ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ফুটবল

পেলে-ম্যারাডোনা-মেসি-নেইমার সুপারহিরো তত্ত্ব

ফাহমিদুল হক, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩১ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০১৪
পেলে-ম্যারাডোনা-মেসি-নেইমার সুপারহিরো তত্ত্ব

ব্যাপারটা হলো মানুষ সুপারহিরোর ভক্ত। এক পেলের কারণে এত ব্রাজিল সাপোর্টার, আর এক ম্যারাডোনার কারণে এত আর্জেন্টিনার।



পেলে বলেছিলেন, গারিঞ্চা আমার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আমাকে কখনো ১১ জনও ঠেকাতে পারতো না, কখনও একজনই ঠেকিয়ে দিত। কিন্তু গারিঞ্চাকে ঠেকাতে সবসময়ই ৫/৬জন লাগতো।

আমরা গারিঞ্চাকে মনে রাখি নি। তাকে নিয়ে বাংলাদেশের পাঠ্যবইতে চ্যাপ্টার লেখা হয়নি, 'কালোমানিক' পেলেকে নিয়ে হয়েছে, শৈশবে আমরা পড়েছি।

এভাবে পেলে হিরো থেকে আমাদের কাছে সুপারহিরো, অথচ আমরা পেলের খেলা দেখার সুযোগই পাই নি। তবুও আমাদের প্রজন্মের বেশিরভাগ মানুষ ব্রাজিলের সমর্থক।

পেলে বা ম্যারাডোনার সুপারহিরো হবার পেছনে একধরনের কনস্ট্রাকশনের কারসাজি আছে। মিডিয়া এবং ফ্যান মিলে যে ফুটবল ডিসকোর্স ও তার ভোকাবুলারি, তার মধ্য দিয়ে সুপারহিরোর জন্ম হয়।

১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপের পর ম্যারাডোনা সুপারহিরো, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে তখন থেকেই আর্জেন্টিনার সমর্থন বেড়েছে। এর পরে ব্রাজিল আবার বিশ্বকাপ জিতেছে, আর্জেন্টিনা জিতে নি, কিন্তু তরুণদের মধ্যে ব্রাজিলের সমর্থন ততটা বাড়ে নি। কারণ রোমারিও, রোনালদো, রোনালদিনহোর মতো হিরো থাকলেও, ব্রাজিলে কোনো অধুনা সুপারহিরো নেই।

আমি ম্যারাডোনার খেলা দেখেছি, পেলের খেলা দেখি নি, তবুও আমি পেলের (এভাবে ব্রাজিলের) সমর্থক। আমি ম্যারাডোনার খেলা পছন্দও করি নি, ফ্রান্সের বিরুদ্ধে ঐ গোলটা ছাড়া, আমি ম্যারাডোনার কিছুই পছন্দ করি না (তার মতো খেলোয়াড়কে পড়ে যাবার ভান করে ফ্রিকিক আদায় করতে দেখে যারপর নাই বিরক্ত হয়েছিলাম, ১৯৯০ সালে, ক্যামেরুনের সঙ্গে ম্যাচটার কথা স্মর্তব্য; তার মাঠের বাইরের আচরণও পছন্দ করার মতো কিছু নয়)।

মাঠের বাইরের জীবন বলতে আমি ব্যক্তিগত জীবন বুঝাই নি। তারকাদের ব্যক্তিজীবন নিয়ে আমি বিচলিত নই, বা তার ব্যক্তিগত জীবন দিয়ে তাকে বিচার করাটা অন্যায়ও। ফুটবল বা স্পোর্টস নিয়েই মাঠের বাইরে তার অনেক 'কীতি' রয়েছে।

ম্যারাডোনাকে আমি খাটো করতে চাইনা আমি চাইলেও তার মহত্ত্ব বা জনপ্রিয়তা কমবে না। বিষয় হলো আমি ম্যারাডোনার খেলা, এবং খেলাকে ঘিরে তার কাণ্ডকীর্তি এবং মন্তব্য সার্বিকভাবে আমি পছন্দ করি না।

তবে আমি ফ্যান হিসাবে ফ্যানাটিক না। আমি মেসির খেলা পছন্দ করি। তার সুপারহিরো হবার সুযোগ এখনও আছে। তবে তার বড় ব্যর্থতা হলো, তিনি বিশ্বকাপে গোল পান না, এমনকি জাতীয় দলের হয়ে তার রেকর্ড তত ভালো না, যতটা ইউরোপীয় ক্লাবের হয়ে। এবার আর্জেন্টিনাকে চ্যাম্পিয়ন করতে পারলে এবং ন্যূনতম ৫টি গোল করতে পারলে, মেসি সুপারহিরো হয়েও যেতে পারেন।

নেইমারের খেলা আমি শুক্রবার দিনের প্রথম প্রহরে প্রথম দেখলাম, অনেক পছন্দ হয়েছে। পরিশ্রমী খেলোয়াড়, রোনালদোর (বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা) মতো কেবলই স্কোরার নন। তবে নেইমার সুপারহিরো হবেন কিনা, তা বলার সময়ই এখনও আসে নি। আমাদের আরও অপেক্ষা করতে হবে।

এই আমার সুপারম্যান তত্ত্ব। চলচ্চিত্রে দেখি সুপারম্যানদেরই জয়জয়কার-- ব্যাটম্যান, সুপারম্যান, স্পাইডারম্যান, আয়রনম্যান ইত্যাদি। তবে সুপারম্যানদের প্রতি ঈশ্বরসদৃশ ভক্তিতে আমার আপত্তি আছে। কেউ যদি আমাকে শুনিয়ে যায় পেলে বিরক্তিকর, কিংবা ব্রাজিল ফালতু, তবে আমি উত্তেজিত হইনা।

(ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ফাহমিদুল হকের ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে নেওয়া। )

বাংলাদেশ সময় ১২১৩ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।