ঢাকা, বুধবার, ২২ আশ্বিন ১৪৩২, ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ রবিউস সানি ১৪৪৭

নির্বাচন ও ইসি

আচরণ বিধি প্রতিপালন: ইসি কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়ার পরামর্শ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭:১০, অক্টোবর ৭, ২০২৫
আচরণ বিধি প্রতিপালন: ইসি কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়ার পরামর্শ নির্বাচন ভবনে আয়োজিত সংলাপে অংশ নিয়েছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা।

ঢাকা: নির্বাচনে আচরণ বিধি প্রতিপালন নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিজস্ব কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।  

মঙ্গলবার (০৭ অক্টোবর) নির্বাচন ভবনে আয়োজিত সংলাপে অংশ নিয়ে নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা এমন পরামর্শ দেন।

 

ইসির সাবেক সচিব ড. মোহাম্মদ জকরিয়া বলেন, গত ১৭ বছর দেওয়া অস্ত্র ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করতে হবে। সীমান্ত দিয়ে আসা নকল টাকা, সন্ত্রাসী, মাদক প্রবেশ বন্ধের প্রচেষ্টা চালাতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে এটা করতে হবে। সন্ত্রাস দমন ও সন্ত্রাসীদের কার্যকরভাবে আইনের আওতায় আনা, কালো টাকা, অর্থ পাচারকারী ও ঋণ খেলাপিদের নিয়ন্ত্রণ করা এবং কেন্দ্র থেকে মাঠ পর্যায় পর্যন্ত সর্বস্তরের বেসামরিক প্রশাসনকে নিরপেক্ষ নিশ্চিত করতে হবে।  

নির্বাচনকালীন অনিয়ম দূর করতে যেসব কমিটি করা হয়, সেগুলোতে নির্বাহী ও জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়। তারা নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে এসব কাজ ঠিকভাবে করা হয় না। এছাড়া তাদের গাড়িসহ লজিস্টিক সাপোর্ট দেওয়া সম্ভব হয় না। এজন্য ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।  

ইসির সাবেক উপ-সচিব মাহফুজা আক্তার বলেন, নির্বাচন শিডিউলে আগে থেকে আচরণ বিধিমালা পর্যবেক্ষণে রাখা। এ বিষয়টা আসলেই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মাঠ পর্যায়ে আচরণ বিধিমালা পরিচালনা হয়। এখন দেখা যাচ্ছে যে, বিভিন্ন দল, ব্যক্তিপর্যায়ে বিভিন্ন কার্যক্রম চলছে। এটা যদি নির্বাচন কমিশন থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয় এবং একটা যদি ছক বেঁধে দেওয়া হয় এবং আমাদের কর্মকর্তাসহ এবং প্রশাসনের যে সব কর্মকর্তা জড়িত রয়েছেন তাদের নিয়ে একটা কমিটি গঠন করা হয়। সেখানে এ বিশেষ নির্দেশনা দিয়ে দেওয়া। এটাকে নির্বাচনের আগে থেকে মনিটর করা যায় কিনা। মনিটর করতে পারলে পরিবেশটা ভালো থাকে এবং নির্বাচনী কার্যক্রমও সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়। এজন্যই নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের নির্বাহী ক্ষমতা দেওয়া প্রয়োজন। এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং এটা গুরুত্ব দিয়ে ভাবার জন্য আমি কমিশনকে অনুরোধ করবো। যাতে আমরা মাঠে আচরণ বিধিমালা সেভাবে পরিচালনা করতে পারি।  

নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক খন্দকার মিজানুর রহমান বলেন, আপনারা যারা এখন নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব নিয়েছেন তারা মনে হয় সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছেন। তার কারণ হলো দেশের একটা বড় রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের দায়িত্ব নিয়েছেন। এখন সবারই আশা এবং প্রত্যাশা অনেক বেশি। সভারই আশা যে, আপনাদের মাধ্যমেই দেশের রিয়েল গণতান্ত্রিক ধারা প্রত্যাবর্তন হবে বাংলাদেশে।  

