রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজেকে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় সঠিক তদন্ত ও দায়ীদের বিচারসহ আটটি দাবি জানিয়েছে দুর্ঘটনায় আহত- নিহতদের পরিবার।
মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন হলে বিমান দুর্ঘটনায় আহত-নিহত পরিবারের সদস্যদের আয়োজনে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি তুলে ধরেন নিহত নাজিয়া-নাফির বাবা আশরাফুল ইসলাম।
নিহত ও আহতদের পরিবারগুলোর দাবি হচ্ছে— দুর্ঘটনায় আহতদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা; নিহতদের পরিবারকে পাঁচ কোটি এবং আহতদের পরিবারকে দুই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া; আহতদের জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনায় আজীবন বিনামূল্যে চিকিৎসা নিশ্চিতকরণ এবং হেলথ কার্ড প্রদান করা; ২১ জুলাইকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শোক দিবস হিসেবে পালন করা; নিহতদের কবর স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করা; নিহত পাইলট, শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও স্টাফদের শহীদী মর্যাদা (সনদ ও গেজেটসহ) প্রদান করা এবং নিহতদের স্মরণে উত্তরায় একটি আধুনিক মসজিদ নির্মাণ করা।
সংবাদ সম্মেলনে নিহত তাসনিয়া হকের বাবা নাজমুল হক বলেন, ২১ জুলাই বাংলাদেশের ইতিহাসে এক শোকাবহ দিন। সেদিন দুপুর ১টা ১২ মিনিটে রাজধানীর দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের হায়দার আলী ভবনে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। মুহূর্তেই তৈরি হয় এক হৃদয়বিদারক পরিস্থিতি। ঘটনাস্থলে কোমলমতি শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও স্টাফ নিহত এবং অনেকে আহত হন। এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা পুরো জাতি তথা বিশ্বকে স্তম্ভিত করে দেয়। ঘটনার পর প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন এবং পরদিন রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেন। এ পর্যন্ত পাইলটসহ ৩৭ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এর মধ্যে রয়েছে ২৮ জন শিক্ষার্থী, ৩ জন অভিভাবক, ৩ জন শিক্ষক এবং স্কুলের প্রিয় স্টাফ মাসুমা বেগম। এখনও হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন ৯ জন, আর যারা চিকিৎসা শেষে ফিরেছেন তারাও নিদারুণ কষ্টের মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন।
তিনি বলেন, আমরা বিমান দুর্ঘটনায় হতাহত পরিবারের সদস্যরা আজ এখানে উপস্থিত হয়েছি। আমাদের প্রিয় সন্তানদের কবর দিয়ে প্রতিনিয়ত দুঃসহ স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছি। আহতদের ফিজিওথেরাপি, ড্রেসিং, গ্রাফটিংসহ দীর্ঘ চিকিৎসার ব্যয় ও যন্ত্রণা ভাষায় প্রকাশের নয়। অনেক শিশু ও শিক্ষক আছেন যাদের অবস্থা এতটাই গুরুতর যে তারা হয়তো আর কখনও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন না। তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত, জীবন-জীবিকা থমকে গেছে। দুর্ঘটনার পর প্রথম দিকে কিছু খোঁজখবর মিললেও বর্তমানে স্কুল কর্তৃপক্ষ ছাড়া আর কেউ পাশে নেই। প্রধান উপদেষ্টা তিনজন শিক্ষকের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেও আমাদের সঙ্গে করেননি।
সন্তান হারা এই পিতা বলেন, আমাদের সন্তানদের আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া মুখগুলো আমরা কবরে রেখে এসেছি। এই অমানবিক ট্র্যাজেডির সঠিক কারণ উদঘাটন করতে হবে। হতাহত পরিবারের সদস্যদের ক্ষতিপূরণ এবং আহতদের আজীবন বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ফলোআপ নিশ্চিত করতে হবে। কারণ আমাদের সন্তানরা স্কুলে ছিল, সরকারের যুদ্ধবিমান স্কুলে গিয়ে পড়েছে। পৃথিবীর কোথাও এমন ঘটনা ঘটেনি। এ বিমান যেকোনো জায়গায়, যেকোনো মানুষের ওপর পড়তে পারত। তাই এ দায় রাষ্ট্রকেই নিতে হবে। আমাদের দাবি, সরকার যেন দ্রুত এ দুর্ঘটনার সঠিক তদন্ত করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ায়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন আহত রায়ান তৌফিকের বাবা সুমন, নিহত সামিউলের বাবা রেজাউল করিম শামীম, আহত সানজিদা বেলায়েত মেয়ে জায়ানা মাহবুব প্রমুখ।
ডিএইচবি/এএটি