ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

আন্তর্জাতিক

শুক্রবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিচ্ছেন এমারসন নানগাগবা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪১১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৭
শুক্রবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিচ্ছেন এমারসন নানগাগবা এমারসন নানগাগবা (ফাইল ছবি)

রবার্ট মুগাবে ভাইস প্রেসিডেন্ট এমারসন নানগাগবাকে বহিষ্কার করে হয়ত ভেবেছিলেন ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলো। পারতপক্ষে তার কপাল যে পুড়তে যাচ্ছে তা কি তিনি একটুও আঁচ করতে পেরেছিলেন! বহিষ্কৃত সেই ভাইস প্রেসিডেন্টই এখন হচ্ছেন জিম্বাবুয়ের মূল প্রেসিডেন্ট। ক্ষমতার লোভ বাড়িয়ে রোষানলে পড়ে পদত্যাগে বাধ্য হওয়া মুগাবে আজ যেন ‘অসহায়’!

দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জেডবিসি (জিম্বাবুয়ে ব্রডকাস্টিং করপোরেশন) জানাচ্ছে, শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) নয়া কমান্ডার হিসেবে ৭৫ বছর বয়সী এমারসন নানগাগবা শপথ নেবেন। সেজন্য প্রস্তুতিও চলছে পুরো দমে।

এদিকে, প্রাণ ভয়ে দেশ ছেড়ে পালানো নানগাগবা বুধবার (২২ নভেম্বর) দেশে এসেছেন বলে জানা যায়। সেখানে তাকে উষ্ণ সংবর্ধনা জানাতে উপস্থিত ছিলেন অসংখ্য সাধারণ মানুষ, ভক্ত, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও সেনা সদস্যের প্রতিনিধিরা।

সেসময় যারা নানগাগবার সঙ্গে কথা বলেছেন, তাদের বরাতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পেয়ে তার প্রধান কাজ হবে দেশকে আরও গণতান্ত্রিক হিসেবে পরিণত করা।

রাজনৈতিক দল জানু-পিএফ পার্টির (জিম্বাবুয়ে আফ্রিকান ন্যাশনাল ইউনিয়ন-প্যাট্রিয়টিক ফ্রন্ট) নেতারা বলছেন, সবাই অপেক্ষায় রয়েছেন নতুন নেতৃত্বের। এর মধ্যদিয়ে নতুনধারায় যাওয়ার। দীর্ঘ কয়েক দশকের একশাসন থেকে নতুন কিছুর প্রত্যাশাই সবার।  

মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) দীর্ঘ প্রায় ৩৭ বছরের একশাসনের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে রবার্ট মুগাবে পদত্যাগ করেন। এর পরপরই পুরো দেশে আনন্দ মিছিল ও শোভাযাত্রা শুরু হয়। সাধারণ মানুষ যেমন রাস্তায় নামেন তেমনি সংসদ সদস্যরাও আনন্দ প্রকাশ করেন।

মুগাবের বিরুদ্ধে সংসদে ওইদিনই অভিশংসন প্রস্তাব আনতে যাচ্ছিল তার নিজের দল ক্ষমতাসীন জানু-পিএফ পার্টি। দলের সিনিয়র নেতা পল মাংওয়ানা বলেছিলেন, অভিশংসনের পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে অন্তত দুই দিন লাগতো।

প্রক্রিয়া শুরুর আগেভাগেই পদ থেকে সরে দাঁড়ান দেশটির এক সময়কার তুমুল জনপ্রিয় এই নেতা। ১৯৮০ সালে স্বাধীনতার পর থেকে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন তিনি। বর্তমানে তার বয়স ৯৩ বছর।

গত ৬ নভেম্বর ভাইস প্রেসিডেন্ট নানগাগবাকে অপসারণের পর জিম্বাবুয়ের রাজনীতিতে অচলাবস্থার সৃষ্টি। সেনাবাহিনীর ‘ঘনিষ্ঠজন’ বলে পরিচিত ৭৫ বছর বয়সী নানগাগবাকে ৯৩ বছর বয়সী মুগাবের উত্তরসূরী ভাবা হচ্ছিল। কিন্তু আগামী বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে ঘিরে মুগাবের ৫২ বছর বয়সী স্ত্রী গ্রেসও রাজনীতির ময়দানে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে উঠে-পড়ে লাগেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্রেস এই উচ্চাভিলাস থেকে মুগাবেকে বাধ্য করেন নানগাগবাকে অপসারণ করতে। তারপর ১৩ নভেম্বর সেনাপ্রধান জেনারেল কনস্ট্যান্টিনো চুইঙ্গা সংকট সমাধানে সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ করতে প্রস্তুত বলে হুঁশিয়ারি দেন। ১৪ নভেম্বর রাস্তায় নামে সেনাবাহিনীর চারটি ট্যাংক। ১৫ নভেম্বর সকাল থেকেই রাস্তায় রাস্তায় দেখা যায় সেনাটহল। সেনাবাহিনী ঘোষণা দেয়, তারা মুগাবের আশপাশের অপরাধীদের সরাতে অভিযানে নেমেছে। তবে এটা কোনো অভ্যুত্থান (ক্যু) নয় বলেও দাবি করে তারা।

সেনাবাহিনীর রক্তপাতহীন এমন ‘অভ্যুত্থান’র পর এ নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়। খবর ছড়ায়, সেনারা মুগাবেকে ‘গৃহবন্দি’ করে রেখেছে। আর গ্রেস দেশে ছেড়ে পালিয়েছেন পড়শী দেশ নামিবিয়ায়। ১৭ নভেম্বর হারারের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে দেখা যায় মুগাবেকে।  

সেসময় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানায়, সেনাবাহিনী মুগাবেকে আর ক্ষমতায় দেখতে চাইছে না। সেজন্য তাদের ইন্ধনে হারারেতে শুরু হয় মুগাবে-বিরোধী বিক্ষোভ। এই বিক্ষোভ থেকে অশীতিপর প্রেসিডেন্টকে সরে যাওয়ার দাবি তোলা হয়। একইসঙ্গে নানগাগবার হাতে ক্ষমতা ন্যস্ত করার দাবিও ওঠে বিক্ষোভে। তারই প্রতিফলন আসে জানু-পিএফের বৈঠক থেকে; মুগাবেকে পার্টি থেকে বহিষ্কার করা হয়। শেষে তিনি পদ ছাড়তে বাধ্য হন।

বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৭
আইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।