ঢাকা, বুধবার, ১৬ আশ্বিন ১৪৩২, ০১ অক্টোবর ২০২৫, ০৮ রবিউস সানি ১৪৪৭

জাতীয়

সেপ্টেম্বরে ৬৭টি রাজনৈতিক সহিংসতায় ৯ জনের মৃত্যু

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯:২৩, অক্টোবর ১, ২০২৫
সেপ্টেম্বরে ৬৭টি রাজনৈতিক সহিংসতায় ৯ জনের মৃত্যু হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি

সেপ্টেম্বর মাসে কমপক্ষে ৩৭টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৯ জন এবং আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২৬৮ জন। এ মাসে অন্তত ৩২টি ঘটনায় কমপক্ষে ৪২ জন সাংবাদিক হত্যা, নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন।

আধিপত্য বিস্তার, রাজনৈতিক বিরোধ, সমাবেশ কেন্দ্রিক সহিংসতা, কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধ, চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন স্থাপনা দখল কেন্দ্রিক অধিকাংশ সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। সেপ্টেম্বর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার সংখ্যা আগস্ট মাসের তুলনায় কিছুটা কমেছে কিন্তু নিহতের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।

মঙ্গলবার সেপ্টেম্বর মাসের মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেছে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস)।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে— সেপ্টেম্বর মাসে কমপক্ষে ৩৭টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৯ জন এবং আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২৬৮ জন। আধিপত্য বিস্তার, রাজনৈতিক বিরোধ, সমাবেশ কেন্দ্রিক সহিংসতা, কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধ, চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন স্থাপনা দখল কেন্দ্রিক অধিকাংশ সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। সেপ্টেম্বর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার সংখ্যা আগস্ট মাসের তুলনায় কিছুটা কমেছে কিন্তু নিহতের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।

গত আগস্ট মাসে ৬৭টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন ৪ জন এবং আহত হয়েছিলেন ৫১৪ জন। সেপ্টেম্বর মাসে সহিংসতার ৩৭টি ঘটনার মধ্যে বিএনপির অন্তর্কোন্দলে ২৪টি ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ১৯২ জন ও নিহত ৭ জন, ৭টি বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ৪২ জন ও নিহত ১ জন, ৩টি বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ৩২ জন এবং ৪টি ঘটনা ঘটেছে বিভিন্ন দলের মধ্যে। নিহত ৮ জনের মধ্যে বিএনপির ৮ জন ও জামায়াতের একজন।


সেপ্টেম্বর মাসের ৩৭টি সহিংসতার ঘটনার ৩৪টিই ঘটেছে বিএনপির অন্তর্কোন্দলে ও বিএনপির সাথে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মধ্যে। এর পাশাপাশি দুষ্কৃতকারীদের দ্বারা রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার অন্তত ১৪টি ঘটনা ঘটেছে। এসব হামলায় কমপক্ষে ৬ জন আহত এবং আওয়ামী লীগের ৩ জন ও বিএনপির ৪ জনসহ মোট ৯ জন নিহত হয়েছেন।

এ ছাড়াও এ মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় কমপক্ষে ২৫ জন গুলিবিদ্ধ এবং ত্রিশের অধিক বাড়ি-ঘর, যানবাহন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ও রাজনৈতিক কার্যালয় ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।

সেপ্টেম্বর মাসে অন্তত ৩২টি ঘটনায় কমপক্ষে ৪২ জন সাংবাদিক হত্যা, নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। এসব ঘটনায় নিহত হয়েছেন একজন, আহত হয়েছেন অন্ততপক্ষে ২০ জন, লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন ৯ জন, হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন ৬ জন সাংবাদিক। ৩টি মামলায় ৬ জন সাংবাদিককে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

খুলনার খানজাহান আলী সেতুর (রূপসা সেতু) নিচ থেকে সাংবাদিক ওয়াহেদ-উজ-জামান বুলুর (৬০) লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই সাংবাদিকের ডান হাত ও মুখমণ্ডলে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। সাংবাদিক বুলু চ্যানেল ওয়ান, ভোরের কাগজ, বঙ্গবাণী, দৈনিক প্রবাহসহ গত প্রায় তিন দশক ধরে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সঙ্গে কাজ করেছেন।

এ ছাড়াও কক্সবাজার শহরের পর্যটন করপোরেশনের হোটেল শৈবালের পেছনে (পশ্চিমে) সমুদ্রসৈকতের ঝাউবাগান থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মোহাম্মদ আমিন (২৩) নামে এক তরুণ সাংবাদিকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক আমার প্রাণের বাংলাদেশ-এর উখিয়া উপজেলা প্রতিনিধি বলে জানা গেছে।

এইচআরএসএসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে— সেপ্টেম্বরে গণপিটুনির ২৮টি ঘটনায় নিহত হয়েছেন অন্তত ২৪ জন এবং আহত হয়েছেন ২১ জন। গত ৭ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ছিনতাইকারী সন্দেহে সাজ্জাদ হোসেন (৩০) নামের এক মানসিক প্রতিবন্ধী যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ছাড়া গত ১৪ সেপ্টেম্বর ফেনীর সদর উপজেলার মোটবীতে চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন মনছুর আহম্মদ (৪০) নামের এক ব্যক্তি।

এ মাসে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর কমপক্ষে ৮টি হামলার ঘটনায় ২টি মন্দিরে হামলা ও ২০ টি প্রতিমা ভাঙচুরের  ঘটনা ঘটেছে। এ মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে অন্তত ৫টি মাজারে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে— মাসে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ২টি হামলার ঘটনায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ( বিএসএফ ) আক্রমণে ২ জন বাংলাদেশি আহত হয়েছেন এবং গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৩ জনকে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে কমপক্ষে ১৩২ জন বাংলাভাষী মানুষকে বাংলাদেশে পুশইন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। অপরদিকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের কক্সবাজারের টেকনাফে বঙ্গোপসাগরের জলসীমা থেকে ৫টি ট্রলারসহ ৪০ জন জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি।

এ মাসে ২৮টি শ্রমিক নির্যাতনের ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৭ জন এবং আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৫৭ জন। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং শ্রমিকদের সুরক্ষামূলক সরঞ্জামের অভাবে দুর্ঘটনায় ১৮ জন শ্রমিক তাদের কর্মক্ষেত্রে মারা গেছেন।

এইচআরএসএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—এটি উদ্বেগজনক যে, ১৩৩ জন শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন যাদের মধ্যে ২৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং ১০৮ জন শিশু শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ৪ সেপ্টেম্বর রংপুর মহানগরের হারাটি উচ্চবিদ্যালয়ে এক বাগছাস নেতা ইমতিয়াজ আহম্মদের (ইমতি) শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করে প্রায় অর্ধশত ‘অকৃতকার্য’ শিক্ষার্থীকে মারধর করেছেন। এ ঘটনায় বহু শিক্ষার্থী আহত হয়েছে এবং তারা চরম আতঙ্ক ও মানসিক আঘাতের শিকার হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়— দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নে রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, সাংবাদিক, ও নাগরিকদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে সার্বিক পরিস্থিতি উন্নয়ন করা জরুরি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জনগণের মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আর এ সকল বিষয় বাস্তবায়ন করতে না পারলে দেশের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি আরো অবনতির দিকে যাবে।

এজেডএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।