ঢাকা, রবিবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৯ মে ২০২৪, ১০ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

ফেসবুকে জাল নোটের কারবার, এক বছরে দুই কোটি বাজারে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০২৩
ফেসবুকে জাল নোটের কারবার, এক বছরে দুই কোটি বাজারে

ঢাকা: আমিনুল হক ওরফে দুলাল রাজধানীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ডিজাইনার হিসেবে কাজ করতেন। এর আড়ালে অনলাইনে শুরু করেন জাল নোটের কারবার।

ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপের মাধ্যমে সহযোগীদের নিয়ে কম সময়ে অল্প পুঁজিতে অধিক লাভের আশায় জাল নোট তৈরি ও সরবরাহের একটি চক্র গড়ে তোলেন আমিনুল।

প্রায় অর্ধ কোটি টাকা মূল্যমানের জাল নোটসহ জাল নোট তৈরি চক্রের অন্যতম হোতা আমিনুলসহ চক্রের চারজনকে রাজধানীর ডেমরা, খিলগাঁও ও সবুজবাগ থেকে গ্রেপ্তারের পর এ তথ্য জানায় র‍্যাব।

গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন, আব্দুর রাজ্জাক ওরফে দিদার (৩০), মো. সুজন আলী (৪০) ও মোহাম্মদ সাকিবুল হাসান (২১)।

র‍্যাব জানায়, আমিনুল বিভিন্ন সরঞ্জাম সংগ্রহ করে নিজের ডিজাইনের দক্ষতায় জাল নোট ডিজাইন ও প্রিন্ট করতেন। এভাবে গত এক বছরে প্রায় দুই কোটি টাকার জাল নোট বাজারে ছেড়েছেন তারা।

বুধবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, গ্রেপ্তাররা পরস্পরের যোগসাজশে প্রায় এক বছর ধরে জাল নোট তৈরি করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রতারণার মাধ্যমে জাল নোট বিক্রি করে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। তারা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন পেজ ও গ্রুপ থেকে জাল নোট তৈরি ও কারবারের প্রতি আকৃষ্ট হন। মূলহোতা আমিনুলের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের একটি গ্রুপের মাধ্যমে চক্রের অন্যদের সঙ্গে পরিচয় হয়।  

আমিনুলের নেতৃত্বে কম সময়ে অল্প পুঁজিতে অধিক লাভের আশায় তারা জাল নোটের ব্যবসার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রথমে তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি মেসেঞ্জার গ্রুপ খুলে সেখানে জাল নোট তৈরি বা কারবারের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য আদান-প্রদান করতেন। এই মেসেঞ্জার গ্রুপের অ্যাডমিন হিসেবে কাজ করতেন দিদার।

গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তার আমিনুল জাল নোট তৈরির সার্বিক বিষয়ে দক্ষ হওয়ায় নিজেই ল্যাপটপ, প্রিন্টার, পেনড্রাইভ, কাগজ, টিস্যু পেপার ও প্রিন্টারের কালিসহ অন্যান্য সরঞ্জাম কেনেন। তারপর তিনি জাল নোট প্রিন্ট করে গ্রেপ্তার দিদারকে দিতেন এবং দিদার চক্রের অপর সদস্য সুজনকে সঙ্গে নিয়ে জাল নোট কাটিং ও বান্ডেল তৈরি করতেন।  

কমান্ডার মঈন বলেন, যখন জাল নোটের ব্যবসা রমরমা থাকে, তখন চক্রটি দৈনিক ২-৩ লাখের বেশি টাকা মূল্যমানের জাল নোট তৈরি করে বলে জানা যায়।

মূলত তারা একটি অভিনব কায়দায় জাল নোটগুলো বিক্রয় করতেন। তারা তাদের ফেসবুক গ্রুপ থেকে কমেন্ট দেখে মেসেঞ্জারে চ্যাটিংয়ের মাধ্যমে ক্লায়েন্ট তৈরি করে অগ্রিম টাকা নিয়ে নিতেন এবং পরে তাদের সুবিধাজনক স্থানে জাল নোটগুলো সরবরাহ করতেন।

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, চক্রের সদস্যদের মাধ্যমে রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও মুন্সিগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় তৈরিকৃত জাল নোট সরবরাহ করা হতো। চক্রের সদস্যরা প্রতি এক লাখ টাকা মূল্যের জাল নোট ২০-২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে বিক্রি করতেন। চক্রটি মাছ বাজার, লঞ্চ ঘাট, বাস টার্মিনালসহ বিভিন্ন মার্কেটে নানা কৌশল অবলম্বন করে জাল নোট সরবরাহ করত।

এ ছাড়া চক্রটি অধিক জন-সমাগম বিশেষ করে বিভিন্ন মেলা, উৎসব, পূজা ও কোরবানির পশুর হাট উপলক্ষে বিপুল পরিমাণ জাল নোট ছাপিয়েছিল।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০২৩
পিএম/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।