ঢাকা, রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

কম দামে ইফতার বিক্রি করে প্রশংসিত ‘মানবিক মিরার হোটেল’

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০১ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০২৪
কম দামে ইফতার বিক্রি করে প্রশংসিত ‘মানবিক মিরার হোটেল’

নীলফামারী: রমজান মাসে যেখানে পণ্যের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করার প্রবণতা বেশি চলছে সেখানে ব্যতিক্রম চিত্রের দেখা মিলল নীলফামারীর সৈয়দপুরে।  

শহরের গোলাহাট কবরস্থান গেট সংলগ্ন এলাকায় ইফতারসামগ্রীর প্রতি আইটেম ২ টাকা ছাড়ে বিক্রি হচ্ছে ‘মিরার হোটেল’নামের দোকান।

এতে উপকৃত হচ্ছেন ওই এলাকার নিম্নবিত্ত রোজাদার পরিবারগুলো।  

বিষয়টি আশপাশের এলাকাসহ স্থানীয়ভাবে ব্যাপক প্রশংসিত হচ্ছে। হোটেলটি ‘মানবিক মিরার হোটেল’ বলে পরিচিতি পাচ্ছে।

সরেজমিনে রোববার (১৭ মার্চ) গিয়ে দেখা যায়, শহরের গোলাহাট মহল্লার কবরস্থান গেট সংলগ্ন এলাকায় মিরার হোটেলের মালিক মো. জাভেদ (৫২) তার দুই ছেলে সামির (২৫) ও মিরাজকে (২২) নিয়ে  পিঁয়াজু, পুরী, আলুর চপ, বেগুনি ভাজছেন।  

অন্যান্য সব দিনে প্রতিটি পিঁয়াজু, পুরী, আলুর চপ, বেগুনির দাম ৫ টাকা করে পিস বিক্রি করেন তারা। কিন্তু রমজান উপলক্ষে সেই ৫ টাকার এসব ভাজাপোড়া বিক্রি করছেন মাত্র ৩ টাকায়।

হোটেলের সার্বিক তত্ত্বাবধায়ক সামির বলেন, এলাকার গরিব রোজাদাররা যাতে নির্বিঘ্নে ইফতার কিনতে পারে সেজন্যই প্রতি পণ্যে দুই টাকা ছাড় দিয়েছি আমরা। পাঁচ টাকার পণ্য ৩ টাকা করে দিয়েছি। যাতে একজন মাত্র ২০ টাকাতে পরিপূর্ণ ইফতারসামগ্রী নিয়ে যেতে পারেন। আলহামদুলিল্লাহ এতে বিক্রিও হচ্ছে আর গরিবদের দোয়াও পাচ্ছি।  

দাম কমিয়ে বিক্রি করায় লোকসান হচ্ছে কি না জানতে চাইলে সামিরের বাবা জাভেদ বলেন, লাভ কম হচ্ছে কিন্তু লোকসান হচ্ছে না। তবে আলহামদুলিল্লাহ, এতে আমাদের কোনো আফসোস নেই। আসলে আমি আমার স্ত্রী, ছেলে-মেয়েই মিলেই সব কাজকর্ম করি। এখানে লেবার খরচ বেচে যায় বলে পুষিয়ে নিতে পারি।

মিরার হোটেলের এই মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি ইতোমধ্যে নজর কেড়েছে স্থানীয়দের। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির দিনে সামির-মিরাজের এই উদ্যোগে খুশি ক্রেতারা।

ইফতার কিনতে আসা সোনিয়া বেগম বলেন, ‘আমরা মহল্লারই অন্যান্য জায়গায় গিয়ে যে দামে ইফতার কিনি, তার চেয়ে অনেক কমেই বাড়ির পাশে সামির ইফতার
বিক্রি করছেন। এটি একটি মহৎ উদ্যোগ। ’ 

সুমন নামে আরেকজন ক্রেতা বলেন, ‘আসলে এটা হলো গরিবের হোটেল। রমজান উপলক্ষ্যে কম দামে বিক্রি করায় আমাদের মত দিনমজুররা এখান থেকেই ইফতারি কিনতে পারছি।

স্থানীয় বাসিন্দা বাবু মিয়া বলেন, ‘আমরা এখান থেকে কম দাসে ইফতার কিনি। বাইরে অন্য দোকানে দাম ২ থেকে ৩ টাকা বেশি নেয়। তাই এলাকার সাধারণ মানুষ এই দোকান থেকে ইফতার কেনে। আমিও কম দামে পাওয়া যাচ্ছে বলে প্রতিদিন এখান থেকে ইফতার নিয়ে থাকি। রমজানে নামমাত্র লাভে ইফতার বিক্রি করছে তারা। ’ 

স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি আশপাশের এলাকা থেকেও মানুষ আসছেন মানবিক মিরার হোটেলে।  

সৈয়দপুর গোলাহাটের বিশিষ্ট সমাজসেবক ও সাবেক প্যানেল মেয়র হিটলার চৌধুরী বলেন, ‘আরবদেশ সমূহ মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর অনেক দেশেই মাহে রমজানের সময় কম দামে পণ্য বিক্রি হয়। কিন্তু আমাদের দেশের চিত্র উল্টো রমজানে বেশিরভাগ পণ্যে দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু আমাদের গোলাহাট এলাকার সামির নামের এক তরুণের মহল্লার ভেতরে থেকেও ৫ টাকার ইফতার ৩ টাকায় বিক্রির যে উদ্যোগ নিয়েছেন, সেটি বেশ প্রশংসনীয়। ’  

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০২৪
এসএএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।