ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ইসরায়েল বড় ধরনের মনস্তাত্ত্বিক ও কৌশলগত ধাক্কা খেয়েছে, তা এখন সরাসরিই স্বীকার করছে ইসরায়েলি গণমাধ্যম। তারা বলছে, ‘অভেদ্য সুরক্ষার’ যে বিশ্বাস এতদিন ইসরায়েলি সমাজে ছিল, সেটা এখন চিরতরে ভেঙে পড়েছে।
হারেৎজসহ কয়েকটি গণমাধ্যম বলছে, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের ভয় এখন ইসরায়েলিদের প্রতিদিনের বাস্তবতা। তেল আবিবের বাসিন্দারা এখন নিজেদের শহরে যে ধ্বংস দেখছে, সেটাকে গাজায় তাদেরই করা ধ্বংসযজ্ঞের প্রতিচ্ছবি হিসেবে দেখছেন।
হারেৎজ লিখেছে, ইসরায়েল এই যুদ্ধের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। ইরানের পাল্টা হামলার ক্ষত দীর্ঘদিন ইসরায়েলিদের মনে থেকে যাবে। তেল আবিবের ধ্বংসস্তূপ এখন গাজার মতোই দেখতে।
পত্রিকাটি আরও লিখেছে, এখন সময় এসেছে একটু সময় নিয়ে ভাবার। ইসরায়েলিরাও আজ যুদ্ধের মূল্য দিচ্ছে। তেল আবিবের বর্তমান চেহারা দেখলে বোঝা যায়, কেন মধ্যপ্রাচ্যের এসব যুদ্ধ বন্ধ হওয়া জরুরি।
ইসরায়েলি মিডিয়ার ভাষ্য, আগের যুদ্ধে ইসরায়েলিরা সাইরেন, বোমা হামলায় অভ্যস্ত ছিল। কিন্তু ইরানের এই হামলা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। প্রথম ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র তেল আবিবের শুধু একটি ভবন ধ্বংস করেনি—এটি ইসরায়েলিদের জাতিগত আত্মপরিচয়ের কেন্দ্রে আঘাত করেছে। প্রমাণ করেছে, ইসরায়েল আর নিরাপদ নয়।
হারেৎজ লিখেছে, রামাত গান, তামরাসহ একাধিক শহরে এমন ভয়াবহ মাত্রায় হামলা হয়েছে যে, ইসরায়েলি বিশ্লেষকদের স্বীকার করতে হয়েছে—তেল আবিব আর গাজার মধ্যে এখন তেমন পার্থক্য নেই। তেল আবিবের দৃশ্য এখন গাজার মতো। এবার ইসরায়েলিরা নিজেরাই বুঝছে, দেড় টনের বোমা পড়লে কী হয়।
টাইমস অব ইসরায়েল প্রশ্ন তুলেছে, কীভাবে নেতানিয়াহু এত দ্রুত পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ হারালেন? বিশেষ করে যখন ইরান পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্র হামলা চালানোর পর ট্রাম্প নেতানিয়াহুর ওপর প্রকাশ্যে ক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। পত্রিকাটি বলেছে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সাময়িকভাবে বাধাগ্রস্ত হলেও এখনও তা ধ্বংস হয়নি। আর ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির আহ্বানে ইসরায়েলের নেতারা দিক হারিয়ে ফেলেছেন।
+৯৭২ ম্যাগাজিন বলছে, নেতানিয়াহুর ‘অস্তিত্ব সংকট দূর করার’ দাবি আসলে ফাঁকা বুলি। ইসরায়েলিরা একের পর এক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে এতটাই ক্লান্ত যে তারা আর আগের মতো নিরাপত্তার ভ্রান্ত বিশ্বাসে ফিরতে পারবে না।
পত্রিকাটি উপসংহারে বলেছে, যুদ্ধবিরতি হয়তো সাময়িক স্বস্তি দেবে, কিন্তু ইসরায়েলিদের মানসিক ভাঙন আর কাটবে না। ইসরায়েলের অপরাজেয়তার যুগ শেষ। আয়রন ডোম ক্ষেপণাস্ত্র আটকাতে পারে, কিন্তু নিজের ভুলের ফল থেকে কোনো দেশকে বাঁচাতে পারে না।
টিআর/আরএইচ