ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

আগুন নেভাতে গিয়ে নিভে গেছেন যারা!

সৈয়দ বাইজিদ ইমন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩০ ঘণ্টা, জুন ৯, ২০২২
আগুন নেভাতে গিয়ে নিভে গেছেন যারা! ছবি সংগৃহীত

চট্টগ্রাম: বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণে অনেকের হাত, পা, মাথার খুলি উড়ে গেছে। আগুনে পুড়ে কঙ্কাল হয়েছেন অনেকেই।

ডিপোতে সর্বপ্রথম আগুন নেভাতে আসা ফায়ার সার্ভিসের গাড়িটিও ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড থেকে রক্ষা পায়নি। সেটিও পুড়ে কঙ্কালের মতো হয়ে গেছে।

দেখে মনে হবে যুদ্ধক্ষেত্রের বিধ্বস্ত কোনো গাড়ি। এ গাড়িটিই কত শত জীবন বাঁচাতে ছুটে গিয়েছিলো কতবার! সেই গাড়িটির ধ্বংসাবশেষ দেখলো জাতি।

এ গাড়িতে করে যারা আগুন নেভাতে গিয়েছিলেন তাদের বেশিরভাগই জীবিত ফিরে আসেননি। অনেকের ফিরেছে ব্যাগে মোড়ানো মরদেহ।  

অগ্নিযোদ্ধাদের বেশিরভাগই লিডার আর ফায়ার ফাইটার। লিডাররা নেতৃত্ব দিয়ে ফায়ার ফাইটারদের আগুন নেভানোর কাজে সহযোগিতা করে। আগুনকে পোষ মানানোর কৌশলও রপ্ত করেছিলেন তারা। কিন্তু এবারের আগুন ছিল রহস্যে ঘেরা। তাতে মন্ত্রকৌশল কোনো কাজে আসেনি। আগুন কেড়ে নিয়েছে ৯ অগ্নিযোদ্ধার প্রাণ। এখনো নিখোঁজ আছেন তিনজন।

তাদেরই একজন শাকিল তরফদার। ক'দিন আগেই বাবা হয়েছেন তিনি। ছুটি নিয়ে বাড়ি ফিরবেন, সন্তানকে বুকে জড়িয়ে ধরে আদর করবেন। নতুন স্বপ্নের জাল বুনবেন। আরও কতো কিছুই তো ইচ্ছে ছিল শাকিলের। সব স্বপ্ন, সব ইচ্ছে তার সঙ্গেই ভস্মীভূত হলো সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোতে।

মো. রানা মিয়া। দুই বছর আগে ফায়ার ফাইটার পদে যোগ দেন। সীতাকুণ্ডেই ছিল তার প্রথম কর্মস্থল। পরিবারের বড় সন্তান হওয়ায় রানার কাঁধে চেপেছিল বাড়তি দায়িত্ব। তাই এই পেশায় যোগ দিয়েছিলেন বাধ্য হয়ে।

১৫ বছর ধরে আগুনে পানি ছিটিয়ে দুর্গতদের উদ্ধার করে দেশের সম্পদ রক্ষা করে আসছিলেন আলাউদ্দিন। ছয় বছরের সন্তানের ভবিষ্যৎ নিরাপদ করতে তিনি পেশাটিকে হয়তো ভালোও বেসেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজের জীবনই দিতে হলো তাঁকে।

পার্বত্য জেলা রাঙামাটির দুই লিডার সন্তান মিঠু দেওয়ান ও নিপন চাকমা। লিডার মানে তো নেতা। আর এরা নেতার মতোই লড়েছেন আগুনের সঙ্গে। জয়ী হতে পারেননি কিন্তু বীরের মতো সম্মান তো পেয়েছেন। তাদের মৃত্যুর খবরে নিস্তব্ধ পাহাড়ে কান্নার আহাজারি।  

রমজানুল হক রনি। দেড় বছর আগে যোগ দিয়েছেন অগ্নিযোদ্ধার পেশায়। মাত্র তিন মাস আগে সীতাকুণ্ড স্টেশনে বদলি হয়ে যান রনি। রনি ডিপোতে আগুন ধরার খবর পেয়ে দায়িত্বের তাড়নায় নিজস্ব ইউনিফর্ম না পরেই গিয়েছিলেন আগুন নেভাতে। ঘরে রেখে আসা স্ত্রী রূপার কাছে আর ফেরা হলো না তাঁর।

বাবা সামছুল হক যুদ্ধ করে স্বাধীন করেছেন দেশ। সেই যোদ্ধা বাবার সন্তান মনিরুজ্জামান জীবনযুদ্ধে লড়তে লড়তে নার্সিং অ্যাটেনডেন্ট পদে যোগ দেন ফায়ার সার্ভিসে। ক'দিন পর বাবা হওয়ার কথা ছিল তাঁরও। সন্তানের মুখে বাবা ডাকটি শোনা হলো না তাঁর।

সীতাকুণ্ডের অগ্নিকাণ্ডে যে ৯ জন নিহত হয়েছেন তাদের মধ্যে একজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। তবে প্রাথমিকভাবে তাকে সালাউদ্দিন কাদের বলে ধারণা করেছেন ফায়ার সার্ভিস।

নিখোঁজদের মধ্যে যাদের নাম পাওয়া গেছে তাঁরা হলেন- কুমিরা ফায়ার স্টেশনের লিডার মো. ইমরান হোসেন মজুমদার। তার বাড়ি চাঁদপুর। একই স্টেশনের ফায়ার ফাইটার শফিউল ইসলাম। তার বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলা। সীতাকুণ্ড ফায়ার স্টেশন ফায়ার ফাইটার মো. রবিউল ইসলাম। তার বাড়ি নওগাঁ জেলায়। একই স্টেশনের ফায়ার ফাইটার ফরিদুজ্জামান। তার বাড়ি রংপুর জেলায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, জুন ৯ , ২০২২
বিই/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।