ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

ইচ্ছেঘুড়ি

আদি অস্ত্র বুমেরাং

ইচ্ছেঘুড়ি ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৪
আদি অস্ত্র বুমেরাং

ঢাকা: শিকারের জন্য অন্যতম প্রাচীন অস্ত্র বুমেরাং। যুদ্ধক্ষেত্রেও কাঠের তৈরি এ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হতো।

পূর্ব ও পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার ‍ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর মানুষ এর উদ্ভাবক বলে জানা যায়। এটা এমন অস্ত্র যা লক্ষ্যবস্তুকে আঘাত করতে না পারলে তা নিক্ষেপকারীর হাতে ফিরে ‍আসে।

তাদের তৈরি কাঠের বাঁকা এ অস্ত্র সাধারণত ৩০.৭৫ সেমি দৈর্ঘ্য এবং ওজন হয় ৩৪০ গ্রাম। এটাই বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী বুমেরাং হিসেবে পরিচিত।

বুমেরাং এমনভাবে তৈরি ক্ষেপণাস্ত্র যার বাহুগুলি ৯০ ডিগ্রিতে বিভক্ত। উভয় পাশ থেকে মোচড়ানো। প্রবল শক্তি ও কৌশলে নিক্ষেপ করলে এটা প্রথমে ৪৫ মিটার প্রশস্ত একটা বৃত্ত ঘুরে আসে এবং পাঁচ পর্যন্ত অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র বৃত্তে ঘুরে নিক্ষেপকারীর কাছে ফিরে এসে মাটিত পড়ে।

আদিম শিকারিদের অসাধারণ একটি আবিষ্কার ছিল এটি। আমরা কথা বলার সময়ও বলি ‘বুমেরাং হলো’। বুমেরাংয়ের কাজের সঙ্গে মিলিয়ে একথা বলি।

বুমেরাং মূলত বিশেষভাবে তৈরি একটি বাঁকা কাঠের টুকরো। এটি অস্ত্র ও খেলার জন্য ব্যবহৃত হয়।

ধারণা করা হয়, বুমেরাং শব্দটি এসেছে অস্ট্রেলিয়ার নিউসাউথ ওয়েলসের অধুনালুপ্ত Aboriginal ভাষা থেকে। খুব সম্ভবত এর আরেকধরনের উচ্চারণ ছিল ‘উ-মার-রাং’ (wo-mur-rang)।

ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, প্রাচীন মিশরীয়, আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া, অ্যারিজোনার আদিবাসী, দক্ষিণ ভারতীয়রা পাখি এবং খরগোশ মারার জন্য অপ্রত্যাবর্তী বুমেরাং (যে বুমেরাংগুলো নিক্ষেপকারীর কাছে ফিরে আসে না) ব্যবহার করতো।

যেভাবে তৈরি হয় বুমেরাং
কাঠ ও হাড় বুমেরাং তৈরির প্রধান উপকরণ। আদিম শিকারিরা ঘঁষে মেজে অনেক কষ্ট করে একটি বুমেরাং তৈরি করতো।

অস্ট্রেলিয়ার আদিম মানুষরা তাদের আগের পুরুষদের কাছ থেকে বুমেরাং বানাবার আর ছোড়ার খুঁটিনাটি সব বিষয় শিখে রাখতো। কারণ, বুনো পরিবেশে টিকে থাকার জন্য অন্য কোনো বিকল্প তাদের সামনে খুব বেশি ছিলো না। পরিবেশে টিকে থাকতে হলে দক্ষ বুমেরাং চালানো ছিল গুরুত্বপূর্ণ।

তবে এখন খেলার জন্য নানা ধরনের বুমেরাং তৈরি হয় প্লাস্টিকসহ নানা উপরণ দিয়ে।

যেভাবে আবার ফিরে আসে হাতে
বুমেরাংয়ের সবচেয়ে মজার ব্যাপার এটা ছুড়ে দেওয়ার পর আবার ফিরে আসে শিকারি হাতে। ছোড়ার পর বুমেরাং আপনা থেকে খানিকটা গতি পায় এর গঠনশৈলীর জন্য। যেহেতু এটি বাঁকা থাকে, সেহেতু ভেতরের দিকের কিনারায় বাতাস আটকে সামনের ব্লেডটিকে সজোরে ধাক্কা দিয়ে এগিয়ে নিতে থাকে অনবরত। আর এভাবে বাতাসের ওপর ভর করে বুমেরাং শিকার শেষে ফিরে আসে বা পৌঁছে যায় কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে।

যেভাবে ছুড়তে হয়
ডানহাতি বুমেরাংগুলো ঘড়ির কাটার উল্টো দিকে ঘুরতে ঘুরতে ঘড়ির কাটার বিপরীত পথে ফিরে আসে। বাঁহাতি গুলো ঠিক এর উল্টো।

বেশিরভাগ বুমেরাংয়ের ওজন ৭০ থেকে ১১০ গ্রামের মধ্যে হওয়াই ভালো। এগুলো প্রায় ২০ থেকে ৪০ মিটারেরও বেশি দূর যেতে পারে। সাধারণত গাছগাছালি নেই এমন খোলা প্রান্তরে ছোড়ার জন্য বেশ উপযোগী এরা।   ডান কিংবা বাম দু’হাত দিয়েই বুমেরাং চালানো সম্ভব।

তবে যে হাতেই ছোড়া হোক না কেন এর জন্য নিজস্ব দক্ষতার দরকার রয়েছে। বাতাসের গতির উপর নজর রেখে, বাতাসের দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ডান হাতটাকে ধীরে বা’দিকে এনে তার পর ডানদিকে ছুড়ে দিলেই হলো। ঘড়ির কাটা বরাবর ঘুরতে ঘুরতে ১৩ থেকে ১৭ ডিগি ডান বরাবর বাতাসের গতি অনুসারে ছুটে যাবে বুমেরাং।

সবচেয়ে পুরাতন বুমেরাং
অস্ট্রেলিয়ার সবচাইতে পুরাতন বুমেরাংটির বয়স দশহাজার বছরের চাইতে বেশী। কিন্তু সবথেকে পুরাতন শিকারি লাঠির সন্ধান মেলে ইউরোপে।   কার্পাথিয়ান পাহাড়ের গুহায় ম্যামথের দাঁত দিয়ে তৈরি এই বুমেরাং পাওয়া যায়। পরীক্ষা থেকে ধারণা করা হচ্ছে এটি তিন হাজার বছরেরও পুরাতন।

বাংলাদেশ সময়: ০৭১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৪
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।