ঢাকা, সোমবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

নির্বাচনের পূর্বাপর হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ৮ দাবি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০২৩
নির্বাচনের পূর্বাপর হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ৮ দাবি

ঢাকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ ৮ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।

সোমবার (২০ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানান সংগঠনটির নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত বলেন, সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল গত ১৫ নভেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল ঘোষণা করেছেন। এই ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে নানান রাজনৈতিক দল ও জোট নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কেউ কেউ সিদ্ধান্ত গ্রহণের অপেক্ষায় রয়েছে। আমরা আশা করি, দেশের সব দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক দল গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের লক্ষ্যে দেশপ্রেমিক ভূমিকা পালনে এগিয়ে আসবে।

তিনি আরও বলেন, এদেশের দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী নির্ভয়ে নির্বিঘ্নে নিজ নিজ পছন্দের প্রার্থীকে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটদানে আগ্রহী। এই প্রেক্ষিতে আশু পদক্ষেপ গ্রহণের জন্যে নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচনকালীন সরকারের কাছে ৮ দফা দাবি জানাচ্ছি।

দাবিগুলো হলো-

১. দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সহিংসতামুক্ত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনকে অধিকতর শক্তিশালী ও প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের তাগিদে নির্বাচনকালীন সরকার, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সকল রাজনৈতিক দল ও অপরাপর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের যথাযথ ভূমিকা পালন করার জোর দাবি জানাচ্ছি।

২. ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু ভোটাররা যাতে নির্ভয়ে ও নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারে, প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে কোনোরকম বাধার সম্মুখীন না হয় এবং নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণের সমান সুযোগ পায় তার জন্যে নির্বাচন কমিশনকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে ইতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।

৩. নির্বাচনী প্রচারণায় ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতার ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হোক। যদি কোনো প্রার্থী, কোনো দল বা জোট নির্বাচনে ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতাকে ব্যবহার করে তবে অনতিবিলম্বে তাকে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার জোর দাবি জানাচ্ছি।

৪. নির্বাচনের পূর্বাপর সময়কালে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং জননিরাপত্তা, আইন-শৃংঙ্খলাজনিত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের তাগিদে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকাগুলোকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে পুলিশ, আনসার ইত্যাদি মোতায়েনের পাশাপাশি র‍্যাব, বিজিবির নিয়মিত টহলদানের ব্যবস্থা করা হোক এবং নিয়মিত মনিটরিং করার জন্য একটি ‘মনিটরিং সেল’ গঠনের জোর দাবি জানাচ্ছি।

৫. নির্বাচন কমিশন কর্তৃক সংখ্যালঘু নিরাপত্তায় গৃহীত যাবতীয় পদক্ষেপের বিষয়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সকল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, রাজনৈতিক দল ও জোটের নেতৃবৃন্দ, নির্বাচনের প্রার্থীসহ প্রার্থীর সমর্থক সকলকে সম্যকভাবে অবহিত করা হোক। রেডিও, টেলিভিশনে তা জনগণের জ্ঞাতার্থে প্রচার করা হোক।

৬. সকল ধর্মীয় উপাসনালয় যথা- মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, গির্জা নির্বাচনী প্রচারকাজে ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হোক।

৭. ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক বক্তব্য, বিবৃতি, মিথ্যা গুজব প্রচার বা এ ধরণের যাবতীয় প্রচারণা বিশেষ ক্ষমতা আইনের ক্ষতিকর কার্য হিসেবে অপরাধ গণ্যে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। একই সাথে তাৎক্ষণিকভাবে দায়ী ব্যক্তিদের প্রার্থিতা বাতিলের ব্যবস্থা হোক।

৮. নির্বাচনের দুদিন আগে থেকে পরবর্তী ১৫ দিন পর্যন্ত ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্বাচনী এলাকাগুলোয় বিজিবি, র‌্যাবের টহলদানের ব্যবস্থা করা হোক।

সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একটি অংশের নেতাকর্মীরা নির্বাচনকে বয়কট করেছে, এ বিষয় জানতে চাইলে রাণা দাশগুপ্ত বলেন, আমরা বলেছি ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘুরা তাদের ভোটদানে আগ্রহী। সংখ্যালঘুদের মধ্যেও এমন কেউ কেউ আছেন, যারা নির্বাচন বর্জনের ধারায় আছেন। তবে আমরা মনে করি ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘুদের বৃহত্তর অংশ মনে করে, নির্বাচন ছাড়া সরকার পরিবর্তন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এবং এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক ধারা বহমান রাখার মধ্যেই এদেশের মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। কেউ নির্বাচন বর্জন করলে, সেটি তার ব্যক্তিগত ব্যাপার।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংখ্যালঘুরা কোনো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা নিরাপত্তার শঙ্কায় ভুগছি৷ এজন্যই আজকে আমাদের এই সংবাদ সম্মেলন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দাবিতে ১৭ নভেম্বর বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের মহাসমাবেশ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটি হয়নি। এই মহাসমাবেশের বিষয়ে জানতে চাইলে রাণা দাশ গুপ্ত বলেন, ১৭ নভেম্বর আমাদের মহাসমাবেশ করার কথা ছিল। কিন্তু তার দুই দিন আগে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করা হয়। এর প্রতিবাদে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল হরতাল-অবরোধসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি দিয়েছে। তাই আমরা নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আমরা আমাদের মহাসমাবেশ স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছিলাম। কারণ, আমরা জানতাম না হরতাল-অবরোধের ধরণ কেমন হবে। আমাদের মহাসমাবেশের কারণে যদি কারও কোনো ক্ষতি হয় সেই দায়ভার তো সংগঠন নিতে পারে না।

বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি অধ্যাপক ড. নিম চন্দ্র ভৌমিকের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের অন্যতম সভাপতি নির্মল রোজারিও, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রঞ্জন কর্মকার, সুনন্দ্র প্রিয়, সঞ্জীব দ্রং, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনিন্দ্র কুমার নাথ প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০২৩
এসসি/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।