ঢাকা, শনিবার, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০৭ জুন ২০২৫, ১০ জিলহজ ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

পানির নিচে লাখো কোটি ডলারের বাঙ্কার কেন করছে যুক্তরাষ্ট্র

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২:৫৯, জুন ৫, ২০২৫
পানির নিচে লাখো কোটি ডলারের বাঙ্কার কেন করছে যুক্তরাষ্ট্র

হঠাৎ যদি আমেরিকার বুকে পরমাণু বোমা বিস্ফোরিত হয়! যদি মুহূর্তে শহরের পর শহর ধ্বংস হয়! তাহলে বাঁচবে কারা? কোথায় যাবে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা? এই প্রশ্নের উত্তর হয়তো লুকিয়ে আছে বিশাল এক ভূগর্ভস্থ জগতের ভিতরে।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের একটি পডকাস্টে বিস্ফোরক দাবি করলেন প্রাক্তন মার্কিন সরকারি কর্মকর্তা ক্যাথরিন অস্টিন ফিটস।

তার ভাষ্য অনুযায়ী, ১৯৯৮ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে প্রায় ২১ লাখ কোটি ডলার গোপনে খরচ করে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিভিন্ন গোপন তহবিল দিয়ে প্রায় ১৭০টি ভূগর্ভস্থ ঘাঁটি বা বাঙ্কার নির্মাণ করা হয়েছে। এর কিছু নাকি আবার সমুদ্রের নিচে।

ক্যাথরিন ১৯৮৯ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ প্রশাসনের সময় গৃহ ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের সহ-সচিব ছিলেন। তিনি জানান, এই বাঙ্কারগুলো কোনো সাধারণ মানুষের জন্য নয়। এগুলো কেবল অভিজাত, ধনী ও ক্ষমতাবান লোকদের আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। এমনকি তিনি এটাও দাবি করেন, এগুলো শুধু যুদ্ধ বা বিপর্যয়কালীন সময়ের আশ্রয়স্থলই নয়, বরং গোপন মহাকাশ কর্মসূচি ও অন্যান্য গোপন সরকারি প্রকল্পের কাজের ক্ষেত্রও হতে পারে।

তিনি এই দাবিগুলো করেছেন টাকার কার্লসনের একটি পডকাস্টে অংশ নিয়ে। সেখানে ক্যাথরিন ‘স্কিডমোর রিপোর্ট’ নামে পরিচিত একটি গবেষণার কথা তুলে ধরেন। সেই রিপোর্টটি ২০১৭ সালে তৈরি করেছিলেন মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির অর্থনীতিবিদ মার্ক স্কিডমোর। সেখানে দেখা যায়, ১৯৯৮ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং গৃহ ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ে প্রায় ২১ লক্ষ কোটি ডলার অননুমোদিত আর্থিক লেনদেন হয়েছে—যার কোনো হিসাব সরকারের বাজেটে নেই।

রিপোর্টে উল্লেখ আছে, ২০১৫ সালে সেনাবাহিনীর বরাদ্দ ছিল ১২২ বিলিয়ন ডলার, কিন্তু তাদের হাতে চলে আসে ৬ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলার। সেই অদৃশ্য অর্থের ব্যবহার নিয়েই ক্যাথরিনের দাবি—এই বিপুল অঙ্কের টাকায়ই গড়ে তোলা হয়েছে একটি বিশাল গোপন বাঙ্কার নেটওয়ার্ক।

এই বাঙ্কারগুলো অত্যাধুনিক সুবিধাসম্পন্ন। পরমাণু যুদ্ধ শুরু হলেও সেগুলোতেই পাওয়া যাবে বেঁচে থাকার যাবতীয় আয়োজন, এমনটাই দাবি তার। এমনকি ক্যাথরিন ইঙ্গিত দেন, এই বাঙ্কারগুলোতে হয়তো কোনো গোপন শক্তি ব্যবস্থা রয়েছে যা এদের স্বয়ংসম্পূর্ণ রাখে।

তবে তার এই দাবির পক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য প্রমাণ এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। এবং স্বাভাবিকভাবেই, যুক্তরাষ্ট্র সরকার এই প্রকল্পের অস্তিত্ব বা খরচের ব্যাপারে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি।

উল্লেখ্য, আমেরিকার ইতিহাসে ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার নতুন কিছু নয়। স্নায়ুযুদ্ধের সময় নির্মিত কলোরাডোর শায়েন মাউন্টেন কমপ্লেক্স কিংবা গ্রিনব্রিয়ার বাঙ্কার সে রকমই কিছু উদাহরণ। তবে সমুদ্রের নিচে এত বিশাল ও গোপন ঘাঁটি নির্মাণের দাবি এই প্রথম সামনে এলো।

ক্যাথরিন ফিটস অতীতে কোভিড টিকা ও বৈশ্বিক ষড়যন্ত্র তত্ত্ব নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন। ফলে অনেকেই তার বক্তব্যকে ষড়যন্ত্রতত্ত্ব বলেই উড়িয়ে দিচ্ছেন। তবে এত বিশাল অর্থের রহস্যময় লেনদেন এবং সরকারিভাবে কোনো তথ্য প্রকাশ না হওয়া— এ দুটি বিষয় মিলিয়ে বিতর্ক ও উদ্বেগ দুটোই বাড়ছে।

এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।