ঢাকা, বুধবার, ১৮ আষাঢ় ১৪৩২, ০২ জুলাই ২০২৫, ০৬ মহররম ১৪৪৭

ফিচার

হিউম্যানয়েড রোবটের ফুটবল ম্যাচে ছড়িয়েছে মুগ্ধতা

ফিচার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১:১৬, জুলাই ১, ২০২৫
হিউম্যানয়েড রোবটের ফুটবল ম্যাচে ছড়িয়েছে মুগ্ধতা

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় চীনের জাতীয় পুরুষ ফুটবল দল তেমন উচ্ছ্বাস তৈরি করতে না পারলেও, রাজধানী বেইজিংয়ে রোবট ফুটবল দলের খেলা দর্শকদের হৃদয় জয় করে নিয়েছে। এটি খেলাধুলার গুণে নয়, বরং প্রযুক্তির অসাধারণ ব্যবহারের জন্য সম্ভব হয়েছে।

গত শনিবার রাতে বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত হয় চীনের ইতিহাসে প্রথম সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় হিউম্যানয়েড রোবট ফুটবল ম্যাচ। এতে চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যানয়েড রোবট অংশ নেয়। দলের খোলোয়াড় সংখ্যা ছিল তিনজন করে। পুরো খেলাটি পরিচালিত হয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে, কোনো রকম মানবীয় হস্তক্ষেপ ছাড়াই। আয়োজকরা বলছেন, এটি ছিল এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত, এবং আসন্ন ‘ওয়ার্ল্ড হিউম্যানয়েড রোবট গেমস’র প্রথম ঝলক।

রোবটগুলোর প্রত্যেকটিই ছিল উচ্চমানের ভিশন সেন্সরে সজ্জিত। বল চিনে নেওয়া, মাঠে সজাগ গতিতে চলাফেরা করা, এমনকি পড়ে গেলে নিজে নিজে উঠে দাঁড়ানো, সবই তারা করতে পারছিল। তবে খেলার মধ্যেই কিছু রোবট পড়ে গিয়ে নড়তে না পারায়, মাঠকর্মীদের স্ট্রেচারে করে তাদের সরিয়ে নিতে হয়েছে। এটি ফুটবল ম্যাচটি এক ধরণের ‘বাস্তবতার স্বাদ’ যোগ করেছে বলে মনে করছেন দর্শকরা।

চীন হিউম্যানয়েড রোবট ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তিতে বৈশ্বিক অগ্রগামী হতে চায়। খেলাধুলা, বিশেষ করে ম্যারাথন, বক্সিং ও ফুটবলের মতো প্রতিযোগিতা, রোবট প্রযুক্তির বাস্তব পরীক্ষাগার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

রোবট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বুস্টার রোবটিক্সের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও চেং হাও বলেন, খেলার মাঠ রোবটের জন্য একটি আদর্শ পরীক্ষণ ক্ষেত্র। এটি আমাদের সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যারের সমন্বিত অ্যালগরিদম আরও উন্নত করতে সাহায্য করছে।

তিনি নিরাপত্তার দিকটি বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে বলেন, ভবিষ্যতে আমরা এমন ম্যাচ আয়োজন করতে চাই, যেখানে রোবট ও মানুষ একসঙ্গে খেলবে। তাতে জয়-পরাজয় বড় কথা নয়, বরং আক্রমণ ও প্রতিরক্ষার বাস্তব অনুশীলন হবে। এটি মানুষের মধ্যে রোবটের প্রতি আস্থা গড়ে তুলবে, যে তারা নিরাপদ।

বুস্টার রোবটিক্স চারটি দলকেই হার্ডওয়্যার সরবরাহ করেছে। তবে প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল তাদের নিজস্ব অ্যালগরিদম তৈরি করেছে। যার মধ্যে ছিল রোবটের দৃষ্টি, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, খেলোয়াড়দের গঠন ও পাসিং কৌশল। বলের গতি, শক্তি, দিক সবই বিশ্লেষণ করে তারা কৌশল প্রয়োগ করেছে।

ফাইনাল ম্যাচে সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘টিএইচইউ রোবোটিক্স’ দল ৫-৩ গোলের ব্যবধানে চীন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘মাউন্টেন সি’ দলকে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন হয়।

সিংহুয়ার সমর্থক মি. উ বলেন, তারা (টিএইচইউ) দারুণ খেলেছে। তবে মাউন্টেন সি দলও চমৎকার ছিল। তারা অনেক চমক নিয়ে এসেছে।

চীনের পুরুষ ফুটবল দল এখন পর্যন্ত মাত্র একবার বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছে। ২০২৬ সালে কানাডা, মেক্সিকো ও যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠেয় আসর থেকে আগেই বাদ পড়েছে। তবে প্রযুক্তির এই ‘নতুন খেলোয়াড়রা’ চীনের ফুটবলে নতুন সম্ভাবনার বার্তা দিচ্ছে। যেখানে খেলার চেয়েও বড় গল্প হচ্ছে মেশিনের চিন্তা, সিদ্ধান্ত ও চ্যালেঞ্জ গ্রহণের ক্ষমতা। আর সেটাই এখন ফুটবলপ্রেমী প্রযুক্তিপিপাসুদের কাছে বড় আনন্দের উৎস।

এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।