ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ফিচার

হাসপাতাল যেখানে ‘চোখের মন্দির’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩০১ ঘণ্টা, মার্চ ৯, ২০২০
হাসপাতাল যেখানে ‘চোখের মন্দির’

চেন্নাই (তামিলনাড়ু) থেকে: চোখের চিকিৎসায় বিশ্বমানের হাসপাতাল গড়ে উঠেছে ভারতের দক্ষিণী রাজ্য তামিলনাড়ুতে। সাধ্যের মধ্যে প্রয়োজনীয় ও উন্নত চক্ষু চিকিৎসার জন্য এরই মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় নাম কুড়িয়েছে চেন্নাইয়ের শঙ্কর নেত্রালয়।

ইতোমধ্যে বাংলাদেশিদেরও চক্ষুসেবায় আস্থা অর্জন করেছে হাসপাতালটি। তাই চক্ষু সেবায় তাদের নির্ভরতার শীর্ষে শঙ্কর নেত্রালয়।

হাসপাতালের চিকিৎসকরাও রোগীদের অগাধ ভালোবাসা আর মমতায় সেবা দিয়ে থাকেন।

বর্তমানে মিশ্র অর্থনীতির এই সময়ে বাংলাদেশ তো বটেই, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চিকিৎসাখাতে ব্যাপক বাণিজ্যিকীকরণ ঘটেছে। যেখানে শুধু অর্থ নিলেও রোগীরা সন্তুষ্ট হতে পারেন না সেবা নিয়ে। এমন অভিযোগ তো অহরহই!

তবে চেন্নাইয়ের এই চক্ষু হাসপাতাল দেখে মনে হলো একটু ভিন্নতা।  বাণিজ্যিকীকরণের মাঝেও এখানে সেবা নিয়ে বেশ সন্তোষ প্রকাশ করেন দেশি-বিদেশি রোগীরা। তাই তো মানুষ আস্থা রেখে দিব্যি নিশ্চিন্তে চিকিৎসা নিয়ে চলেছেন শঙ্কর নেত্রালয়ে।

ভারত সফররত সাংবাদিকদের এ হাসপাতাল সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করছিলেন শঙ্কর নেত্রালয়ের পরিচালক ডা. গিরিশ শিবা রাও।

তিনি জানালেন, শঙ্কর নেত্রালয়ে প্রতিবছর গড়ে ৫৬ হাজার বাংলাদেশি রোগী চিকিৎসা নেন। এই হাসপাতালে যেসব বিদেশি রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন শতাংশের হিসেবে বাংলাদেশি শতকরা ৬০ শতাংশ।

তার ভাষ্য, প্রতিবছর এ সংখ্যা ৫ থেকে ৭ শতাংশ হারে বাড়ছে। বাংলাদেশ ছাড়াও এই হাসপাতালে শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান থেকেও রোগী আসেন। এছাড়া আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশ থেকেও চক্ষু চিকিৎসার আসেন রোগীরা।

ভারত সফররত সাংবাদিকদের হাসপাতাল সম্পর্কে বিস্তারিত জানান শঙ্কর নেত্রালয়ের পরিচালক ডা. গিরিশ শিবা রাও।  ছবি: বাংলানিউজ

দক্ষিণ ভারতের প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত চেন্নাইয়ের পুরাতন নাম মাদ্রাজ। চিকিৎসার শহর হিসেবে মাদ্রাজের সঙ্গে বাঙালিদের সম্পর্ক বেশ পুরানো। প্রাচীন কাল থেকেই উন্নত চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশিরা ছুটে গেছেন বর্তমানের এই চেন্নাইয়ে।

সেখানকার অ্যাপোলো হসপিটাল, ভেলুরের খ্রিশ্চিয়ান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ আরও অনেক বিশ্বখ্যাত চিকিৎসাকেন্দ্রে সেবা নিতে এখন নিয়মিত যাচ্ছেন বাংলাদেশিরা।

আলাপচারিতায় ডা. গিরিশ রাও বলেন, তামিলনাড়ুর বাইরে এ হাসপাতালে ৭০ শতাংশ রোগী আসেন ভারতের অন্যান্য রাজ্য থেকে। হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিবছর একলাখ রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। আর বছরে কমপক্ষে ১৭ হাজার রোগীকে বিনামূল্যে চোখের অপারেশন করা হয়। আর রোগীদের জন্য বিনামূল্যে ওষুধের ব্যবস্থা তো আছেই।  

হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানালেন, কর্নিয়া, গ্লুকোমা, রেটিনাসহ বিভিন্ন ধরনের জটিল অপারেশন বেশ যত্নসহকারে করা এই হাসপাতালে।  

বাংলাদেশি চক্ষু রোগীদের পছন্দের শীর্ষে থাকার কারণ কী? এমন প্রশ্ন ছুঁড়ে দিতেই ডা. গিরিশ রাও বললেন, এই হাসপাতালে চোখের অনেক জটিল রোগের চিকিৎসা ও অপারেশন সুলভ মূল্যে করা হয়। সেবাও বেশ ভালোমানের।

‘এই হাসপাতালে খুব কম খরচে গ্লুকোমা, রেটিনা, অকুলোপ্লাস্টি, স্কুইন্ট, পেডিয়াট্রিক ক্যাটারাক্ট, কর্নিয়াল ট্রান্সপ্ল্যান্টসহ বিভিন্ন জটিল অস্ত্রপচার করা হয়।  তাই রোগেীদের পছন্দের শীর্ষ রয়েছে শঙ্কর নেত্রালয়। ’

রোববার (০৮ মার্চ) বাংলাদেশের সাংবাদিক প্রতিনিধি দলটি যখন এই হাসপাতালে পরিদর্শনে আসে সেদিনও অনেক বাংলাদেশি রোগীকে চিকিৎসা নিতে দেখা যায়।

 

তাদেরই একজন চট্টগ্রামের সদর আলী। জানালেন, চাচাত ভাই ইমতিয়াজকে নিয়ে এসেছেন তিনি। চট্টগ্রাম ও ঢাকায় চিকিৎসক দেখিয়েছেন, তারা বলেছেন- ইমতিয়াজের চোখ ভালো হওয়ার সম্ভাবনা ২০ শতাংশ। তবে এ হাসপাতালের চিকিৎসকরা শতভাগ ভালো হয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন।

‘কয়েকবছর আগে ফুটবল খেলতে গিয়ে ইমতিয়াজ চোখে আঘাত পায়। প্রথমে সে কাউকে বলেনি। একপর্যায়ে চোখের এ সমস্যা বাড়তে থাকে। চিকিৎসকরা বলেছেন, অপারেশন লাগবে। তবে ভালো হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। চোখের চিকিৎসায় শঙ্কর নেত্রালয় বেশ ভালো, তাই এখানেই এসেছি,’ বলেন তিনি।

সদর আলী বলেন, এখানে ইমতিয়াজের এক চোখের অপারেশন করা হয়েছে। খরচ পড়েছে ৪২ হাজার ভারতীয় রুপি। আরেক চোখের অপারেশনে এ খরচ হবে ৯০ হাজার রুপি।

১৯৭৪ সালে চিন্নাইয়ে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে শঙ্কর নেত্রালয় যাত্রা শুরু করে। বরর্তমানে এ হাসপাতালে ১ হাজার কর্মী রয়েছেন। যারা প্রতিদিন ১২শ রোগীকে সেবা দিয়ে থাকেন। আর এই হাসপাতালে দৈনিক ১০০টি অপারেশন করা হয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।   

হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভারতে যাদের মাসিক আয় ১২ হাজার রুপির কম তাদের এখানে বিনামূল্যে চোখের চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে। দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে এখন শঙ্কর নেত্রালয়ের আটটি শাখা রয়েছে।

‘শঙ্কর নেত্রালয়’ এসেছে দার্শনিক আদি শঙ্করাচার্য ও নেত্রালয়’ থেকে। যার অর্থ করলে দাঁড়ায় ‘চোখের মন্দির বা দ্য টেম্পল অব দ্য আই’।

সেবার মান ও হাসপাতালের পরিবেশ বিবেচনায় দর্শনার্থী কিংবা রোগীর মনে হতেই পারে যেন তিনি ‘চোখের মন্দিরে’ই রয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৩০০ ঘণ্টা, মার্চ ০৯, ২০২০
টিসি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।