ঢাকা, সোমবার, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২, ৩০ জুন ২০২৫, ০৪ মহররম ১৪৪৭

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ইকোনমিক লাইফ স্থগিত করাসহ ৬ দফা পণ্য পরিবহন মালিকদের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩:৩৬, জুন ৩০, ২০২৫
ইকোনমিক লাইফ স্থগিত করাসহ ৬ দফা পণ্য পরিবহন মালিকদের ...

চট্টগ্রাম: ঢালাওভাবে বাস-মিনিবাস, ট্রাক-কাভার্ডভ্যানের জন্য ইকোনমিক লাইফ (গাড়ি সর্বোচ্চ চালানোর মেয়াদ) নির্ধারণ না করে অঞ্চলভিত্তিক বাস্তবতা বিবেচনার দাবি জানিয়েছে বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণ ও পণ্য পরিবহন মালিক ফেডারেশন।

সোমবার (৩০ জুন) বেলা সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি ৬ দফা দাবি তুলে ধরে।

লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ফেডারেশনের আহ্বায়ক মোরশেদুল আলম কাদেরী। উপস্থিত ছিলেন সদস্য সচিব মো. হুমায়ুন কবির সোহেলসহ পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতারা।

বক্তারা বলেন, সরকার গত ১৯ জুন এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বাস-মিনিবাসের ক্ষেত্রে ২০ বছর ও ট্রাক-কাভার্ডভ্যানের ক্ষেত্রে ২৫ বছর মেয়াদ নির্ধারণ করেছে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে শুধু চট্টগ্রামেই প্রায় ৬ হাজার ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান, ৫ হাজার গণপরিবহন এবং সারাদেশে প্রায় ৮০ হাজার যানবাহন চলাচলের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। ফলে এসব গাড়ির সাথে জড়িত প্রায় পাঁচ লাখ শ্রমিক ও মালিক জীবিকা সংকটে পড়বে।

তারা বলেন, করোনা পরবর্তী অর্থনৈতিক মন্দা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং মধ্যপ্রাচ্যের চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে দেশে আমদানি নির্ভর খাতে খরচ বেড়েছে। তারমধ্যে জ্বালানি তেল ও যন্ত্রাংশের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিবহন খাত মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত।

বক্তারা দাবি করেন, সরকার অন্যান্য শিল্পে ভর্তুকি দিলেও পরিবহন খাতকে কোনো প্রণোদনা বা ছাড় দেয় না। অথচ এই খাত দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে খাদ্যদ্রব্য, শিল্পের কাঁচামালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

তারা বলেন, ঢাকার বাস্তবতা দিয়ে চট্টগ্রাম বা পার্বত্য এলাকার গাড়ি বাতিলের সিদ্ধান্ত হলে চলবে না। খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, রাঙামাটি, কাপ্তাই, চকরিয়া, বাঁশখালী, শুভপুর, রাউজান, নাজিরহাটসহ বিভিন্ন রুটে ব্যবহৃত গণপরিবহনগুলো বাতিল হলে ওইসব অঞ্চলে বিকল্প যানবাহন না থাকায় ভোগান্তি চরমে পৌঁছাবে।

চাঁদের গাড়ি, নসিমন-করিমনের মতো যানবাহন এখনও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ বাহন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, যা বাতিলের আগে বিকল্প নিশ্চিত করা জরুরি বলে মনে করে সংগঠনটি।

বক্তারা প্রশ্ন তোলেন, ১৯৫৩ সালে আনা রেলওয়ের পুরনো ডিজেল ইঞ্জিন দিয়ে সেবা দিলে সমস্যা নেই, কিন্তু বিআরটিএ’র ফিটনেসপ্রাপ্ত যানবাহন কেন বাতিল করা হবে? বিআরটিএ’র ফিটনেস সনদপ্রাপ্ত গাড়ি চলাচলের উপযুক্ত। অনেক পুরনো গাড়িও নতুন ইঞ্জিন বা পার্টস বদলে সম্পূর্ণ সচল থাকে। তাই ঢালাওভাবে গাড়ি বাতিল না করে গাড়ির অবস্থা বিবেচনায় জীবনকাল নির্ধারণ করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে পরিবহন মালিকরা অভিযোগ করেন, সরকারের একতরফা এই সিদ্ধান্ত একটি গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে এবং বেসরকারি কোম্পানির মাধ্যমে পরিবহন খাতকে জিম্মি করার আয়োজন। তাদের আশঙ্কা, এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রাম বন্দর ঘিরে প্রতিদিন ৬ হাজার গাড়ি চলাচল বিঘ্নিত হবে, যা দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

সংগঠনটির ৬ দফা দাবি: ১৯ জুনের  ইকোনমিক লাইফ প্রজ্ঞাপন ঢাকা মহানগর ব্যতীত দেশের অন্যান্য জেলার জন্য স্থগিত করতে হবে, গাড়ির আয়ুষ্কাল ও নীতিমালা প্রণয়নে বিভাগীয় পর্যায়ে পরিবহন মালিক প্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করতে হবে, বাণিজ্যিক মোটরযানের অগ্রিম আয়কর ও বিআরটিএর সেবা ফি পূর্বের ন্যায় বহাল রাখতে হবে, গাড়ির ফিটনেস কার্যক্রম প্রাইভেট কোম্পানির হাতে না দিয়ে বিআরটিএর সক্ষমতা বাড়িয়ে আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইনের বিতর্কিত ধারা ও অতিরিক্ত জরিমানার বিধান সংশোধন করতে হবে গাড়ির আয়ুষ্কাল নির্ধারণে অঞ্চলভিত্তিক প্রয়োজন, বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় রোধ, পণ্য ও যাত্রীর বাস্তবতা, আমদানিকারকদের রিপ্লেসমেন্ট শিডিউল এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বিবেচনায় নিতে হবে।

এসময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির সহ-সভাপতি একরামুল হক চৌধুরী, হুমায়ুন কবির সোহেল, কমিশনার নাজিম উদ্দিন আহমেদ, আজিজুল হক, সৈয়দ হোসেন, মো. কামাল উদ্দিন,  অলি আহমেদ, নুরুল ইসলাম চৌধুরী ও মোহাম্মদ শাহজাহান।

বিই/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।