ঢাকা, সোমবার, ২২ বৈশাখ ১৪৩২, ০৫ মে ২০২৫, ০৭ জিলকদ ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

উন্নত প্রযুক্তির সহজলভ্যতায় মিলবে রোগীর সুরক্ষা

নিউজ ডেস্ক  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩:০৬, মে ৫, ২০২৫
উন্নত প্রযুক্তির সহজলভ্যতায় মিলবে রোগীর সুরক্ষা

দীর্ঘ দুই যুগের অভিজ্ঞতা পুঁজি করে দেশের স্বাস্থ্য খাতে নিরলসভাবে কাজ করছে ইউনাইটেড হেলথকেয়ার। আধুনিক প্রযুক্তি, দক্ষ জনবল ও সেবার মানোন্নয়নে প্রতিষ্ঠানটি এরই মধ্যে একটি নির্ভরযোগ্য নাম হয়ে উঠেছে।

দেশের স্বাস্থ্যসেবার প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে যুগোপযোগী মান নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। এই ধারাবাহিকতায় গড়ে উঠেছে ইউনাইটেড মেডিক্যাল কলেজ হসপিটাল।

রাজধানীর মাদানী এভিনিউতে অবস্থিত এই হাসপাতাল দেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান। এর পাশাপাশি রয়েছে আরো তিনটি হাসপাতাল, একটি মেডিক্যাল কলেজ, একটি নার্সিং কলেজ, চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহকারী কম্পানি এবং ফার্মেসি চেইন। আন্তর্জাতিক মানের পরিপূর্ণ একটি স্বাস্থ্যসেবা প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলার লক্ষ্যই ইউনাইটেড হেলথকেয়ারের প্রচেষ্টা। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিজামউদ্দিন হাসান রশীদ তার অভিজ্ঞতা, লক্ষ‌্য ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে কথা বলেছেন। তার সাক্ষাতকারটি বাংলানিউজের পাঠকদের তুলে ধরা হল:

গত এক দশকে দেশে বেশ কয়েকটি করপোরেট হাসপাতাল তৈরি হয়েছে। কিন্তু মানসম্মত সেবা কতটা নিশ্চিত করা গেছে?

বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে গত এক দশকে অনেক পরিবর্তন এসেছে। করপোরেট হাসপাতালগুলোর কারণে রোগীরা উন্নত চিকিৎসা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন, যা আগের চেয়ে অনেক বেশি আশাব্যঞ্জক। তবে শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়নই যথেষ্ট নয়; মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করার জন্য প্রযুক্তি, দক্ষ জনবল, মানবিক মনোভাব ও টেকসই ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জরুরি।

আমরা ইউনাইটেড হেলথকেয়ার বিশ্বাস করি, স্বাস্থ্যসেবা শুধু একটি সেবা নয়, এটি একটি দায়িত্ব। আমাদের মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালটি এমনভাবে পরিকল্পিত যে একজন রোগী শুধু স্বাস্থ্যসেবাই নয়, একটি পূর্ণাঙ্গ যত্ন ও মানবিক আচরণ পাবেন। আমরা অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করছি, কিন্তু তারই সঙ্গে নিশ্চিত করছি দক্ষতা ও আন্তরিকতা। রোগীর প্রয়োজন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণে আমরা চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ান ও ব্যবস্থাপনা—সবাইকে একটি টিম হিসেবে কাজ করতে উৎসাহ দিচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য, দেশবাসী বিদেশে না গিয়ে নিজের দেশেই সর্বোচ্চ মানের চিকিৎসা পাবেন।

স্বাস্থ্য খাতে ইউনাইটেড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য কী?

ইউনাইটেড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মূল উদ্দেশ্য হলে বাংলাদেশের মানুষের জন্য আন্তর্জাতিক মানের স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করা। আমরা একটি পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্যসেবার ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে চাই, যেখানে চিকিৎসা, শিক্ষা, গবেষণা ও প্রশিক্ষণ সমান গুরুত্ব পাবে।

আমরা মনে করি, আধুনিক প্রযুক্তি শুধু সুবিধা বয়ে আনে না, এটি জীবন রক্ষা করার একটি অপরিহার্য উপাদান। তাই আমাদের হাসপাতালে রয়েছে সর্বাধুনিক ল্যাব, অত্যাধুনিক ইমার্জেন্সি, অপারেশন থিয়েটার, প্রয়োজনীয় সব সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন কেবিন এবং ক্রিটিক্যাল কেয়ারের মতো আন্তর্জাতিক মানের অবকাঠামো। আমরা টেলিমেডিসিন ও ডেটা-ড্রিভেন কেয়ারের মতো প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু করেছি। জিন প্রযুক্তি, রোবটিক সার্জারির মতো প্রযুক্তির ব্যবহার অচিরেই নিয়ে আসছি এবং ভবিষ্যতে আরো উন্নত প্রযুক্তি, যেমন—এআইভিত্তিক রোগ নির্ণয় পদ্ধতি নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য শুধু রোগ নিরাময় নয়; বরং রোগ প্রতিরোধ, স্বাস্থ্যশিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে একটি স্বাস্থ্যসচেতন ও স্বাস্থ্যবান জাতি গড়ে তোলা।

বাংলাদেশে নির্দিষ্ট রোগের জন্য অভিজ্ঞ স্পেশালিস্টের অভাব রয়েছে। অল্পসংখ্যক প্রতিষ্ঠান থাকায় দেশের অর্থনীতি সে অর্থে লাভবান হচ্ছে না কেন?

