ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩০ আশ্বিন ১৪৩২, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ২৩ রবিউস সানি ১৪৪৭

ফিচার

প্রকৃতির কীটনাশক পিঁপড়া

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১:১৬, অক্টোবর ১৫, ২০২৫
প্রকৃতির কীটনাশক পিঁপড়া চা-পাতা দিয়ে তৈরি করা পিঁপড়ার বাসা/ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

বিচিত্র নানান কীট-পতঙ্গ, পোকামাকড়, পাখি এবং বন্যপ্রাণী নিয়েই আমাদের প্রকৃতি। এই প্রকৃতিতে প্রতিটি প্রাণীরই রয়েছে সুনির্দিষ্ট কর্মপন্থা বা টিকে থাকার কৌশল।

এভাবেই এরা প্রকৃতির খাদ্যশৃঙ্খল রক্ষায় পালন করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।  

চা বাগানের ক্ষুদ্র লাল পিঁপড়ার বেলাতেও তাই। এরা আমাদের কাছে বহুল পরিচিত একটি পিঁপড়া। সর্বত্রই রয়েছে এদের বিচরণ। এরা প্রকৃতি কীটনাশক হিসেবে কাজ করে। এদের শিকারের পদ্ধতি ক্ষতিকর কীট-পতঙ্গের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করে খাদ্যশৃঙ্খল রক্ষায় ভূমিকা রাখে।  

শুধু তা-ই নয়, এরা ফুলে ফুলে বিচরণ করে ফুলের পরাগায় ঘটায় এবং উদ্ভিদের বীজ ছড়িয়ে দেয়। এ ছাড়াও এরা মাটিতে বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা করে মাটিতে অক্সিজেনসহ বিভিন্ন পুষ্টির ভারসাম্য রক্ষা করে।  

মাঝেমধ্যে এদের গোলাকৃতি বাসা চোখে পড়ে। চা বাগানের প্রকৃতিতে হঠাৎ চা-পাতা দিয়ে তৈরি করা তাদের গোলাকৃতিময় অস্থায়ী বাসা তাদের প্রজন্মের জন্য সুরক্ষা দান করে। চা-পাতা আর আঠা দিয়ে তৈরি করা পিঁপড়ার সেই বাসাটিতে মাছ শিকারিদের আঘাতে মুহূর্তে ভেঙে যায়! শিকারিরা মাছের টোপ হিসেবে পিঁপড়ার বাসা থেকে ডিম সংগ্রহ করতে প্রায়শই ভেঙে ফেলে তাদের কষ্ট গড়া বাসা।  

পিঁপড়াদের রয়েছে দারুণ রহস্যময় জীবন! তাদের রাজ্যে কোনো রাজা নেই, রয়েছে শুধু রানি। সাধারণ বসন্তকালে পিপড়ার কলোনিতে জন্মায় কিছু ডানাওয়ালা পুরুষ আর স্ত্রী পিঁপড়া। এরা একসময় বাসার বাইরে উড়ে আসে ঝাঁক বেঁধে, মিলনের প্রয়োজনে। স্ত্রী পিঁপড়া ডিম দেবে বলে নতুন এক কলোনির সূচনা করে। তার প্রথম প্রজন্মের সন্তানরা সাধারণত হয় স্ত্রী শ্রমিক। এরা বাসা বানায়, খাবার তালাশ করে, নতুন সন্তানদের দেখাশোনা করে। এরা হয় বন্ধ্যা এবং এ কাজে শ্রমিক ও সেনা হিসেবে ধীরে ধীরে যুক্ত হয় আরও বন্ধ্যা স্ত্রী ও বন্ধ্যা পুরুষ পিঁপড়ারা।

স্ত্রী বা রানি পিঁপড়া, পুরুষ ও শ্রমিক পিঁপড়া মিলে পিঁপড়া কলোনি। সবার ওপরে স্ত্রী বা রানি পিঁপড়ার মর্যাদা। সে ঘরেই থাকে কিছু পুরুষ পিঁপড়াকে নিয়ে। পুরুষদের একমাত্র কাজ তার সঙ্গে মিলন। মিলনের কিছুদিন পরেই পুরুষগুলো মারা যায়। থাকে শুধু রানি আর তার আধিপত্য। রানি পিঁপড়া ডিম পাড়ে। জন্ম নেয় অগণিত সন্তান-সন্ততি!

পিঁপড়ার জীবনকাল সাধারণত তিন দশকের কিছু কম। তবে রানি পিঁপড়া ৩০ বছরেরও অধিক সময় পর্যন্ত বাঁচতে পারে। এই সময়ে সে জন্ম দেয় কয়েক লাখ পিঁপড়া সন্তান!

পিঁপড়া কলোনি এক জায়গায় পড়ে থাকে না। কোনো জায়গায় যখনই তারা শিকার করে ফেলে এবং পরবর্তী খাবারের সন্ধান পায় না, সেখানে তারা আর থাকে না, অন্য কোথাও চলে যায়।

পিঁপড়ারা বাস করে সামাজিকভাবে। তাদের আছে নিজেস্ব ভাষা। তারা খাদ্য উৎপাদন করে, শিকার করে এবং খাদ্য মজুত বা সঞ্চয় করে রাখে অনেকটা মানুষেরই মতো। তারা নিষ্ঠাবান কর্মী এবং দায়িত্বশীল।  

পিঁপড়ারা নিজেদের জীবনকে সাজিয়েছে অক্লান্ত পরিশ্রম আর সুশৃঙ্খলার হাত দিয়ে। অনেক ক্ষেত্রেই ওরা অনুপ্রেরণা হতে পারে আমাদের।  

বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।