রাজশাহী: কার্তিক পেরিয়ে বিদায় নিতে চলেছে অগ্রহায়ণ। সোনালি ধানের নুইয়ে পড়া শীষে মুক্ত ঝরা শিশির দিয়ে প্রকৃতি থেকে চলে যাচ্ছে ঋতুরানী হেমন্ত।
একটু একটু করে নামতে শুরু করেছে তাপমাত্রা। কনকনে ঠাণ্ডা বাতাস জানান দিচ্ছে, শিগগিরই জেঁকে বসতে যাচ্ছে শীতের তীব্রতা। এরই মধ্যে আবহমান বাংলার ঘরে ঘরে শুরু হয়েছে নবান্ন উৎসব। সংসারের সব অভাব-অনাটন ছাপিয়ে নতুন চালের পিঠাপুলির সুগন্ধে মৌ মৌ করতে শুরু করেছে কৃষাণ-কৃষাণীর আঙিনা।
আমন ও আউশসহ নতুন সব জাতের ধান কেটে ঘরে তোলার ধুম পড়ে গেছে গ্রাম বাংলায়। ধান কাটা ও মাড়াই নিয়ে কৃষক কূলে যখন বেড়েছে ব্যস্ততা তখন দুয়ারে কড়া নাড়ছে শীত। একটু দেরিতে হলেও শীত পড়তে শুরু করেছে। এই ডিসেম্বরে আসছে শৈত্যপ্রবাহও। আজই প্রথম তাপমাত্রার পারদ নেমে এসেছে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে। আর শৈত্যপ্রবাহ শুরু হলে এই তাপমাত্রা নামতে পারে এক অঙ্কে।
সাধারণত দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৬ ডিগ্রিতে নামলেই তা শীত হিসেবে বিবেচিত হয়। সেই অর্থে এ কথা বলাই যায় যে, বাংলা সনের পঞ্জিকা ঘুরে আবার অভিষিক্ত হতে যাচ্ছে ‘শীতকাল’।
উত্তরের বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে আজ (বৃহস্পতিবার, ১৪ ডিসেম্বর) ভোর থেকেই মিলছে পুরোদস্তুর শীতের আমেজ। ঘন কুয়াশার চাদর ভেদ করে সকাল থেকে সূর্যের মুখ দেখা গেলেও শরীরে মিলেছে হিমেল হাওয়ার অনুভব। কেবল ভোরেই নয়, সন্ধ্যা ও রাতেও রাজশাহীতে শীতের মাত্রা টের পাওয়া যাচ্ছে গেল দু-দিন থেকে। এ জন্য শীতের ভারি পোশাক উঠেছে সব বয়সের মানুষের শরীরে।
এছাড়া শীতের শুরুতেই গুটিশুটি হয়ে পড়েছেন ছিন্নমূল মানুষ। প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্র না থাকায় ভাসমান ও ছিন্নমূল মানুষ শীত নিয়ে ভাবনায় পড়েছেন এখনই। আর রাজশাহীর নিম্নবিত্ত মানুষগুলো শীত নিবারণের জন্য কম দামে শীতবস্ত্র কিনতে ভিড় করছেন শহরের ফুটপাতের দোকানগুলোতে।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক (ইএমও) ডা. মো. বিল্লাল হোসেন জানান, কয়েকদিন থেকে ক্রমেই ঠাণ্ডার মাত্রা বাড়ছে। তাই হাসপাতালে শীতজনিত রোগীর সংখ্যাও বাড়তে শুরু করেছে। তবে এখনও শীতের প্রকোপ বেশি না থাকায় তার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যের মতো নয়। অন্তর্বিভাগের চেয়ে এখন বহির্বিভাগেই ভিড় বেশি। আর শীতের আবহাওয়াজনিত কারণে আক্রান্তদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধদের সংখ্যা বেশি। আক্রান্তদের বেশিরভাগই আবার ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, হৃদ্রোগ, অ্যাজমা নিয়ে হাসপাতালে আসছেন বলেও জানান এই চিকিৎসক।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন বলেন, কয়েকদিন থেকেই তাপমাত্রা নামছে। তবে রাজশাহীতে আজই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মূলত ১০ ডিসেম্বর থেকে তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। এর মধ্যে ১০ ডিসেম্বর রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৫ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১১ ডিসেম্বর ছিল ১২ দশমিক ৩, ১২ ডিসেম্বর ১৪ দশমিক ৫ এবং গতকাল ১৩ ডিসেম্বর রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
জানতে চাইলে আবহাওয়া কর্মকর্তা লতিফা হেলেন আরও বলেন, সাধারণত দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ এবং ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়ে থাকে। সেই হিসেবে শীত নামতে মধ্য ডিসেম্বরের পর অর্থাৎ পৌষ মাস আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তবে রাতে ও ভোরে যেভাবে শীত পড়ছে তাতে ২৩ দিনের মধ্যে তাপমাত্রা আরও নামবে।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ইনচার্জ) রহিদুল ইসলাম বলেন, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি এসে দিন ও রাতের তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। যদিও সেই হাড় কাঁপানো শীত এখনই নামছে না। এর জন্য জানুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে। তবে ডিসেম্বর রাজশাহীসহ গোটা উত্তরাঞ্চলের ওপর দিয়ে ১২টি মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার পূর্বাভাস আছে। আর ও জানুয়ারিতে দেখা মিলতে পারে তীব্র শৈত্যপ্রবাহের। ওই সময় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এক অঙ্কের ঘরে নেমে আসতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে, আবহাওয়া অধিদপ্তরের দীর্ঘ মেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ডিসেম্বর মাসে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হতে পারে। তাই এ মাসে রাতের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে কমতে থাকবে। এ মাসের শেষার্ধে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে এক থেকে দুইটি মৃদু (০৮-১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ও মাঝারি (০৬-০৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। শেষ রাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের উত্তরাঞ্চল ও নদ-নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০২৩
এসএস/এফআর