ঢাকা, সোমবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ব্যয় ২৮৭০ কোটি টাকা

আসছে বাল্ক ক্যারিয়ার, সেলুলার কন্টেইনার, মাদার ও কেমিকেল ট্যাংকার

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২, ২০১৬
আসছে বাল্ক ক্যারিয়ার, সেলুলার কন্টেইনার, মাদার ও কেমিকেল ট্যাংকার ফাইল ফটো

ঢাকা: ২ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের(বিএসসি) জন্য নতুন দু’টি মাদার ট্যাংকার, চারটি সেলুলার কন্টেইনার, দু’টি কেমিক্যাল ক্রুড অযেল ট্যাংকার ও ১০টি বাল্ক ক্যারিয়ার কেনার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার। এগুলো কেনার জন্য প্রকল্প আকারে ইতোমধ্যেই পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব করা হয়েছে।



পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব করেছে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়। প্রস্তাবনায় নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় জানায়, বিএসসি’র সক্ষমতা বৃদ্ধি, বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিএসসি’কে আরও মুনাফা অর্জনে সহায়তা করতেই এ উদ্যোগ। যাতে করে দেশে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় এবং শিপিং খাতের অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা আরও বৃদ্ধি পায়। শিপিং খাতে আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং সরকারি রাজস্ব বৃদ্ধিও এই মহা উদ্যোগের লক্ষ্য।

মাতারবাড়ি ও রামপালসহ অনেক কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এতে করে কয়েক বছর পর প্রচুর পরিমাণে কয়লা অস্ট্রেলিয়া ও ইন্দোনেশিয়াসহ নানা দেশ থেকে আমদানি করতে হবে।

এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে প্রকল্পটি।  

বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন(বিএসসি) জানায়, দু’টি নতুন মাদার ট্যাংকার কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি মাদার ট্যাংকার এক লাখ থেকে এক লাখ ২৫ হাজার ডেডওয়েটটনেজ(ডিডব্লিউটি) ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন।

মাদার ট্যাংকার দু’টি কিনতে মোট খরচ ধরা হয়েছে ৮০১ কোটি ৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রকল্প সাহায্য ৭৮৩ কোটি টাকা। ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের জুন মেয়াদে এগুলো কেনার প্রস্তাব করা হয়েছে।

অন্যদিকে বিএসসি চারটি নতুন সেলুলার কন্টেইনার জাহাজ কেনার প্রস্তাব করেছে। প্রতিটি ১২শ’ থেকে ১৫শ’ ডিডব্লিউটি সম্পন্ন। চারটি সেলুলার কেনা বাবদ ৭০৫ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রকল্প সাহায্য ৬৮৯ কোটি টাকা।

দু’টি নতুন ৩০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার ডিডব্লিউটি সম্পন্ন কেমিক্যাল/ক্রুড অয়েল ট্যাংকার কেনারও প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৬২ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রকল্প সাহায্য ৫৪৮ কোটি ১০ লাখ টাকা।

এছাড়া আরও ১০টি নতুন বাল্ক ক্যারিয়ার কেনার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিটি বাল্ক ক্যারিয়ার ৮ থেকে ১০ হাজার ডিবব্লিউটি সম্পন্ন। এগুলো কেনা বাবদ ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে ৮০২ কোটি ১২ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রকল্প সাহায্য ৭৮৩ কোটি টাকা।
 
বিএসসি সূত্র জানায়, বিএসসি বহরে জাহাজের সংখ্যা ও পরিবহন সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ, ব্যবসায়িক চাহিদা পূরণ ও বিএসসিকে অধিকতর লাভজনক করার জন্য প্রকল্পগুলো হাতে নেওয়া হচ্ছে। দেশের জ্বালানি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সহায়তা দেওয়া, দেশের শিপিং খাতের অবকাঠামো উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের সৃষ্টির লক্ষ্যে এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

