ঢাকা, বুধবার, ৫ ভাদ্র ১৪৩২, ২০ আগস্ট ২০২৫, ২৫ সফর ১৪৪৭

ফিচার

ব্যাংকে আছে ৩ লাখ, আরও ৪ লাখ জমলে পরে বিয়ে

জিএম মুজিবুর, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭:৩৩, আগস্ট ১৯, ২০২৫
ব্যাংকে আছে ৩ লাখ, আরও ৪ লাখ জমলে পরে বিয়ে শিশুদের কুলফি মালাই দিচ্ছেন বিক্রেতা নয়ন/ছবি: জি এম মুজিবুর

স্কুলগুলোর ছুটির সময় বা পোশাক কারখানার শ্রমিকরা যখন দুপুরে লঞ্চের জন্য বের হয়, ঠিক তখনই ঢাকার মিরপুর-১৩ নম্বরে ব্যস্ত রাস্তায় দেখা মেলে নয়ন (২৪) নামে এক তরুণের।  জং ধরা একটি বাইসাইকেল নিয়ে রাস্তার অলিগলিতে দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি।

আর তার বাইসাইকেলের পেছনে থাকে একটি বড় হাঁড়ি। তাতে পেঁচানো থাকে লাল কাপড়, হাঁড়িতে থাকে দুধ-বরফ ও জাফরানে মেশানে মজাদার কুলফি মালাই। ক্রেতাদের টানতে হাঁকডাক দিতে থাকেন ওই তরুণ। হাসিমুখে তিনি ডাক দেন, এই গরমে ঠান্ডা মালাই চান? একবার খেয়ে যান!

ব্যস্ত শহরের ভিড়ের মাঝে এক তরুণের গল্প এখন অনেকের অনুপ্রেরণা। নয়নের গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ায়, থাকেন মিরপুরের কাজীপাড়ায়। সামান্য পুঁজি নিয়ে তিনি প্রথমে মিরপুর ১০ নম্বরের স্কুলগুলোর সামনে এবং পোশাক কারখানার আশেপাশে কুলফি মালাই বিক্রি শুরু করেন। প্রথম দিকে কুলফি মালাই বেচার টাকা জমিয়ে তিনি একটি বাইসাইকেল কেনেন ও পরে ব্যবসা শুরু করেন।

স্কুল ছুটির সময় শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে বড়রাও ভিড় জমান নয়নের বাইসাইকেলের সামনে। একদিনে সামান্য আয় দিয়েই শুরু হলেও নয়নের কুষ্টিয়ার ঐতিহ্যবাহী কুলফির স্বাদ মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে।

কুলফি মালাই কেনার সময় গল্পের ছলে নয়ন জানান, ধৈর্য আর পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি ইতোমধ্যেই ব্যাংকে জমিয়েছেন তিন লাখ টাকা। তার  লক্ষ্য হচ্ছে ব্যাংকে আরও চার লাখ টাকা জমানোর। দু’চোখ ভরা স্বপ্ন তার—টাকা হলে বিয়ে করবেন, তারপর শুরু করবেন নতুন ব্যবসা। সেই স্বপ্ন নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তিনি। এখন সবমিলে ১২ হাজার টাকার পুঁজি খাটছে তার ব্যবসায়। সামান্য পুঁজিতে আজ জীবন পাল্টে দিয়েছে তার।


মিরপুর-১৪ নম্বর পুলিশ স্কুলের ছাত্র মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলে, ছুটির সময় আমাদের স্কুলগেটে নয়ন আঙ্কেল আইসক্রিম নিয়ে আসেন। তখন তার কাছ থেকে মজাদার কুলফি মালাই খেয়ে থাকি। কারণ উনার কুলফি মালাইয়ের স্বাদ একটু ভিন্ন, এবং খুব মজা লাগে দামও কম ১০ টাকা ও ২০ টাকা। অন্যদের কুলফি মালাই খেলে এতটা মজা পাই না।

নয়ন বলেন, আমি শূন্য হাতে ঢাকায় এসেছিলাম, গ্রামে আমার বাবা ও মা থাকেন। ঢাকায় একা থাকি। কীভাবে চলবো, কোথায় থাকবো, কি খাব...তারপরও ভেঙে পারিনি। কিন্তু এ চিন্তা করে দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলাম। হঠাৎ একদিন দেখা হয় এক কুলফি মালাই বিক্রেতার সঙ্গে। তার সঙ্গে হতাশার কথা শেয়ার করতেই তিনি আমাকে পরামর্শ দিলেন ছোট পরিসরে কিছু একটা করতে। সেই কথা পর শুরু করেছিলাম কুলফি মালাই বেচার। খেয়ে না খেয়ে টাকা জমাতে শুরু করি।


তিনি আরও বলেন, অল্প পুঁজি থাকলেও যদি চেষ্টা থাকে তবে নিজের পায়ে দাঁড়ানো সম্ভব। শুধু বসে থেকে বেকারত্বের অভিশাপ নিয়ে জীবন চলবে না। আমি চাই তরুণরা অল্প পুঁজি নিয়েই ব্যবসা শুরু করুক। তাহলেই সাফল্য আসবেই।


বিদেশে কাজের জন্য লাখ টাকা খরচ করার প্রবণতা নিয়ে নয়ন বলেন, দেশের বেশিরভাগ বেকার তরুণ পাঁচ লাখ ১০ লাখ টাকা খরচ করে বিদেশে বিভিন্ন কাজ করতে পারে কিন্তু দেশের মাটিতে থেকে নিজের টাকায় ব্যবসা করতে চান না কেন আমি জানি না।  

আজ নয়নের গল্প কেবল একটি কুলফি বিক্রেতার গল্প নয়, অল্প পুঁজি ও কঠোর পরিশ্রম আর আত্মবিশ্বাস সফলতার মূলমন্ত্র। তরুণদের উদ্দেশে নয়নের বার্তা বেকার না থেকে ছোট ব্যবসা শুরু করা। অল্প টাকায় হলেও চেষ্টা করলে সাফল্য আসবেই।

জিএমএম/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।