ঢাকা, বুধবার, ২৩ আশ্বিন ১৪৩২, ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৫ রবিউস সানি ১৪৪৭

শিক্ষা

শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়া ও ভাতা বাড়াতে নতুন প্রস্তাব

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:৫৩, অক্টোবর ৬, ২০২৫
শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়া ও ভাতা বাড়াতে নতুন প্রস্তাব

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য নতুন হারে বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ও উৎসব ভাতা বাড়াতে অর্থ মন্ত্রণালয়ে নতুন প্রস্তাব পাঠিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

রোববার (৫ অক্টোবর) এই প্রস্তাব পাঠানো হয় বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ দপ্তর।

শিক্ষকদের দাবি বিবেচনায় নিয়ে এবার ২০ শতাংশ হারে বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধি ও কর্মচারীদের ঈদের বোনাস ৭৫ শতাংশে উন্নীত করতে অর্থ মন্ত্রণালয়ে নতুন প্রস্তাব পাঠিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

দীর্ঘদিনের দাবি উপেক্ষা করে বাড়ি ভাড়া মাত্র ৫০০ টাকা বাড়িয়ে রোববার (৫ অক্টোবর) পরিপত্র জারি করায় ক্ষোভে ফুঁসে উঠেন শিক্ষকরা। পরিপত্র প্রত্যাখ্যান করে আগামী ১২ অক্টোবর থেকে ঢাকায় লাগাতর অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে বলা হয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি), কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর এবং মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতায় এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা বর্তমানে উৎসব ভাতা (বোনাস) বাবদ মূল বেতনের ৫০ শতাংশ, চিকিৎসা ভাতা বাবদ মাসিক ৫০০ টাকা ও বাড়ি ভাড়া বাবদ মাসিক এক হাজার টাকা হারে পাচ্ছেন।

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের উৎসব ভাতা ৫০ শতাংশ থেকে ৭৫ শতাংশে উন্নীত করা, শিক্ষক-কর্মচারীদের চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা এবং বাড়ি ভাড়া এক হাজার টাকা থেকে দুই হাজার টাকায় উন্নীত করার অনুরোধ জানিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা একটি আধাসরকারি পত্র অর্থ বিভাগে পাঠিয়েছেন।

প্রস্তাবে বলা হয়, বর্তমানে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা বাড়ি ভাড়া ভাতা নির্দিষ্ট পরিমাণের পরিবর্তে মূল বেতনের অন্তত ২০ শতাংশ হারে বাড়ি ভাড়া ভাতার জন্য আবেদন করেছেন। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে মূল বেতনের শতাংশ হারে বাড়ি ভাড়া ভাতা দিতে সম্ভাব্য আর্থিক হিসাব পাঠানো হলো।

২০ শতাংশ হারে বাড়ি ভাড়া

বর্তমানে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) আওতাধীন বেসরকারি স্কুল ও কলেজগুলোতে বর্তমানে মাসিক এক হাজার টাকা হারে বাড়ি ভাড়া দেওয়া হয়। তাতে সরকারের মাসে ব্যয় হয় ৩৯ কোটি ১৩ লাখ টাকা। আর বছরে খরচ হয় ৪৬৯ কোটি ৫২ লাখ টাকা।

প্রস্তাবিত ২০ শতাংশ হারে বাড়ি ভাড়া দিলে মাউশির আওতাধীন স্কুল-কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য মাসে ব্যয় হবে ১৯৬ কোটি টাকা। আর বছরে খরচ হবে ২ হাজার ৩৫১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।

মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন মাদরাসাগুলোতে মাসিক এক হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া ভাতা দেওয়া হয়। এটিও ২০ শতাংশ হারে দিলে বছরে সরকারের ব্যয় হবে ১ হাজার ১২৩ কোটি ২ লাখ টাকা।

কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া বাবদ বর্তমানে ব্যয় হয় ২ কোটি ৩১ লাখ টাকা। মূল বেতনের ওপর ২০ শতাংশ হারে বাড়ি ভাড়া দিলে সরকারের ব্যয় বেড়ে দাঁড়াবে ১৪১ কোটি ৯০ হাজার টাকা।

