ঢাকা, শুক্রবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৭ মে ২০২৪, ০৮ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

সুনামগঞ্জে বাঁধের চিন্তা বাদ দিয়ে ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষক

মো.আশিকুর রহমান পীর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০২২
সুনামগঞ্জে বাঁধের চিন্তা বাদ দিয়ে ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষক

সুনামগঞ্জ: অসময়ে ভারতীয় পাহাড়ি ঢলের কারণে সুনামগঞ্জের কৃষকের রাতের ঘুম যেন হারাম হয়ে গেছে। কখন কি হয় বোঝা বড় দায়, নদীর পানি ধীরে ধীরে কমতে থাকলেও যা ক্ষতি হওয়ার তা হয়ে গিয়েছে।

 

ঢলের পানি আসার পর নিজের স্বপ্নের ফসলকে বাঁচাতে বাঁধ রক্ষায় বিনাশ্রমে কাজ করে গিয়েছিলেন তারা, তবে নিয়তির ডাক মেনে নিয়ে এখন বাঁধ ভুলে হাওরের ধান কাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন চাষিরা। কারণ এখন আর বাঁধের চিন্তা করে লাভ হবে না বুঝে গেছেন কৃষকরা।

সুনামগঞ্জে এ বছরে প্রায় শতাধিকের ওপরে হাওরে বোরো ধান চাষ করেছেন কৃষকরা। এখন পর্যন্ত ১৫ থেকে ২০টি হাওরের ফসল পানির নীচে তলিয়ে গেছে।  
   

ধান পাকার অপেক্ষা করলে যদি আরও হাওর তলিয়ে যায় সেজন্য অজানা আতঙ্কে কাঁচা ও সামান্য পাকা ধান কেটে ফেলছেন কৃষকরা। এদিকে অনেক হাওরে চুয়ে চুয়ে পানি ঢুকছে এবং বৃষ্টির ফলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় পানির মধ্যেই ধান কাটছেন কৃষকরা।

জেলার সবকটি ফসল রক্ষা বাঁধ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কোন সময় কোন বাঁধ ভাঙে সেটি বলা মুশকিল তাই কৃষকদের বেশি বেশি করে ধান কাটতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কৃষকদের উৎসাহি করা হচ্ছে ৮০ শতাংশ ধান পাকলেই দ্রুত কেটে ফেলার জন্য।

সুনামগঞ্জের শাল্লা, তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর এবং উপজেলার হাওরগুলোর খোঁজ নিয়ে জানা যায় হাওরে হাজার কৃষক ধান কাটছেন। ধান কেটে শুকনো জায়গায় রাখা, শুকানো ও বিশ্রামের জন্য নির্মিত খলায় নিয়ে এসেছেন স্ত্রী সন্তানদের। সরকারের দেওয়া হারভেস্টার মেশিনে এবং হাতে কাস্তে নিয়ে ধান কাটছেন সমানে। সেই ধান সামলাচ্ছেন কৃষাণীরা।

শাল্লা উপজেলায় ছায়ার হাওরের কৃষক লিলু দাশ বলেন, ধান সৃষ্টিকর্তায় আর্শিবাদে ভালো হয়েছে কিন্তু বাঁধের অবস্থা খুব বেশি ভালো না আর নদীর পানিও বাড়ছে। হাওরগুলোতেও পানি জমে যাচ্ছে। এ জন্য ধান কেটে ফেলছি। বাঁধ বাঁচানোর অনেক চেষ্টা করছি আমরা কিন্তু যেখানে বাঁধ দরকার সেখানে বাঁধ না দিয়া অন্য জায়গায় বাঁধ দিলে তো ফসল হানি ঘটবেই।  

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার খরচার হাওরে কৃষক ফিরোজ মিয়া বলেন, বাঁধ রক্ষার জন্য আমরা চেষ্টা করছি কিন্তু পারি নাই। এখন সব ধান পানির নীচে চলে যাচ্ছে। এজন্য এখন আর বাঁধ ঠিকবো কিনা ভাবি না, যা ধান পাইমু তাই দিয়াই কোনোমতে চলে বাঁচতে হবে।

সুনামগঞ্জ স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক ও জেলা বাঁধ রক্ষা ব্যবস্থাপনা ও তদারকি কমিটির সদস্য মো. জাকির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা গত বিশ দিন ধরে বাঁধগুলোতে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে স্থানীয়দের নিয়ে রাতদিন কাজ করেছি। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। কিন্তু হঠাৎ অস্বাভাবিক পানির চাপ বাঁধগুলো নিতে পারছে না। তাই বিভিন্ন স্থানে বাঁধ ভাঙছে। এখন বাঁধে কাজ করবো এমন লোকও পাচ্ছি না। তাই এলাকার মানুষ ফসলের মায়ায় বাঁধ রেখে এখন হাওরে নেমেছেন। তারা ধান কেটে তোলার চেষ্টা করছেন। আমরা একই সঙ্গে বাঁধ রক্ষা ও ধান কাটার কাজ তদারকি করছি।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামসুদ্দোহা বাংলানিউজকে জানান, আজ মঙ্গলবার থেকে নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, এখন বৃষ্টিপাত কম হওয়ার সম্ভাবনাও আছে তাই আমাদের দ্রুত ধান কেটে ফেলতে হবে যদি আরও অপেক্ষা করা হয় তাহলে উজানের বৃষ্টিতে সব চলে যাবে।  

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বাংলানিউজকে জানান, আমরা মাইকিং করে বলছি এবং উৎসাহিত করছি যাদের হাওরে ধান ৮০ ভাগ পেকে গেছে তারা যেন ধান কেটে ফেলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।