ঢাকা, বুধবার, ১৬ আশ্বিন ১৪৩২, ০১ অক্টোবর ২০২৫, ০৮ রবিউস সানি ১৪৪৭

জাতীয়

ঝড়-বৃষ্টিতেও থামে না গার্মেন্টস শ্রমিকের ছুটে চলা

জি এম মুজিবুর, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩:৩৭, অক্টোবর ১, ২০২৫
ঝড়-বৃষ্টিতেও থামে না গার্মেন্টস শ্রমিকের ছুটে চলা ছবি : জি এম মুজিবুর

ঢাকা: ভোরের আকাশে তখনো অন্ধকার। বাইরে ঝিরঝির বৃষ্টি, মাঝে মাঝে গর্জে ওঠা মেঘ, কাঁপন ধরানো বাতাস—সব মিলিয়ে যেন চারদিক থমথমে।

এমন পরিস্থিতিতে বাইরে বের হওয়ার কথা কল্পনাও করেন না অনেকে। কিন্তু কেউ কেউ তখনই রওনা হচ্ছেন কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে। কারণ, সময়মতো না পৌঁছাতে পারলে কেটে যাবে হাজিরা বোনাস, এমনকি পুরো দিনের বেতনও।

রাজধানীর বিভিন্ন গার্মেন্টস এলাকার চিত্র এমনই। সকাল ৮টার মধ্যে হাজিরা না কাটলে কাটা পড়ে বোনাস, বেতনও। তাই ঝড়-বৃষ্টির তোয়াক্কা না করেই রওনা দেন শ্রমিকরা।

তাদের কারো কারো দিন শুরু হয় ভোর ৫টায়। রান্না-বান্না, সংসারের কাজ সেরে, পলিথিনে মোড়ানো লাঞ্চবক্স হাতে বেরিয়ে পড়েন তারা। অনেকের গন্তব্য দূরের কোনো গার্মেন্টস কারখানা।

পথে ছাতা উল্টে যায়, ভিজে যায় শরীর, কাদায় পা পিছলে পড়ে যান কেউ কেউ। তবুও থামে না গন্তব্যের দিকে দৌড়। কারণ, ঘড়ির কাঁটা যেন তাদের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ।

পটুয়াখালীর মাসুদ মিরপুর ১৩ নম্বরের বিআরবি গার্মেন্টসে চাকরি করেন। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, সাত-আট বছর ধরে এই গার্মেন্টসে আছি। আগে আরও কিছু গার্মেন্টসে কাজ করেছি। সকাল ৮টার এক মিনিট পর গেলেই ৭২৫ টাকা হাজিরা বোনাস কাটা যায়। অনেক গার্মেন্টসে তো পুরো দিনের বেতনই কেটে নেয়।

দুপুরে এক ঘণ্টার লাঞ্চ ব্রেক, কিন্তু ঠিক সময়ে ফিরতে না পারলে সেখানেও হাজিরা ওঠে না।

আমি প্রথমে চাকরি শুরু করেছিলাম ৪,৪০০ টাকা বেতনে। এখন ১৫,০০০ টাকা পাই। সকাল ৮টা থেকে রাত ৮-১০টা পর্যন্ত ডিউটি করতে হয়। সঙ্গে ওভারটাইমও করি।

ঝড়-বৃষ্টি কিছুই আমাদের আটকাতে পারে না। অসুস্থ হলেও আসতে হয়। অফিসে পরীক্ষা করে যদি মনে করে অসুস্থ, তাহলে ছুটি দেয়, না হলে না।

বুধবার (১ অক্টোবর) সকাল থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির ভেতরেই কাজে যাচ্ছেন গার্মেন্টস কর্মী নাসিমা আক্তার। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ভাই, এখন কথা বলার সময় নাই। আর মাত্র ৫ মিনিট বাকি আছে, বৃষ্টি হচ্ছে, শরীর ভিজে একাকার। এখন অফিসে না পৌঁছাতে পারলে হাজিরা বোনাস কাটা যাবে। আমার বাচ্চা কয়েকদিন ধরে জ্বরে। তাকে ফেলে রেখে যাচ্ছি। কারণ, ওর মুখে খাবার তুলে দিতে হবে। এই গার্মেন্টসে সাত-আট বছর ধরে কাজ করছি। স্বামী রিকশা চালায়। দুই জনের আয় মিলিয়ে ঢাকায় থাকা কষ্ট। বাজারে জিনিসপত্রের দাম এমনভাবে বাড়ছে, কিছুদিন পর হয়তো গ্রামে চলে যেতে হবে।

প্রতিদিন ঝড়-বৃষ্টি, অসুস্থতা বা নানা প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে সময়মতো কাজে পৌঁছে যান লাখো শ্রমিক। তাদের এই শ্রমেই চলছে দেশের অন্যতম প্রধান রপ্তানি খাত-পোশাকশিল্প। ভোরবেলা ভেজা শরীর আর ক্লান্ত চোখ নিয়ে শুরু হওয়া দিন শেষ হয় গভীর রাতে।

জিএমএম/এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।