতম। ছেলের শোকে কাতর মা-বাবার বিলাপ থামছে না। বাড়িতে ভিড় করেছেন পাড়া-প্রতিবেশী ও স্বজনরা। সান্ত্বনা দেওয়ার কোনো ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না কেউ।

স্বজনদের আশা ছিল আসছে কোরবানির ঈদের পর শাকিলের বিয়েতে বড় অনুষ্ঠান করবে। রোজার ঈদে শাকিল গ্রামের বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করেছিলেন।

বিলাপ করতে করতে শাকিলের বাবা সাত্তার তরফদার বলেন, আমার সব শেষ হয়ে গেছে। বাড়ি থেকে কুমিরা যাওয়ার সময় শাকিল বলে ‘বাবা আপনাদের রেখে আমি কীভাবে থাকবো’। তখন বলি আমার দোয়া সব সময় তোমার সঙ্গে থাকবে। কিন্তু কী হয়ে গেল বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

সুরখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, শাকিল খুব ভালো ও ধার্মিক ছেলে ছিল। ওর বাবা বলেছে শাকিলের বদলি হয়ে গেছিল। কোরবানির পর যশোরের কেশবপুরে যোগদানের কথা ছিল। বিয়ের জন্য মেয়ে দেখা হয়েছে। ঈদের পর বিয়ের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে ফায়ার সার্ভিসে যোগ দেন শাকিল। শুরুতে পোস্টিং ছিল মোংলা উপজেলায়। ৫ মাস আগে সীতাকুণ্ডের কুমিরা ফায়ার স্টেশনে পাঠানো হয় তাকে। শাকিলের বড় ভাই মনিরুজ্জামান তরফদার একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় চাকরি করেন। মেজ ভাই আসাদুজ্জামান তরফদার বটিয়াঘাটা ফায়ার সার্ভিস অফিসে সহকারী বাবুর্চি হিসেবে কর্মরত আছেন। ভাইদের অনুপ্রেরণায় শাকিল ফায়ার সার্ভিসে যোগ দেন।

বাংলাদেশ সময়: ১২০৮ ঘণ্টা, জুন ০৬, ২০২২
এমআরএম/কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।