ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

ট্রাফিক সচেতনতার দিনেও বিশৃঙ্খল ঢাকার সব প্রধান সড়ক

নিশাত বিজয়, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২৩
ট্রাফিক সচেতনতার দিনেও বিশৃঙ্খল ঢাকার সব প্রধান সড়ক

ঢাকা: বিশ্বের দূষিত নগরীর তালিকায় রাজধানী ঢাকা যেমন শীর্ষে, তেমনি পিছিয়ে নেই যানজটেও। নগরীর যানজটের প্রধান কারণ হিসেবে বরাবরই উঠে এসেছে বিশৃঙ্খল গণপরিবহন ব্যবস্থা, ট্রাফিক অব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়হীনতা।

এ ব্যবস্থা থেকে পরিত্রাণে মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মৎস্য ভবন মোড়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ আয়োজিত সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিদর্শন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বিআরটিএর বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা ও ট্রাফিক পুলিশ।

তারা যাত্রী, পথচারী ও মোটরযান চালকদের মধ্যে লিফলেট বিতরণ করছেন, মাইকিং করছেন। পথচারীদের ফুটপাত ও জেব্রা ক্রসিং দিয়ে রাস্তা পারাপারে বাধ্য করেন। যারা জোর করে রাস্তা পারাপারের চেষ্টা করেছেন তাদের ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে জরিমানা করিয়ে সচেতন করেন।

তবে, পুরো ট্রাফিক অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে এই কার্যক্রমকে ‘নামকাওয়াস্তে’ বলছেন বাস যাত্রী, মোটরসাইকেল চালক কিংবা পথচারীরা।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মজীবী মেহেদী হাসান বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিদিন মোটরসাইকেলে অফিসে যাতায়ত করি। কিন্তু রাস্তায় ট্রাফিকের বিন্দুমাত্র সমন্বয় নেই। প্রগতি স্মরণী ঢাকার অন্যতম প্রধান ও ব্যস্ততম সড়ক হওয়া সত্ত্বেও এই রোডে বাস, বাইরের জেলার পরিবহন থেকে শুরু করে রিকশা সবই চলে। ফলে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ যানজট থাকে।

আজকে (৭ ফেব্রুয়ারি) রাস্তায় পুলিশ থাকলেও যানজট কমাতে কোনো প্রভাব পড়েনি, শুধু কিছু মোটরসাইকেল ধরেছে। কিন্তু ভ্যান, রিকশা, যেখানে সেখানে বাসগুলোর যাত্রী তোলার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন এই মোটরসাইকেল আরোহী।

শুধু প্রগতি স্মরণী নয়, ঢাকার অন্য প্রধান সড়ক মিরপুর রোড, এলিফ্যান্ট রোড, তেজগাঁও শিল্প এলাকায়ও ছিল একই চিত্র।

কলেজছাত্র মাহমুদুল হাসানের সঙ্গে কথা হয় সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে। তিনি বলেন, নিউমার্কেট থেকে ধানমণ্ডিতে চলাচলের জন্যে  রিকশার আলাদা লেন রয়েছে। অথচ মিরপুর রোডের প্রধান সড়কেও রিকশা চলে। ফলে যানবাহনের গতি কমে যাচ্ছে। আবার যানবাহনগুলোও যত্রতত্র যাত্রী তুলছে।

এনিয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, বিআরটিএর কার্যক্রম ইতিবাচক। এটি সড়ককে শৃঙ্খলা আনতে ভূমিকা রাখবে।

তবে, বিআরটিএর কার্যক্রমের সমন্বয়হীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, তাদের (বিআরটিএ) সব মিলিয়ে কর্মকর্তা ১০০ জন। এই জনবল নিয়ে কী সড়ককে নিরাপদ ও শৃঙ্খলায় ফেরানো সম্ভব? এজন্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসহ ইমাম, পুরোহিত, সাংবাদিকসহ সমাজের সব অংশের মানুষদের নিয়ে পদক্ষেপ নিলে সড়ককে নিরাপদ করা সম্ভব।

কী বলছে পদক্ষেপ: বিআরটিএর রোড সেফটি উইংয়ের পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের কাজ মানুষকে সচেতন করা। হয়তো শতভাগ হবে না। কিন্তু একেবারে যে হয় না তেমন না, অনেকে হয়।

প্রধান সড়কে বিশৃঙ্খল যান চলাচল নিয়ে তিনি বলেন, এগুলো পুলিশের দ্বায়িত্ব। আর আমাদের ম্যাজিস্ট্রেটরা যখন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে তখন জরিমানা করা হয়।

এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ট্রাফিক-উত্তর) যুগ্ম পুলিশ কমিশনার আবু রায়হান মুহাম্মদ সালেহ বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমাদের লোক আছে, তারা কাজ করছেন।

প্রগতি স্মরণীতে যান্ত্রিকযানের সঙ্গে রিকশা-ভ্যান চলাচলে বিশৃঙ্খলা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমার মনে হয় না সড়কে এতো বিশৃঙ্খলা রয়েছে।

এর আগে মঙ্গলবার সকালে সড়ক নিরাপদ করতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে রাজধানীর মৎস্য ভবন মোড়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিদর্শন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

সে সময় তিনি বলেন, আমাদের এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার সড়ক নিরাপদ করা, পরিবহন নিরাপদ করা, সড়ক এবং পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা।

তিনি আরও বলেন, বিশ্ব ব্যাংকের ৫ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প এখন অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারলে বাংলাদেশ সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এগিয়ে যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১০৭ ঘণ্টা, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
এনবি/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।