ঢাকা, সোমবার, ৯ ভাদ্র ১৪৩২, ২৫ আগস্ট ২০২৫, ০১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

জাতীয়

৩০% নবায়নযোগ্য জ্বালানি অর্জনে দরকার ৪২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ: সিপিডি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:১৩, আগস্ট ২৪, ২০২৫
৩০% নবায়নযোগ্য জ্বালানি অর্জনে দরকার ৪২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ: সিপিডি ‘২০৪০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পুনর্মূল্যায়ন: স্মার্ট লক্ষ্য ও প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের পূর্বাভাস‘ শীর্ষক সংলাপ | ছবি: জিএম মুজিবুর

বাংলাদেশে ২০৪০ সাল নাগাদ ৩০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হলে ৩৫ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ সক্ষমতা স্থাপন করতে হবে। এ জন্য ৩৫.২ বিলিয়ন থেকে ৪২.৬ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন।

তবে নীতিমালার অসঙ্গতি, জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধে পরিকল্পনার অভাব এবং বিনিয়োগ অনিশ্চয়তার কারণে লক্ষ্য পূরণে হুমকিতে পড়তে পারে বলে মনে করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)।

রোববার (২৪ আগস্ট) রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে সিপিডি আয়োজিত ‘২০৪০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পুনর্মূল্যায়ন: স্মার্ট লক্ষ্য ও প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের পূর্বাভাস‘ শীর্ষক সংলাপে এ কথা বলা হয়। সংলাপে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা সহকারী মেহেদী হাসান শামীন ও হেলেন মাশিয়াত প্রিয়তি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় নীতি পরিকল্পনায় নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্য ভিন্ন ভিন্ন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসব লক্ষ্যে বাস্তবতাকে পাশ কাটানো হয়েছে। মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্ল্যানে ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতি-২০২৫ এ ২০৪০ সালের মধ্যে এ লক্ষ্য ৩০ শতাংশ। আবার সমন্বিত বিদ্যুৎ জ্বালানি মহাপরিকল্পনায় (আইইপিএমপি) ২০৪০ সালের মধ্যে পরিচ্ছন্ন জ্বালানির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ শতাংশ।

প্রতিবেদনে আইইপিএমপি-এর ‘পরিচ্ছন্ন জ্বালানি’ সংজ্ঞার সমালোচনা করা হয়েছে, যেখানে পারমাণবিক বিদ্যুৎ ও কার্বন ক্যাপচারের মতো অপ্রমাণিত প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে ২০৪১ সালের লক্ষ্য পূরণের মাত্র ৯ শতাংশ প্রচলিত নবায়নযোগ্য উৎস—সৌর ও বায়ু থেকে আসবে।

এদিকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত জাতীয় গ্রিডে নবায়নযোগ্য জ্বালানি যুক্ত হয়েছে মাত্র ৩.৬ শতাংশ, যেখানে গ্যাসভিত্তিক জীবাশ্ম জ্বালানির সক্ষমতা ৪৩.৪ শতাংশ। এ ছাড়া আমদানিকৃত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতাও সমানভাবে বাড়ছে।

সিপিডির গবেষণা বলছে, সরকারের জ্বালানি পরিকল্পনার অসামঞ্জস্যতার ফলে একদিকে দেশে জীবাশ্ম জ্বালানির উদ্বৃত্ত সক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে অন্যদিকে লক্ষ্য থাকলেও নবায়নযোগ্য খাতে বিশাল ঘাটতি সৃষ্টি হচ্ছে। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সরকারের লক্ষ্য পূরণ করতে হলে ২০৩০ সালের মধ্যে প্রয়োজনীয় নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সক্ষমতা হতে হবে ১৮,১৬২ মেগাওয়াট। অথচ বর্তমান পরিকল্পনায় রয়েছে মাত্র ১,৯৬৭ মেগাওয়াট—যা আগামী পাঁচ বছরে ১৬,০০০ মেগাওয়াটেরও বেশি ঘাটতি তৈরি করবে।

সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বাংলাদেশ যদি নীতিগত অস্পষ্টতা ও জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা বজায় রাখে, তবে আর্থিক সংকট ও জলবায়ু লক্ষ্যে ব্যর্থতার ঝুঁকি বাড়বে। অন্যদিকে, ঐক্যবদ্ধ ও স্মার্ট কৌশল গ্রহণ করলে বাংলাদেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে সফল রূপান্তর করতে পারবে। এখনই সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার সময়।

অনুষ্ঠানে প্যানেলিস্ট হিসেবে বক্তব্য রাখেন, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ফাহমিদা খানম, পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশের চেয়ারম্যান রেজওয়ান খান, বাংলাদেশ ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক প্রেসিডেন্ট ইমরান করিম, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মির্জা শওকত আলীসহ প্রমুখ।

জেডএ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।