বিএসসি আরও জানায়, বর্তমানে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) বছরে প্রায় ৩০ লাখ টন রিফাইন্ড প্রোডাক্ট ডিজেল, কেরোসিন, জেট ফুয়েল ইত্যাদি মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, কুয়েত ও অন্যান্য তেল রফতানিকারক দেশ থেকে আমদানি করে। অদূর ভবিষ্যতে এর পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। বিএসসি বর্ধিত অয়েল এবং ক্রুডঅয়েল পরিবহনের দায়িত্ব নিতে পারলে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। এজন্য উপযোগী পণ্য পরিবহনের চাহিদা মেটাতিই প্রকল্পগুলো হাতে নেওয়া হচ্ছে।

বিএসসি সূত্র আরও জানায়, আশির দশকের শুরুতে বিএসসি’র বহরে জাহাজ ছিল ২৬টি। বর্তমানে রয়েছে মাত্র ৮টি জাহাজ- একটি কন্টেইনার, দু’টি লাইটারেজ ট্যাঙ্কার ও পাঁচটি বহুমুখী পণ্যবাহী জাহাজ। সেগুলোর গড় আয়ু ৩০ বছরের বেশি। এসব জাহাজ মেরামত  ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ও ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে।

গত ২৩ বছর ধরে বিএসসি কোনো জাহাজ সংগ্রহ করতে পারেনি। অত্যাধিক পুরনো মডেলের এসব জাহাজ চলাচলের ওপর আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে। সংস্থাগুলো হলো- পোর্ট স্টেট কন্ট্রোল(পিএসসি), ইন্টারন্যাশনাল সেফটি ম্যানেজমেন্ট (আইএসএম),  ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশন (আইএমও) ইত্যাদি। এসব বিদেশি সংস্থার বিধি-নিষেধের ফলে সরকারের বাণিজ্যিক পরিধি সংকুচিত হয়ে পড়েছে।

বর্তমানে ভাড়া করা জাহাজের মাধ্যমে রিফাইন্ড প্রোডাক্ট ও বাল্ক কর্গো পরিবহন করতে গিয়ে সরকারকে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হয়।  

এ অবস্থায়, আন্তর্জাতিক  শিপিং ট্রেড অস্তিত্ব রক্ষার্থে বিএসসি বহরকে আধুনিক ও ভারসাম্যমূলক করা হচ্ছে।

বিএসসি আরও জানায়, বর্তমানে আন্তর্জাতিক শিপিং ট্রেডে কার্গো পরিবহনের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ৪০০ থেকে ৫০০ লাখ মেট্রিক টন বাল্ক কার্গো প্রতি বছর আমদানি করা হয়। এর মধ্যে খাদ্যশস্য, সুগার, সিমেন্ট, ক্লিংকার ও সার অন্যতম।   এসব পণ্য বাল্ক ক্যারিয়ারে পরিবহন করা হয়।

নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব(উন্নয়ন) জিকরুর রেজা খানম বাংলানিউজকে বলেন, ‘শিপিং কর্পোরেশনের অনেক জাহাজ পুরনো হয়ে গেছে। নতুন জাহাজ নেই বললে চলে। সম্প্রতি সরকার কয়লাভিত্তিক পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এজন্য প্রচুর পরিমাণে কয়লা বিদেশ থেকে আমদানি করা হবে।   এ জন্য উপযোগী বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজ কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে’।

‘এছাড়া দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যেও অয়েল ট্যাঙ্কার কেনা হবে। বর্তমানে বিএসসি বহরে অয়েল ট্যাংকার ও বাল্ক ক্যারিয়ারের ভয়াবহ সংকট দেখা দিয়েছে। এসব কথা মাথায় রেখেই প্রকল্পগুলো হাতে নেওয়া হচ্ছে, যাতে করে আমাদের সক্ষমতা বাড়ে। তাছাড়া ভাড়াভিত্তিক ভাবে শিপিং কর্পোরেশন চললে সরকার আর্থিকভাবে নানা দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটা কাটিয়ে উঠতেও আমাদের এ উদ্যোগ’।

বাংলাদেশ সময়: ০১৫৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০১৬
এমআইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।