আপনি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। অনেক সময় দেখা যায়, রোগীরা নির্দিষ্ট রোগের জন্য উপযুক্ত বিশেষজ্ঞ না পাওয়ায় চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে বাধ্য হন। এতে শুধু খরচ বেড়ে যায় না, পুরো পরিবারের ওপর হঠাৎ একটি চাপ এসে পড়ে। আর এই চাপ বয়ে আনে পুরো পরিবারের জন্য একটি দায়। শুধু তা-ই নয়, এতে দেশের অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চিকিৎসা গ্রহণে বছরে হাজার কোটি টাকা বিদেশে ব্যয় হয়ে যাচ্ছে, অথচ সেই মানের সেবা দেশেই নিশ্চিত করা সম্ভব। আমরা ইউনাইটেড হেলথকেয়ার নিশ্চিত করছি এমন একটি কাঠামো গড়ে তুলতে, যেখানে সব গুরুত্বপূর্ণ বিশেষজ্ঞের সমন্বয় থাকবে। আমাদের হাসপাতালের প্রতিটি ইউনিটে স্পেশালাইজড টিম রয়েছে—ক্যান্সার, নিউরোলজি, কার্ডিওলজি, গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি, নিওনেটাল কেয়ার, ট্রমা, অর্থোপেডিকস ইত্যাদির জন্য। আমরা বিশ্বমানের চিকিৎসক ও প্রশিক্ষক দ্বারা আমাদের জনবলকে আপডেটেড রাখার জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছি। পাশাপাশি আমাদের নিজস্ব প্রশিক্ষণকেন্দ্রও রয়েছে, যেখানে নিয়মিত কর্মশালা ও হ্যান্ডস-অন ট্রেনিং দিয়ে থাকি। ভবিষ্যতে মেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টার চালু করারও পরিকল্পনা রয়েছে। এতে চিকিৎসকরা দেশে থেকেই গবেষণা করতে পারবেন।

বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতে সেবার চেয়ে বাণিজ্যিক মনোভাব বেশি। করপোরেট হাসপাতালগুলোতে উন্নত দেশের সমপরিমাণ খরচ হচ্ছে—এর কারণ কী?

স্বাস্থ্য খাতে বাণিজ্যিকীকরণ একটি দিক, যা অস্বীকার করার সুযোগ নেই তবে এটিকে ব্যালান্স করাই হচ্ছে নীতিনির্ধারকদের কাজ। উন্নত যন্ত্রপাতি, প্রশিক্ষিত জনবল, আন্তর্জাতিক প্রটোকল ও ওষুধ সরবরাহ—সব মিলিয়ে খরচ কিছুটা বাড়ে। তবে ইউনাইটেড হেলথকেয়ারে আমরা খরচ ও সেবার মধ্যে একটি ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করি। আমাদের বিশ্বাস, সেবার মান বজায় রেখে খরচ সহনীয় রাখা সম্ভব, যদি একটি হাসপাতাল নিজে প্রযুক্তি ও জনবল উৎপাদন করতে পারে। আমরা নিজেরাই নার্স, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট ও প্রশাসনিক কর্মী তৈরি করছি। এতে খরচ কমছে এবং দক্ষতাও বাড়ছে। আমরা চাই না কেউ অর্থের অভাবে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হোক।

প্রশিক্ষিত জনবল তৈরিতে ইউনাইটেড হেলথকেয়ারের ভূমিকা কেমন?

প্রশিক্ষিত জনবল ছাড়া উন্নত চিকিৎসা সম্ভব নয়। ইউনাইটেড হেলথকেয়ার এ ক্ষেত্রে একটি স্পষ্ট লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে। আমরা দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম সারির প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটি, যারা আন্তর্জাতিক মানের নার্সিং কোর্স চালু করেছি। আমাদের ইউনাইটেড কলেজ অব নার্সিং এরই মধ্যে দেশ-বিদেশে সুনাম অর্জন করেছে। এ ছাড়া আমরা দেশি ও বিদেশি বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে নিয়মিত প্রশিক্ষণ, ওয়ার্কশপ আয়োজন করি। আমাদের একাধিক কর্মসূচি রয়েছে, যেখানে চিকিৎসক, ফার্মাসিস্ট, টেকনোলজিস্ট, ফিজিওথেরাপিস্টদের হ্যান্ডস-অন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। আমরা চাই, শুধু ঢাকায় নয়, সারা দেশে প্রশিক্ষণের সুযোগ ছড়িয়ে পড়ুক।

সূত্র: কালের কণ্ঠ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।