ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

ইচ্ছেঘুড়ি

একদিন ভোরে রাশেদ | রানাকুমার সিংহ

গল্প/ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০১৯
একদিন ভোরে রাশেদ | রানাকুমার সিংহ প্রতীকী ছবি

ভোরেই ঘুম ভেঙে গেছে রাশেদের। বাসায় তখন সিলিং ফ্যানের ঘটঘট ঘটঘট আওয়াজ ছাড়া অন্য কোনো শব্দ নেই। বাইরে পাখিদের কিচিরমিচির। কয়েকটি চড়ুই রোজকার মতো কার্নিশে দুরন্তপনায় মেতে উঠেছে । সারারাত জেগে পাহারা দেওয়া কুকুরগুলো হয়তো বেঘোরে ঘুমোচ্ছে। বিছানায় কিছুক্ষণ এপাশ ওপাশ করে নামলো রাশেদ।

তারা এই বাসায় নতুন। বড়জোর তিন মাস আগে বাসায় উঠেছে তারা।

রাশেদের বাবা বনবিভাগের কর্মকর্তা। সেইসূত্রে জন্ম থেকেই বনজঙ্গলের সঙ্গে রাশেদের ওঠাবসা। নতুন বাসাটিও ব্যতিক্রম নয়। দু'টো বড় পাহাড়ের মাঝখানে স্টাফ কোয়ার্টার। মোট আটটি বাসা। রাশেদদের বাসা পাহাড়ঘেঁষা। ঘড়ি বলছে ভোর পাঁচটা।
  
তিনটি ছিটকিনি খুলে সদর দরজা খুলতেই মিহি বাতাস রাশেদের চোখে মুখ লাগলো। আহা! কী মনোরম বাতাস। পূর্বদিক লাল হয়ে উঠেছে, কিছুটা কুয়াশাও যেন ডানা মেলেছে এই ভোরে। রাশেদ বাসার বাইরে পা বাড়ালো, মৃদু হাঁটতে শুরু করলো সে। পাখিরা যেন তাকে স্বাগত জানাচ্ছে। ছানাপোনা নিয়ে কটি বানর অবিরত ভেঙাচ্ছে তাকে। রাশেদ খুব মজা পাচ্ছে।  

হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ থমকে দাঁড়ালো রাশেদ। পাহাড়ের উপর তার চোখ আটকে গেলো। চোখ কচলিয়ে দেখার চেষ্টা করলে সে। হ্যাঁ, তার মা-ই তো! ধবধবে সাদা শাড়ি পড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন, আর হাতের ইশারায় রাশেদকে ডাকছেন। রাশেদ কোনোকিছু না ভেবে পাহাড়ে ওঠতে লাগলো। সাদা শাড়ি পরা মায়ের কাছ থেকে কিছুটা দূরে থাকতেই সম্বিৎ ফেরে রাশেদের, মাকে তো সে বাসায় ঘুমে রেখে এসেছে। তৎক্ষণাৎ রাশেদ পাহাড় থেকে নামতে লাগলো। এক দৌড়ে বাসায় ফিরেই জ্ঞান হারালো সে।

জ্ঞান ফিরতেই মুখের ওপর বাসার সবার মুখ দেখতে পেলো সে। আতংকিত বাবা মা এটা ওটা জিজ্ঞেস করছেন। রাশেদ কিছুই বলতে পারে না। প্রচণ্ড জ্বরে গা পুডছিল তার। জ্বর তো আর নামে না। রাশেদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু অনিও রাশেদকে জিজ্ঞাসা করে কোনো উত্তর বের করতে পারলো না।  

রাশেদের খুব জ্বর। হাসপাতালে ভর্তি করা হলো তাকে। কিছুদিন পর বাসায় ফিরলো সে। চডুইগুলো দুরন্তপনায় ব্যস্ত, পড়ার টেবিলে একটি খোলা বইয়ের পাতা বাতাসে নড়ছে। রাশেদ বইটির অর্ধেক পড়ে শেষ করেছিল। বইটির একটি অধ্যায়ের শিরোনামে তার চোখ আটকে গেলো, শিরোনামটি হচ্ছে- হ্যালুসিনেশন!

বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০১৯
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।