ঢাকা, শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আন্তর্জাতিক

বরিসকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার হুমকি দিয়েছিলেন পুতিন!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০২৩
বরিসকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার হুমকি দিয়েছিলেন পুতিন! বিবিসির সঙ্গে কথা বলেন সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন

রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে বেশ বড় অভিযোগ তুলেছেন সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। তিনি বলেছেন, একবার ফোনে কথা বলার সময় অস্বাভাবিক আচরণ করেছিলেন পুতিন।

তিনি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার হুমকি দিয়েছিলেন!

বরিসকে হুমকি দিয়েও থেমে ছিলেন না পুতিন। তিনি বলেছিলেন, মাত্র এক মিনিট সময় নেব।

বিবিসির এক তথ্যচিত্রে এ দুই নেতার কথাবার্তা উঠে এসেছে। বিশ্বনেতাদের সঙ্গে পুতিনের সম্পর্ক বা মিথস্ক্রিয়া নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটি করা হয়।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর দুই নেতা দীর্ঘ ফোনালাপ করেছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল পুতিনকে যুদ্ধ সম্পর্কে সতর্ক করা। বরিস বলতে চেয়েছিলেন, এটি ‘পুরোপুরি বিপর্যয়’ ডেকে আনবে। সে সময় পুতিন হুমকিটি দেন।

পুতিনকে সতর্ক করে বরিস জনসন বলেছিলেন, ইউক্রেন আক্রমণ করলে পশ্চিমা বিশ্ব তার দেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে। রাশিয়ার সীমান্তে ন্যাটোর আরও বেশি সংখ্যক সৈন্য মোতায়েন করা হবে।

ইউক্রেন ‘অদূর ভবিষ্যতের জন্য’ ন্যাটোয় যোগ দেবে না আশ্বস্ত করে রাশিয়ার সামরিক পদক্ষেপ রোধের চেষ্টা করেছিলেন বরিস। তিনি বলেন, আমি চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু এক পর্যায়ে পুতিন আমাকে হুমকি দিয়ে বসেন।

রুশ প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, শোনো বরিস, আমি তোমাকে আঘাত করতে চাই না। কিন্তু যদি বাধ্য করো, একটি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে আমার মাত্র এক মিনিট সময় লাগবে।

বরিস জনসন আরও বলেন, আমি যখন কথাগুলো বলছিলাম তিনি খুব স্বাচ্ছন্দ্যে ছিলেন। কিন্তু তার অন্তরে ‘বিচ্ছিন্নতা’ আছে বলে মনে হচ্ছিল না। তিনি শুধু নিজেকে আলোচনায় নিয়ে আসতে আমার প্রচেষ্টার সঙ্গে খেলছিলেন।

কথা বলার সময় আমার অস্বাভাবিক  লাগছিল, কিন্তু এই সময়টাতেই প্রেসিডেন্ট পুতিনকে সবচেয়ে বেশি পরিচিত মনে হচ্ছিল।

সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী যে কথাগুলো বলেছেন সেগুলোর কোনো সূত্র ডাউনিং স্ট্রিট বা ক্রেমলিন, কোনো পক্ষ থেকে পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া পুতিনের হুমকিগুলো সত্য ছিল কিনা, সেটিও জানা অসম্ভব।

তথ্যচিত্রে বলা হয়, যুক্তরাজ্যের ওপর পূর্ববর্তী রুশ হামলার পরিপ্রেক্ষিতে পুতিনের যেকোনো হুমকি, তা তিনি যতো হালকাভাবেই দিয়েছিলেন না কেন, সেটি গুরুত্ব সহকারে নেওয়া ছাড়া বরিসের আর কোনো বিকল্প ছিল না।

গত বছর এ ফোনালাপের ৯ দিন পর (১১ ফেব্রুয়ারি) যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা সচিব বেন ওয়ালেস মস্কো সফর করেন রাশিয়ার প্রতিরক্ষা সচিব সের্গেই শোইগুর সঙ্গে দেখা করতে। তিনি গিয়েছিলেন মূলত আশ্বস্ত হতে, যে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালাবে না। যদিও দুই পক্ষই তখন জানত, এ আশ্বাস মিথ্যা হতে চলেছে।

বেন ওয়ালেস সে সময় পুতিনের কাণ্ড-কারখানাকে ‘গুন্ডামি’ বা ‘শক্তি প্রদর্শন’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ওই আশ্বাসের মানে ছিল- আমি আপনাকে মিথ্যা বলতে যাচ্ছি; আপনি জানেন আমি মিথ্যা বলছি; আমি জানি আপনি জানেন আমি মিথ্যা বলছি এবং আমি এখনও আপনাকে মিথ্যা বলতে যাচ্ছি।

আমি মনে করি এটি শুধুমাত্র ‘আমি শক্তিশালী’ (পুতিন নিজেকে) বলার কারণ ছিল। তিনি মোটামুটি ঠাণ্ডা ছিলেন, কিন্তু সরাসরি মিথ্যা বলছিলেন, যা থেকেই বোঝা যাচ্ছিল, ইউক্রেনের হামলা চালাবে রাশিয়া।

ওই সময় একটি সভা ডেকেছিলেন পুতিন। রাশিয়ার চিফ অব জেনারেল স্টাফ জেনারেল ভ্যালেরি গেরাসিমভ সভায় উপস্থিত ছিলেন। পুতিন সভা শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ভ্যালেরিকে বলেছিলেন, ‘আমাদের আর কখনও অপমান করা হবে না। ’

২০২২ সালে নিজেদের সীমান্তে রুশ ট্যাংক দেখে বরিস জনসনকে গভীর রাতে ফোন করেছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। বরিস বলেন, জেলেনস্কি খুব, খুব শান্ত ছিলেন। তিনি শুধু আমাকে বললেন, আপনি জানেন তারা সর্বত্র আক্রমণ করছে।

এ সময় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে নিরাপদে সরে যেতে প্রস্তাব দিয়েছিলেন বরিস। কিন্তু জেলেনস্কি সেটি প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি নিজ দেশেই থাকবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। তার বীরত্ব অন্য কারও সঙ্গে মেলে না।

সূত্র: বিবিসি

বাংলাদেশ সময়: ১৬১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০২৩
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