চার ক্যাটাগরিতে শতাংশ হারে বাড়ি ভাড়ার প্রস্তাব

এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে বাড়ি ভাড়া ভাতা দাবি করলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় ৫, ১০, ১৫ ও ২০ শতাংশ হারে হিসাব করে প্রস্তাব পাঠিয়েছে। এতে কত শতাংশ বাড়ালে মাসিক ও বাৎসরিক খরচ কত হবে, তাও উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রস্তাবে বলা হয়, শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য নির্ধারিত পরিমাণ (১০০০ টাকা) বাড়ি ভাড়ার পরিবর্তে শতকরা ২০ শতাংশ বা ন্যূনতম ৩ হাজার টাকা হারে ভাতা দিলে বছরে খরচ হবে ৩ হাজার ৪০০ কোটি ২৪ লাখ টাকা। তার মধ্যে স্কুল-কলেজের জন্য খরচ হবে দুই হাজার ৩৫১ কোটি ৯৫ লাখ, মাদরাসার জন্য ৯০৭ কোটি ২ লাখ এবং কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য ১৪১ কোটি ৯০ হাজার টাকা।

মূল বেতনের ১৫ শতাংশ হারে এবং ন্যূনতম ২ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া দিলে বছরে মোট খরচ হবে ২ হাজার ৪৩৯ কোটি ২৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে স্কুল-কলেজের জন্য ১ হাজার ৭২৭ কোটি, মাদরাসার জন্য ৬০৮ কোটি ৪০ লাখ ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য ১০৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা প্রয়োজন হবে।

১০ শতাংশ হারে এবং ন্যূনতম ২ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া দিলে বছরে মোট খরচ হবে ১ হাজার ৭৬৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এরমধ্যে স্কুল-কলেজের জন্য ১ হাজার ২৬৪ কোটি ২৩ লাখ, মাদরাসার জন্য ৪২৯ কোটি ৬০ লাখ এবং কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য ৭৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা প্রয়োজন হবে।

এ ছাড়া মূল বেতনের ৫ শতাংশ হারে এবং ন্যূনতম ২ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া দিলে বছরে মোট খরচ হবে ১ হাজার ৩৭১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এরমধ্যে স্কুল-কলেজের জন্য ৯৭৫ কোটি ৬০ লাখ, মাদরাসার জন্য ৩৩৯ কোটি ৬০ লাখ ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য ৫৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকা প্রয়োজন হবে।  
চিকিৎসা ভাতা ১০০০ টাকা, বোনাস ৭৫ শতাংশের প্রস্তাব

বর্তমানে দেশের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা মাসিক ৫০০ টাকা করে চিকিৎসা ভাতা পাচ্ছেন। তবে তারা এ ভাতা বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছেন। শিক্ষকরা বলছেন, বর্তমানে কোথাও একজন এমবিবিএস ডাক্তার দেখাতে ৮০০ টাকার নিচে ভিজিটিং চার্জ নেই। সেখানে ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা খুবই অপ্রতুল।

তাদের এ দাবি বিবেচনায় নিয়ে চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা বাড়িয়ে মাসিক ১০০০ টাকা করার প্রস্তাব করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে এমপিওভুক্ত কর্মচারীদের উৎসব ভাতা (বোনাস) ৭৫ শতাংশে উন্নীত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা আগে ২৫ শতাংশ এবং কর্মচারীরা ৫০ শতাংশ বোনাস পেতেন। সম্প্রতি শিক্ষক ও কর্মচারী উভয়ের বোনাস ৫০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এর বিরোধিতা করছেন শিক্ষকরাই। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কর্মচারীদের বোনাস ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭৫ শতাংশ করার প্রস্তাব পাঠালো শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে শিক্ষকদের বোনাস ৫০ শতাংশ বহাল থাকবে।

এমআইএইচ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

শিক্ষা এর সর্বশেষ