ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ মে ২০২৪, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সরু রাস্তার পাশে দিঘি, বর্ষায় শিশু শিক্ষার্থীদের ঝুঁকি 

মো. নিজাম উদ্দিন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০২২
সরু রাস্তার পাশে দিঘি, বর্ষায় শিশু শিক্ষার্থীদের ঝুঁকি  এ সরু রাস্তাটি বৃষ্টি হলেই পিচ্ছিল ও কর্দমাক্ত হয়ে যায়

লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার পূর্ব জামিরতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। মূল রাস্তা থেকে প্রায় চারশ' ফুট দূরত্বে বিদ্যালয়ের অবস্থান।

ওই রাস্তা থেকে বিদ্যালয়ের দিকে যেতে যে সরু রাস্তাটি ব্যবহার করা হয়, তার এক পাশে দিঘি, অন্য পাশে রয়েছে খাল।  

গত কয়েক বছর থেকে রাস্তাটির দুই পাশ ভাঙতে ভাঙতে একেবারে সরু হয়ে গেছে। এতে রাস্তাটির পরিস্থিতি একেবারে ভয়ানক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন প্রায়ই বৃষ্টি হচ্ছে। একটু বৃষ্টি হলেই মেঠো পথটিতে কাদা হয়। সেই সঙ্গে পিচ্ছিল হয়ে ওঠে। এছাড়া আসন্ন বর্ষা মৌসুমে সরু এ রাস্তার দুই পাশে থাকবে পানি। ফলে যে কোনো সময় শিশু শিক্ষার্থীরা দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে বলে আশঙ্কা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং এলাকাবাসীর।  

শিক্ষার্থীরা বলছে, এ রাস্তা দিয়ে স্কুলে আসতে আমাদের ভয় লাগে। বর্ষার দিনে দুই পাশেই পানি থাকে। পা পিছলে পানিতে পড়ে যেতে পারি।

বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা জানায়, রাস্তাটি মেরামতের জন্য খাল এবং দিঘির দুই পাড়ে গাইড ওয়াল নির্মাণ করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে দেড় বছর আগে উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দফতরে চিঠি দিয়েও কোনো কাজ হয়নি।  

স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কত ধরনের বরাদ্দ থাকে। ব্যক্তিস্বার্থেও বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে এ বিদ্যালয়ের রাস্তার দিকে কেউ নজর দেয় না।  

জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দিঘলী ইউনিয়নের পূর্ব জামিরতলী গ্রামে ১৯৩০ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চলাচলের জন্য যে রাস্তাটি আছে তার পূর্ব পাশে ওয়াপদা খাল এবং পশ্চিম পাশে একটি দিঘি।  

ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তাটি খাল এবং দিঘিতে ভাঙতে ভাঙতে একেবারে সরু হয়ে গেছে। এতে প্রাথমিকের শিশু শিক্ষার্থীদের চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ঝুঁকি নিয়ে তারা কোনোভাবে সেখান দিয়ে যাতায়াত করছে।  

বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী বাংলানিউজকে বলে, আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ রাস্তা দিয়ে স্কুলে আসি। বৃষ্টির মৌসুমে রাস্তার দুই পাশে অনেক পানি থাকে। যে কোনো সময় পানিতে পড়ার ভয় লাগে। আমাদের রাস্তাটি কেউ যদি ঠিক করে দিত, তাহলে আমরা ভালোভাবে হাঁটতে পারতাম।  

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আলতাফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১১৪ জন। এদের মধ্যে ৯০ ভাগ শিশু এ রাস্তা ব্যবহার করে। বর্ষাকালে রাস্তার দুই পাশেই টইটম্বুর পানি থাকে। এদের অনেকেই সাঁতার জানে না। কখন শিশুরা দুর্ঘটনার মধ্যে পড়ে, এনিয়ে আমরা খুব আতঙ্কে থাকি। এলাকার অনেক অভিভাবক শুধুমাত্র রাস্তার কারণে এ বিদ্যালয়ে তাদের সন্তানকে ভর্তি করাতে চান না। বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না।  

তিনি বলেন, রাস্তার দুই পাশে 'গার্ড ওয়াল' নির্মাণ করে মাটি ভরাটের মাধ্যমে রাস্তাটি মেরামত করা প্রয়োজন। এজন্য মোটা অংকের অর্থ লাগে।

স্থানীয় বাসিন্দা নুর হোসেন ও ফারুক হোসেন বলেন, কয়েক বছর ধরে রাস্তাটির অবস্থা এমন জরাজীর্ণ। প্রশাসনের কারো নজরে পড়ে না। কত দিকে কত কাজ হয়। ব্যক্তিস্বার্থেও সরকারি বরাদ্দ আসে। আর সরকারি এ বিদ্যালয়ের জন্য সরকারি কোনো বরাদ্দ নেই।  

বিদ্যালয়ের সভপতি মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বিদ্যালয়ের রাস্তার সমস্যা সমাধানের জন্য জেলা পরিষদ, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। কিন্তু দেড় বছরেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আমরা চাই, প্রশাসনের পক্ষ থেকে বরাদ্দ দিয়ে দ্রুত রাস্তাটি সংস্কার করা হোক। এতে শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি ছাড়াই বিদ্যালয়ে আসতে পারবে।  

স্থানীয় ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম স্বপন বলেন, রাস্তাটির কাজে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন, তা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে দেওয়া সম্ভব নয়। এ কাজে বড় বাজেট দরকার। জেলা বা উপজেলা পরিষদ থেকে বরাদ্দ দিলে রাস্তার সমস্যা সমাধান করা যায়।  

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম রাস্তাটির বেহাল চিত্রের কথা জানিয়ে বাংলানিউজকে বলেন, শিক্ষা অফিস থেকে বিদ্যালয়ে যে ফান্ড দেওয়া হয়, তাতে রাস্তা সংস্কার করা সম্ভব নয়। জেলা এবং উপজেলা প্রশাসন যেন রাস্তাটির দিকে নজর দেয়, সেজন্য বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আমরা চাই, অতিদ্রুত একটা বরাদ্দ দিয়ে রাস্তাটি নির্মাণ করা হোক।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।