ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ফিচার

রাতে ফ্রি সার্ভিসে জরুরি ঔষধসেবা দিয়ে যাচ্ছেন মাসুম

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০২০
রাতে ফ্রি সার্ভিসে জরুরি ঔষধসেবা দিয়ে যাচ্ছেন মাসুম রাতে ফ্রি সার্ভিসে ঔষধ পৌঁছে দেয়া মাসুম। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: করোনা সংক্রমণ রোধে চলেছে দিনরাত ঘরে থাকার নির্দেশনা। সন্ধ্যা ৬টার পর সর্বসাধারণের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। আতংকিত মানুষ নিজের বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না। এমন একটি সংকটময় পরিস্থিতিতে শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ব্যতিক্রমী ভাবনা নিয়ে মানবকল্যাণে এগিয়ে এসেছেন মো. মনসুর আলম মাসুম। 

সম্পূর্ণ ফ্রি সার্ভিস চার্জে তিনি সারারাতব্যাপী ক্রেতার চাহিদানুযায়ী জরুরী ঔষধ মানুষের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছেন। 01711330074 এটি তার হট লাইন নম্বর।

এই নম্বরে ফোন দিলেই তিনি ক্রেতার প্রয়োজনীয় ঔষধগুলো ক্যাশমেমো-সহ রাতে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেন। সেই ক্যাশমেমো যেখানে লেখা রয়েছে ঔষুধের নাম, দর, পরিমাণ এবং সর্বমোট মূল্য। অতিরিক্ত দাম নেওয়ার সুযোগ নেই।

বাংলানিউজকে মনসুর আলম মাসুম বলেন, ‘বাসায় থাকুন, নিরাপদে থাকুন। আপনার ঔষধ আমরাই পৌঁছে দিবো’ —এই উদ্দেশ্যকে নিয়ে সম্পূর্ণ ফ্রি সার্ভিস চার্জে মানুষের বাসায় রাতে জরুরী ঔষধ পৌঁছে দিচ্ছি। গত বুধবার (৮ এপ্রিল) থেকে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত পাঁচ রাতে প্রায় অর্ধশত বাড়িতে নৈশকালীন ঔষধসেবা দিয়েছি। শুধুমাত্র ঔষুধের দামটুকুই নিয়ে থাকি। অনেকে খুশি হয়ে ঔষুধের চেয়ে বেশি টাকা দিতে চায়। আমি নিই না। ’ 

ঔষধ সার্ভিসের স্লোগান।  ছবি: বাংলানিউজঅনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘এটি আমার ব্যবসা বা ব্যবসার প্রসারের জন্য নয়। এখানে রয়েছে আন্তরিকতার সঙ্গে রাতবিরাতে ঘরবন্দী মানুষের হাতে প্রয়োজনীয় ঔষধটুকু পৌঁছে দেওয়ার সার্থকতা। যা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। এভাবেই আমি মানুষের জন্য কিছু করতে চাই। আমার এ কার্যক্রম কখনো বন্ধ হবেনা। ’ 

এমন ব্যতিক্রমী উদ্দেশ্যের কারণ সম্পর্কে শ্রীমঙ্গল শহরের কালিঘাট রোডের আখলাক ফার্মেসীর স্বত্বাধিকারী মাসুম বলেন, ‘আমার আব্বা ছিলেন শ্রীমঙ্গল হাসপাতালের ডাক্তার। উনার নাম ছিল ডা. মো. আখলাক উদ্দিন। মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি চিকিৎসার মাধ্যমে প্রচুর মানুষের সেবা করে গেছেন। এমন বাবার সন্তান হিসেবে এই দুর্যোগময় সময়ে সারারাত ঔষধসেবা দিয়ে আমি মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছি। ’ 

আখলাক ফার্মেসীতে ২৪ ঘন্টা সেবা প্রদানের জন্য প্রিয়তোষ কপালী, পলাশ চন্দ ও ইয়াসির আরাফত নামের তিন সহযোগী রয়েছে। দুজন দিনে হোম সার্ভিস দেয় এবং একজন রাতে দোকানে থাকে। তবে আমি একাই রাতে কাস্টমারকে মেডিসিন সার্ভিস দিয়ে থাকি। আগে শ্রীমঙ্গল পৌরসভার ভেতরে দিতাম। কিন্তু এখন শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকেও অর্ডার আসছে বলে জানান মাসুম।  

শ্রীমঙ্গল উপজেলায় রাতে ঔষধ সেবা দিচ্ছেন মাসুম।  ছবি: বাংলানিউজসেবা পাওয়া নিখিল চন্দ্র মালাকার বলেন, মহামারী করোনা সংক্রমণের সময়ে হোম ডেলিভারি চার্জ ছাড়া ঘরে ঘরে দিনরাত জরুরী ঔষুধ পৌঁছে দেওয়া সত্যি বিরল এবং মহৎ একটি উদ্যোগ।  

শ্রীমঙ্গল উপজেলার সিন্দুরখান ইউনিয়নের খাসগাঁও এলাকার বাসিন্দা এমএ মতিন রানা এ সম্পর্কে বাংলানিউজকে বলেন, আমি ডায়াবেটিস রোগী, বাসা থেকে বেরুতে পারিনা বলে গতকাল মাসুমের হটলাইনে ফোন করে ঔষুধ আনিয়েছি। আমাদের শ্রীমঙ্গল উপজেলায় অনেক ফার্মেসীর মালিক রয়েছেন কিন্তু কেউ তো তার মতো নিজের মোটরবাইক নিয়ে তেল জ্বালিয়ে মানুষের বাড়ি বাড়ি ঔষধসেবা দিচ্ছেন না। মাসুমের এমন উদ্যোগটি ব্যবসা নয়; এটি ব্যবসার বাইরে একটি মানবসেবামূলক মানসিকতা।

মাসুম আমাদের সমাজের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। দেশব্যাপী এমন মহৎ প্রাণ ঔষধব্যবসায়ীরা এই সংকটময় মুহুর্তে মাসুমের মতো মানুষের পাশে এসে দাঁড়াক বলে জানান মতিন রানা।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৫ ঘন্টা; এপ্রিল ১২, ২০২০ 
বিবিবি/ইউবি 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।