বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবসে ছয় দফা দাবি পেশ করেছে বাংলাদেশ ফার্মাসিস্টস ফোরাম।
শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বাংলামোটরে অবস্থিত ওয়াটারফল কনভেনশন হলে বাংলাদেশ ফার্মাসিস্টস ফোরামের র্যালি, আলোচনা সভা এবং সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বাংলাদেশের ফার্মা প্রফেশন নিয়ে বক্তব্য রাখেন অতিথি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের ডিন প্রফেসর ডা. মো. সেলিম রেজা, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের (ডিজিডিএ) পরিচালক ড. মো. আকতার হোসেন, হেড অফ ফার্মাকো ভিজিলেন্স টিম, মো. আসিফ হাসান প্রমুখ।
ধন্যবাদ জ্ঞাপন এবং সমাপনী বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি মো. আজিবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের প্রায় ৯০ শতাংশ ফার্মাসিস্ট ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফার্মাসিস্ট হিসেবে কর্মরত, ইন্ডাস্ট্রিতে নিয়োজিত সব ফার্মাসিস্টদের বেতন কাঠামো পরিবর্তন এবং জীবন মান উন্নয়নে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের মালিকদের আরো যত্নশীল হতে হবে।
স্বগত বক্তব্যে সাধারণ সম্পাদক, মোহাম্মদ মেহেদী হাসান তানভীর বাংলাদেশ ফার্মাসিস্টস্ ফোরামের ফার্মাসিস্টদের অধিকার আদায়ে সংগঠিত সব কার্যক্রম তুলে ধরেন, পাশাপাশি হসপিটালে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট নিয়োগ এবং ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিতে ফার্মাসিস্টদের আধুনিক বেতন কাঠামো নিশ্চিত করতে জোর দাবি তুলে ধরেন।
‘দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবুন, ফার্মাসিস্ট নিয়ে ভাবুন’। ’-স্বাস্থ্যচিন্তার সাথে ফার্মাসিস্টের সম্পৃক্ততা অনিবার্য—এটি শুধু একটি আহ্বান নয়, বরং স্বাস্থ্যব্যবস্থায় ফার্মাসিস্টের অপরিহার্য ভূমিকা তুলে ধরার বৈজ্ঞানিক প্রয়াস।
স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, দেশের সব হাসপাতাল ও প্রাথমিক সেবাকেন্দ্রে দ্রুত ক্লিনিক্যাল ফার্মাসিস্ট নিয়োগ দিতে হবে। তারা চিকিৎসকের সঙ্গে রাউন্ডে অংশ নিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবস্থাপনা, ডোজ পর্যালোচনা, ড্রাগ ইন্টারঅ্যাকশন ও রোগীর প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণে সহায়তা করবেন এবং ওষুধজনিত বিরূপ প্রতিক্রিয়া (এডিআর) হ্রাস, নিরাপদ ও কার্যকর ওষুধ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করবেন।
সব হাসপাতালে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের তত্ত্বাবধানে হসপিটাল ফার্মেসি (ইন-হাউস ফার্মেসি) প্রতিষ্ঠাকরণ, দেশের সব হাসপাতালে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট নিয়োগের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা খোলা হসপিটাল ফার্মেসি চালু করতে হবে। ঔষধ নীতি ২০১৬ অনুযায়ী, ডাক্তার, ফার্মাসিস্ট ও নার্স সমন্বয়ে ড্রাগ অ্যান্ড থেরাপিউটিকস কমিটি প্রতিটি হাসপাতালে হসপিটাল ফরমুলারি তৈরি করবেন। তার ভিত্তিতে ফার্মাসিস্টরা ওষুধের প্রাপ্যতা, সঠিক সংরক্ষণ, ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট ও নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করবেন।
ফার্মাসিউটিক্যালস্ কোম্পানিতে ফার্মাসিস্টদের জন্য স্ট্যান্ডার্ড বেতন কাঠামো ও মূল্যায়ন নিশ্চিত করতে হবে। দেশের ওষুধ শিল্পে নিয়োজিত সব ফার্মাসিস্টদের জন্য বেতন কাঠামো উন্নত করন এবং ফার্মাসিস্টদের পেশাগত মূল্যায়ন নিশ্চিত করতে হবে। দেশে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের তত্ত্বাবধানে শক্তিশালী ফার্মেসি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে হবে। এই নেটওয়ার্কের ফার্মেসিগুলো ওষুধ রিকনসিলিয়েশন, রোগী কাউন্সেলিং ও বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। শুধুমাত্র গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট পরিচালিত প্রতিষ্ঠানকেই ফার্মেসি হিসেবে গণ্য করতে হবে এবং সব ফার্মেসিকে জাতীয় নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে হবে।
প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ বিতরণ রোধে কঠোর প্রশাসনিক পদক্ষেপ নিতে হবে। ‘নো প্রেসক্রিপশন, নো মেডিসিন’ নীতি কার্যকর করা, আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ ও ড্রাগ ইন্সপেকশন জোরদার করা জরুরি। সেজন্য প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় ওষুধ প্রশাসনের অধীনে গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টকে ওষুধ প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে। ‘ফার্মাসিস্ট মানেই গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্ট’ ফার্মাসিস্টদের পেশাগত স্বীকৃতি ও ফার্মেসি কারিকুলামের আধুনিকায়ন করা।
হু ও এফআইপির অ্যানেক্স অনুযায়ী শুধুমাত্র ফার্মেসিতে গ্র্যাজুয়েটরাই ফার্মাসিস্ট হিসেবে স্বীকৃত। ঔষধ ও কসমেটিকস আইন ২০২৩ অনুযায়ী সরকারি ও বেসরকারি নিয়োগে শুধু গ্র্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টকে ফার্মাসিস্ট হিসেবে উল্লেখ করতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এইচআরএইচ ডাটাশিট ২০২৩ ও ফার্মেসি কাউন্সিলের চার্টারেও এটি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে।
একইভাবে সাম্প্রতিক নথিপত্র, প্রজ্ঞাপন ও সার্কুলারে বিষয়টির প্রতিফলন হলে তবে বিভ্রান্তি কমবে, ফার্মাসিস্টদের ভূমিকা সুসংহত হবে এবং জনস্বাস্থ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এ ছাড়া দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্ম. ডি. কোর্স চালু ও বি.ফার্ম সম্পন্নদের জন্য ২ বছরের পোস্ট-ব্যাচেলরিয়েট ফার্ম. ডি. কোর্স প্রবর্তন করতে হবে। এবং ফার্মাসিস্টদের জন্য স্ট্যান্ডার্ড বেতন কাঠামো ও পেশাগত স্বীকৃতি নিশ্চিত করতে হবে। এবং আমরা মনে করি, এসব সুপারিশ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস ২০২৫-এর প্রতিপাদ্যের প্রকৃত প্রতিফলন সম্ভব।
আরকেআর/এএটি