ঢাকা, বুধবার, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২, ১৪ মে ২০২৫, ১৬ জিলকদ ১৪৪৬

আইন ও আদালত

রমনা বটমূলে বোমা হামলা মামলায় ২ জনের যাবজ্জীবন 

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:২২, মে ১৩, ২০২৫
রমনা বটমূলে বোমা হামলা মামলায় ২ জনের যাবজ্জীবন  হাইকোর্ট

ঢাকা: ২০০১ সালে রাজধানীর রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘটনায় করা হত্যা মামলায় দুই আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া বাকি আসামিদের ১০ বছর করে সাজা দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৩ মে) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরিন আক্তারের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।

রায়ে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মো. তাজউদ্দিনের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন এবং বিচারিক আদালতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত শাহাদাতউল্লাহ জুয়েলের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রাখা হয়েছে।

আর বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আকবর হোসেন, আরিফ হাসান, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, আবদুল হাই, শফিকুর রহমান এবং বিচারিক আদালতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সাব্বির, শেখ ফরিদ ও আবু তাহেরের সাজা কমিয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন হাইকোর্ট।  
 
তবে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মুফতি হান্নান (সিলেটে গ্রেনেড হামলা মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর) এবং বিচারিক আদালতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আবদুর রউফ ও ইয়াহিয় মারা যাওয়ায় তাদের বিচারিক কার্যক্রম থেকে বাদ দেওয়া হয়।  

হাইকোর্টের দেওয়া এই রায়ের বিরুদ্ধে আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষ আপিলের ঘোষণা দিয়েছেন।  

আদালতে আসামিপক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও সরওয়ার আহমেদ এবং আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।

রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুলতানা আক্তার রুবী।

এর আগে ১৮ ফেব্রুয়ারি এ মামলার শুনানি শেষ হয়ে রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ রেখেছিলেন (সিএভি)। পরে ৮ মে রায়ের জন্য দিন ঠিক করা হয়। সে অনুসারে বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণা শুরু করেন হাইকোর্ট। মঙ্গলবার রায় ঘোষণা শেষ হয়।  

২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলা চালানো হয়। এতে ঘটনাস্থলেই নয়জনের মৃত্যু হয়। পরে হাসপাতালে মারা যান একজন। এ ঘটনায় নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির সার্জেন্ট অমল চন্দ্র চন্দ ওইদিনই রমনা থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করেন।  

২০০৮ সালের ৩০ নভেম্বর দুই মামলায় ১৪ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ২০১৪ সালের ২৩ জুন বিচারিক আদালত হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। এরপর ডেথ রেফারেন্স এবং আসামিদের জেল আপিল ও ফৌজদারি আপিলের শুনানির জন্য মামলাটি হাইকোর্টে আসে।

হত্যা মামলার রায় ঘোষণা হলেও বিস্ফোরক মামলাটি ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন রয়েছে।  

এ মামলায় বিচারিক আদালত নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) শীর্ষ নেতা মুফতি হান্নানসহ আটজনের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ এবং ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন।  

ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, মুফতি আব্দুল হান্নান, মাওলানা আকবর হোসেন, আরিফ হাসান সুমন, মাওলানা তাজউদ্দিন, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বকর ওরফে মাওলানা হাফেজ সেলিম হাওলাদার, মাওলানা আবদুল হাই ও মাওলানা শফিকুর রহমান। এর মধ্যে সিলেটে গ্রেনেড হামলার মামলায় মুফতি হান্নানের মৃত্যুদণ্ড ইতোমধ্যে কার্যকর করা হয়েছে।

যাবজ্জীবন দণ্ডিত ব্যক্তিরা হলেন, শাহাদাতউল্লাহ জুয়েল, সাব্বির, শেখ ফরিদ, আবদুর রউফ, ইয়াহিয়া ও আবু তাহের।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুলতানা আক্তার রুবী বলেন, এটি একটি জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড। নববর্ষ একটি সার্বজনীন উৎসব। কিন্তু যারা সভ্যতাকে অস্বীকার সাংস্কৃতিক অধিকারকে স্বীকার করে সেই হুজি-বি ২০০১ সালে ১৪ এপ্রিল রাজধানীর রমনা বটমূলে ন্যক্কারজনভাবে বোমা হামলা করে। ১০ জনের হত্যা এবং শত শত মানুষকে আহত করে। সেই ঘটনার রায়ে ১৪ জনের মধ্যে আটজনের মৃত্যুদণ্ড ছিল। আর ছয়জনের যাবজ্জীবন ছিল। হাইকোর্টে শুনানি শেষে আজ দুইজনের যাবজ্জীবনের রায় দিয়েছেন। ইতোমধ্যে দুইজন মারা গেছেন। আর একজনের অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় তিনজনকে এ মামলা থেকে বাদ দেওয়া হয়। বাকি নয়জনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। আর যাদের ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করবেন।

আইনজীবী শিশির মনির বলেন, যাবজ্জীবন দণ্ডিত দুইজনের মধ্যে একজন পলাতক। এই মামলায় আমরা বলেছিলাম এই মামলায় এভিডেন্স বলতে কিছু নেই।  হাইকোর্টের তিনটি বেঞ্চে ঘুরে চতুর্থ বেঞ্চে ৪৬৭ বার সময় নেওয়ার পর আজকে রায় ঘোষণা করা হয়েছে। যে তিনজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন সেখানে পরস্পর বিরোধী কথাবার্তা থাকার পরেও তাদের ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন। আমরা মনে করি হাইকোর্টের এই রায় সঠিক হয়নি। হয়তো লিগ্যাল এভিডেন্স না পেয়ে হাইকোর্ট বিভাগ নৈতিকভাবে সাজা দিয়েছেন। আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে নয়। আমার আসামিদের সাজা খাটা হয়ে গেছে। তারপরও পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পাওয়ার পর উপযুক্ত সময়ে আপিল করবো।

ইএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।