ঢাকা, বুধবার, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ মে ২০২৪, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

রঙিন ফুল মন রাঙালো না ব্যবসায়ীদের

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২২
রঙিন ফুল মন রাঙালো না ব্যবসায়ীদের লাল গোলাপের কলি। ছবি: বাংলানিউজ

রাজশাহী: দোকানে সাজিয়ে রাখা ফুলে পানি স্প্রে করে সেগুলোকে তাজা রাখছেন মহানগরীর নিউমার্কেট এলাকার ফুল ব্যবসায়ী রাশেদুল ইসলাম। তার লক্ষ্য একটাই, তাজা ফুল ক্রেতাদের হাতে তুলে দেওয়া।

পাশাপাশি নিজের বিক্রিও বাড়ানো। আর কিছু ফুলের তোড়া আগাম তৈরি করে রাখছেন ভিড়ের সময় দ্রুত বিক্রির জন্য। তার দোকানে রয়েছে বাহারি জাতের ফুল। পহেলা ফাল্গুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে ভালো বিক্রির আশা করেছিলেন। কিন্তু আজ সকাল থেকে যেমন ক্রেতার আশা করেছিলেন তেমন ক্রেতার দেখা মেলেনি! তাই এই ভরা মৌসুমে রঙিন ফুল তার মনকে রাঙাতে পারছে না। গুচ্ছ গুচ্ছ ফুলের মধ্যে দিনভর বসে থেকেও মনে সুখ নেই রাজশাহীর ফুল ব্যবসায়ীদের। ফুল ব্যবসায়ী রাশেদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, এই ফুলের মূল ক্রেতা বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজপড়ুয়ারা। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ। আর করোনার বিধি-নিষেধ থাকায় সাধারণ ক্রেতাও কম। তাই আশানুরূপ ক্রেতা না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন তিনি ও তার মত অনেক ব্যবসায়ী। মহামারি করোনা পরিস্থিতির কারণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হচ্ছে। এতে বিয়ে বা সামাজিক অনুষ্ঠান, নানা ধরনের পারিবারিক আয়োজনও কমে গেছে। এদিন তরুণ-তরুণীরা সবচেয়ে বেশি ফুল কিনেন। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনেকেই বাড়িতে অবস্থান করছেন। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ও যদি খুলত, তা হলে হয়তো খানিকটা লাভের মুখ দেখা যেত। যে পরিমাণ ফুল মজুত করেছি সেগুলো নষ্ট হওয়া নিয়ে চরম আশঙ্কায় আছি। রাশেদুল ইসলামের মতো হতাশা নিয়ে রাজশাহীর ফুলের দোকানে সাজিয়ে রাখা হয়েছে বাহারি জাতের ফুল। নানা দামে বিক্রি হয় নানা সৌন্দর্যের এসব ফুল। কিন্তু আশানুরূপ ক্রেতা নেই। করোনার অব্যাহত লোকসানের মুখে পরিশ্রম করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেও এবার বাধা হয়েছে ওমিক্রন। সংক্রমণের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব ধরনের সমাবেশ ও সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ থাকায় ফলে ফুল বেচাকেনা কমেছে। এতে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ফুলের বিক্রি কমেছে অর্ধেকেরও বেশি। এ অবস্থায় হতাশায় ভুগছেন ফুল ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনার কারণে জাতীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ থাকায় বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা। নতুন বছর শুরুর মধ্য দিয়ে ফুলের ব্যবসাটা শুরু করতে পারবেন বলে আশা করেছিলেন। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি। ১৪ ফেব্রুয়ারি বসন্ত বরণ ও ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে রাজশাহীতে এবার ১০ লাখ টাকার ফুল আমদানি করেছেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু বিক্রি কম থাকায় লক্ষ্যমাত্রা তো পূরণ হবেই না উল্টো এই ফুল নিয়ে বিপাকে পরতে পারেন ব্যবসায়ীরা। সংকটময় এই পরিস্থিতিতে কর্মচারী, দোকান ভাড়াসহ আনুষাঙ্গিক খরচ মেটাতে হিমশিম খাবেন। সরেজমিন ঘুরে দেখা গছে, এখন মহানগরীতে স্থায়ী ও অস্থায়ী প্রায় দেড় শতাধিক ফুলের দোকান রয়েছে। এর মধ্যে স্থায়ী ফুলের দোকান রয়েছে অর্ধশতাধিক। এসব ফুলের দোকানে শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন রঙের গোলাপ, জুঁই, চামেলী, জারবেরা, রজনীগন্ধা, কালার গ্লাডিওলাস, গাঁদাসহ নানা রং ও বর্ণের ফুল।

সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) ভোর থেকেই ব্যবসায়ীরা ফুল সাজানো ও বিক্রিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে, দুপুর পেরোলেও অধিকাংশ ফুলই অবিক্রিত রয়ে গেছে।  

করোনা পরিস্থিতির আগে যে বিক্রি হয়েছিল অর্থাৎ স্বাভাবিক সময়ের বিক্রির চেয়ে এখনকার বিক্রি তার চেয়েও তুলনামূলক অনেক কমে গেছে। বলা চলে তিন ভাগের এক ভাগও বিক্রি নেই। ক্রেতারা বলছেন, অন্য বছরগুলোর তুলনায় এবার ফুলের দাম ব্যাপক চড়া। ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো দাম রাখছেন। রাত ও সকালের বাজারের মধ্যে বিস্তর ফারাক। সাধারণ সময়ে গোলাপের দাম প্রতি পিস ২০ থেকে ৩০ টাকা হলেও, আজ সকাল থেকে ৯০ থেকে ১০০ টাকা দর হাঁকছেন ব্যবসায়ীরা। দাম গত বছরের তুলনায় প্রায় তিনগুণ। সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া বাসন্তী রঙের গাঁদার চেইন আগে ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়।

ফুল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, আজ একটি ছোট আকৃতির লাল গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ৩০-৫০ টাকা, কাগজে মোড়ানো ৬০-৭০ টাকা, আর লাল বড় গোলাপ ৯০-১০০ টাকা, রজনীগন্ধার স্টিক ২০-২৫ টাকা, কালার গ্লাডিওলাস ৩০-৪০ টাকা, ফুলের তোড়া সর্বনিম্ন সাড়ে ৩শ থেকে ১ হাজার টাকা, জারবেরা ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, গাঁদা ৬০ টাকা। ফুলের মধ্যে এবার রজনীগন্ধা ও গোলাপের চাহিদা বেশি। তরুণীদের পছন্দের মধ্যে রয়েছে জারবেরা ও কালার গোলাপ। তবে, ভালোবাসা দিবসের জন্য আজ গোলাপের চাহিদাই বেশি। মহানগরীর জিরোপয়েন্টের ফুল ব্যবসায়ী শহিদ বলেন, ফুলকে কেন্দ্র করেই আমাদের সবকিছু। করোনা ভাইরাসের প্রভাবে আমরা ফুল বিক্রি করতে পারছি না। বিশ্ব ভালোবাসা দিবসটি পালন উপলক্ষে রাজশাহীতে এবার প্রায় ১০ লাখ টাকার ফুল আমদানি করেছেন ব্যবসায়ীরা। এই ফুল বেশি টাকায় বিক্রি হবে বলে ব্যবসায়ীরা টার্গেট নিয়েছেন। কিন্তু স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ফুলের বিক্রি কমেছে অর্ধেকেরও বেশি। এখন আমদানি করা সব ফুল বিক্রি হবে কিনা এ নিয়ে চিন্তিত।

জানতে চাইলে মো. হান্নান নামে এক ফুল বিক্রেতা বাংলানিউজকে বলেন, লকডাউন এবং তার পরও করোনা পরিস্থিতিতে ফুল বিক্রি হয়নি বললেই চলে। করোনার প্রকোপ কিছুটা কমায় তারা ভেবেছিলেন, বসন্ত উৎসব ও ‘ভ্যালেন্টাইন’স ডে’ ক্ষতি পুষিয়ে দেবে। কিন্তু এবারও হলো না।

পুষ্পালয় ফুলের দোকানের বিক্রেতা মো. রাজীব বাংলানিউজকে বলেন, রাজশাহীতে বেশিরভাগ ফুল আমদানি করা হয় যশোর থেকেই। কারণ সেখানে ভালোজাতের ফুল চাষ হয়। অন্য সময়ের চেয়ে এবার বেশি দামে ফুল কিনতে হয়েছে। ফলে এবার প্রতিটি ফুলের দাম গতবারের চেয়ে বেশি।

সাহেব বাজার জিরোপয়েন্টে ফুল কিনতে আসা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাইমুন ইসলাম বলেন, ভাইয়ের জন্মদিন উপলক্ষে ফুল কিনতে এলামা। ফুলের বেশি দাম চাইছেন বিক্রেতারা। কয়েকদিন আগে একটি অনুষ্ঠানের জন্য ফুল নিলাম। তখন এত দাম ছিল না।

রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী খাইরুল আলম বলেন, ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো ফুলের দাম হাঁকছেন। সকালে এক রকম আবার বিকেলে আরেক দাম রাখছেন। গোলাপ ফুল স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় দুই-তিনগুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এর কারণে অনেকেই গোলাপ কিনতে পারছেন না।


বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২২
এসএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।