তিনি বলেন, বড় আসনে একাধিক রিটার্নিং কর্মকর্তা করা উচিত। যদি সঠিকভাবে নির্বাচন উঠিয়ে আনতে হয় তাহলে আচরণ বিধিটাকে যদি যথাযথভাবে প্রতিপালন করতে সক্ষম হয় নির্বাচন কমিশন, তাহলে একটা বার্তা পৌঁছানো যাবে প্রতিটা দল এবং তার প্রতিনিধিদের যে, নির্বাচন কমিশন শক্ত। এটা যদি কমিশন প্রথমেই ঢিল দেয় তাহলে কিন্তু হবে না, প্রথম থেকেই শক্ত থাকতে হবে।  

ফেমার সভাপতি মুনিরা খান বলেন, যদি রাজনৈতিক দলগুলো, ভোটারদের সদিচ্ছা না থাকে, সবার সদিচ্ছা ছাড়া নির্বাচন কমিশন কাজ করতে পারে না। যদি সরকার, রাজনৈতিক দলগুলো সাহায্য না করে তাহলে পারবেন না। আপনি যতই বলেন না কেন সুষ্ঠু নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিশন খুবই চেষ্টা করছে, তাহলেও আপনারা পারবেন না।  

সাতটি জাতীয় নির্বাচনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে ইসির সাবেক উপ-সচিব মিহির সারওয়ার মোর্শেদ বলেন, অঙ্গীভূত আনসাররা দলীয় হয়। যতদূর সম্ভব এদের না নেওয়া ভালো। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের উপজেলার বাইরে থেকে নিতে হবে। অনিয়মের বিচার করতে হবে তাৎক্ষণিক। ইসির কর্মকর্তারা বেস্ট কর্মকর্তা। ওরা পালস বোঝে। ওদের যদি ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেওয়া হয়, তাহলে তাৎক্ষণিক শাস্তি হবে ও আচরণ বিধি লঙ্ঘন বন্ধ হবে। কেননা, আগের দিন যখন ভোট কর্মকর্তারা যায়, তখন কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেটরা যান না। পরের দিন যান। ওনারা নির্বাচনী এলাকায় যখন যান, টিএনও অফিসে গিয়ে চা খায়। আসতে আসতে ১০টা বেজে যায়।  

এছাড়াও পক্ষপাতদুষ্টদের ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার দায়িত্বে যেন না দেওয়া হয়, বিগত তিন নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্তদের যেন এবার ভোটের বাইরে রাখা হয় এসব পরামর্শ দেন বক্তারা।

সবার আলোচনা শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, আমাদের কাছে নানা কারণে অভিযোগ আসছে রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তা, উই আর টেক কেয়ার অব দিস। আমরা তালিকা হয়তো নিবো। যা করার আমরা করবো মোটামুটিভাবে। এখন অন্তরের মধ্যে কোনো দলীয় মনোবৃত্তি আছে কিনা সেটা তো জানা সম্ভব না। তবে দলীয় দল দাসের মতো কাজ করতে পারবেন না সেটা আমরা নিশ্চিত করবো। কারো যদি রাজনৈতিক অভিলাষ থাকেও, সেটা বাস্তব কাজে প্রতিফলিত হবে না, সেটা আমরা নিশ্চিত করবো। কোনো পক্ষে কাজ করলে অ্যাকশন হবে। এখনকার মেসেজ হলো এটা।  

তিনি বলেন, ভালো খারাপ তো সবখানেই আছে। কিন্তু এরকম অনেকে বলছেন, গত তিন নির্বাচনে যারা কাজ করেছেন, তারা যেন ধারের কাছে না আসতে পারে। এখন ১০ লাখ লোকের মধ্যে বাদ দিতে গেলে, কম্বলই উজাড়। লোম বাছতে গিয়ে কম্বল উজাড়, আমার অবস্থা হয়েছে সে রকম। সুতরাং তাদের কিছু নিতে হবে। তবে তাদের নজরদারির মধ্যে রাখা হবে। মানুষ তো মানুষই। বিবেক আছে তো। সে তো পরিস্থিতি বুঝবে, কখন কোথায় কাজ করছে। কাজেই অনেকেই দেখবেন সঠিক আচরণ করছেন।

ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজের সঞ্চালনায় সংলাপে অন্য চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি কর্মকর্তাসহ অন্যরা অংশ নিয়েছেন।

ইইউডি/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।