ঢাকা, সোমবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বন্ধুকে ঋণ দেয়াই হলো কাল, সব হারিয়ে আজ পথে ওসমান

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৩ ঘণ্টা, মার্চ ৩, ২০২২
বন্ধুকে ঋণ দেয়াই হলো কাল, সব হারিয়ে আজ পথে ওসমান

নীলফামারী: নিবিড় বন্ধুত্ব। প্রয়োজনে নিজের ভিটেমাটি জামানত দিয়ে বন্ধুর ব্যবসায় সাহায্য করলেন।

অথচ সেই বন্ধু ঋণ নিয়ে এখন পলাতক। জামিনদার থাকায় বন্ধুত্বের খেসারত দিতে বসতবাড়ি হারিয়ে সৈয়দপুর শহরের পৌর ১১ নম্বর ওয়ার্ড নতুন বাবুপাড়ার বাসিন্দা শেখ ওসমান গনি এখন একান্নবর্তী পরিবার নিয়ে পথে পথে ঘুরছেন।

শহরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ড বাঁশবাড়ি আমিন মোড়ের বাসিন্দা ও মৃত নাজির উদ্দিনের ছেলে মো. সিরাজ (৫৫)। পেশায় টিনের সামগ্রী তৈরির ব্যবসা। ব্যবসার পরিসর বাড়াতে ২০১১ সালে ন্যাশনাল ব্যাংক সৈয়দপুর শাখা থেকে ২০ লাখ টাকা সিসি ঋণ নেন। এ ঋণের জন্য তার ঘনিষ্ট বন্ধু শহরের পৌর ১১ নম্বর ওয়ার্ডের নতুন বাবুপাড়া এলাকার বাসিন্দা মৃত শেখ আমানতের ছেলে শেখ ওসমান গনি তার ৪ ভাই ও ৬ বোনের অংশিদারীত্বের একমাত্র ৮ শতকের বসতভিটার মূল দলিল জামিনদার হিসেবে জমা রাখেন। বন্ধুর উপকারের কথা ভেবে ওসমান গনি লিখিত অঙ্গীকারনামার শর্তে ঋণ গ্রহণকালে ব্যাংকের শর্তাদি সমূহ মেনে স্বাক্ষর করেন। তবে ঋণ পরিশোধ না করায় ২০১৪ সালে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বাদী হয়ে নীলফামারী অর্থ ঋণ আদালতে মামলা দায়ের করেন। এতে ঋণ গ্রহীতা সিরাজ মামলায় হেরে যান।  

পরে জেলা দায়রা জজ আদালতে ঋণ গ্রহীতার বিরুদ্ধে ২২ লাখ টাকার একটি চেক ডিজঅনার মামলা দায়ের করেন। তবে এ মামলায় ঋণ গ্রহীতা জয়ী হন এবং তাকে নির্দোষ খালাস দেওয়া হয়। রায় পেলেও আত্মগোপন করেন সিরাজ। বন্ধুর ঋণের জন্য ব্যাংকে রক্ষিত ওসমান গনির বসতভিটাটি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ নিজ নামে দলিল করেন। দীর্ঘ ৭ বছর ঋণ গ্রহীতা পলাতক থাকায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জামিনদারকে টাকা পরিশোধে চাপ সৃষ্টি করেন। ব্যাংকের চক্রহারে বৃদ্ধি ঋণের চাকা ঘুরতে ঘুরতে বিশাল অংকে পরিণত হয়েছে। এতো টাকা তিনি কিভাবে আর কেনই বা দেবেন? এ নিয়ে মহাদুশ্চিন্তায় কাটে দিন।

এদিকে, ঋণের টাকা আদায়ে সৈয়দপুর ন্যাশনাল ব্যাংক কর্তৃপক্ষ নীলফামারী অর্থ ঋণ আদালতের দ্বারস্থ হন। আদালত জামিনদারের বাড়িটি ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দিতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) দুপুরে সৈয়দপুর সহকারী কমিশনার মাহমুদুল হাসান, কোর্ট কমিশনার সাইদুল রহমান, নাজির ভরদ চন্দ্রসহ স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন শেখ ওসমান গনির বাড়িটি দখল বুঝে দেন ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে।  

শেখ ওসমান গনি বলেন, বন্ধুত্বের খেসারতে বাড়ি-ঘর হারাতে হবে তা জানা ছিল না। এখন চার পরিবারের ১৩ জন সদস্যকে নিয়ে বৃদ্ধ বয়সে কোথায় যাবো, ভেবে কুল-কিনারা পাচ্ছি না। এ দুর্দশা থেকে মুক্তি পেতে তাই বিত্তশালীসহ সরকারের সহয়তা কামনা করেন তিনি।

এ বিষয়ে ন্যাশনাল ব্যাংক সৈয়দপুর শাখা ব্যবস্থাপক মাহাবুব পারভেজ বাংলানিউজকে বলেন, কাউকে নিঃস্ব করা ব্যাংকের কাজ নয়। দীর্ঘ ৮ বছর ধরে ব্যাংকে পাত্তা দেননি। আর বন্ধুর জন্য তিনি কি করেছেন এটা তার একান্ত বিষয়। ব্যাংক তার প্রাপ্য বুঝে পেয়েছেন। তবে বাড়িটি ফেরত পেতে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে যেতে হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪০ ঘণ্টা, মার্চ ০৩, ২০২২
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।