চট্টগ্রাম: রাত পোহালেই পবিত্র কোরবানির ঈদ। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে শেষ মুহূর্তে জমজমাট চট্টগ্রামের পশুর হাটগুলো।
এবার চট্টগ্রাম মহানগর ও উপজেলার ২২৮টি স্থায়ী-অস্থায়ী পশুর হাট বসছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ব্যবস্থাপনায় ১৩টি স্থায়ী-অস্থায়ী হাট বসেছে। প্রায় প্রতিটি হাটে রয়েছে পর্যাপ্ত পশু। শেষ সময়ে দাম বেশ চড়া হওয়ায় ক্রেতারা চিন্তিত।
হাটে আসা প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষের চাহিদা ছোট আকারের গরু। ব্যাপারিরাও ছোট ও মাঝারি আকারের গরু বেশি নিয়ে এসেছেন। তবে আকার ছোট হলেও এসব গরুর দাম বেশি হাঁকছেন বিক্রেতারা। গো-খাদ্যের দাম ও পরিবহন খরচ বাড়ার কারণে ছোট গরুর দামও বেশি বলে জানান তারা।
চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আলমগীর বাংলানিউজকে বলেন, সাধারণত দুই মণ ওজনের গরু ছোট আকারের। দুই থেকে তিন মণ ওজনের গরু মাঝারি এবং এর ওপরের ওজনের গরু বড় আকারের। চট্টগ্রামে ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি। জোগানও রয়েছে।
নগরের বহদ্দারহাট এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী ও তার ছেলে রিয়াজুদ্দিন বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে নগরের সাগরিকা ও বিবির হাট গরুর বাজার ঘুরেছেন। শুক্রবার ভোরে বিবিরহাট থেকে কোরবানির গরু কিনেছেন ১ লাখ ১০ হাজার টাকায়।
মোহাম্মদ আলী বলেন, সামর্থ্য না থাকায় এবার এক গরু দিয়ে কোরবানি করবো। বাজারের বিভিন্ন পয়েন্টে থাকা বেশকিছু গরু দেখেছি। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে এক বাজার থেকে অন্য বাজার ঘুরে গরু কিনেছি।
কর্ণফুলী পশুর হাটে গরু কিনতে আসা ব্যবসায়ী নাছির উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। তাই একই ভবনের আরেক পরিবারের সঙ্গে এবার কোরবানি করতে ছোট গরু কিনতে এসেছি। বাজারে ছোট ও মাঝারি গরু পর্যাপ্ত থাকলেও দাম বেশি। গতবার যেসব গরু ৬০ থেকে ৭০ হাজারে কেনা গেছে, এবার তার দাম চাইছে ১ লাখ ২০ হাজারের ওপরে।
আরেক ক্রেতা জমির উদ্দিন বলেন, অনেক ছোট গরু দেখেও কিনতে পারিনি। কারণ গরু পছন্দ হলেও দাম বাজেটের চেয়ে বেশি। কোরবানি ঘনিয়ে এলেও দাম ছাড়ছেন না ব্যাপারিরা।
গরু ব্যাপারি মো. শামীম বলেন, বাজারে এবার ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা বেশি। তাই ছোট গরু বেশি এনেছি। তবে বেশিরভাগ ক্রেতা দাম শুনে চলে যাচ্ছেন। গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারণে এবার ছোট গরুর দাম কিছুটা বেশি।
নড়াইল থেকে ৮০টি গরু নিয়ে এসেছেন ব্যাপারি কাউসার আলী। এর মধ্যে ৩৫টি ছোট। গতবারের মতো এবারও মাঝারি ও ছোট গরুর চাহিদা বেশি। বিশেষ করে ৮০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা দামের গরুর বিক্রি বেশি। ক্রেতারা বলছেন, এবার গরুর দাম বেশি মনে হচ্ছে। যে গরু এক থেকে দেড় লাখ টাকা, ব্যাপারিরা সেটির দাম দিচ্ছেন দুই-আড়াই লাখ টাকা। তাই দাম কমে কি না আরও দেখবেন। তারপর গরু কিনবেন।
ব্যাপারিরা বলছেন, চট্টগ্রাম নগরের হাটগুলোতে বেচাবিক্রি পুরোপুরি জমে উঠেছে। লোকজনের কাজের ব্যস্ততাও কমেছে। তারা হাটে আসা শুরু করেছেন। বাজারে আসা কয়েকজন বিক্রেতার সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের। তারা বলেন, বাজারে ছোট গরুর ক্রেতার সমাগম থাকলেও বিক্রি কম। বেশিরভাগ ক্রেতা দরদাম করছে কেবল। গরুর লালন-পালন খরচ বেশি হওয়ায় সামান্য লাভে বিক্রি করা ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই।
চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, এবার স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত গবাদিপশুর সংখ্যা ৮ লাখ ৬০ হাজার ৮৮২টি। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৮ লাখ ৫২ হাজার ৩৫৯টি। ওই হিসেবে এবার ৮ হাজার ৫২৩টি বেশি গবাদিপশু উৎপাদিত হয়। কিন্তু এরপরও স্থানীয় উৎপাদনে চাহিদা মিটবে না। কারণ এবার চট্টগ্রামে কোরবানি পশুর সম্ভাব্য চাহিদা রয়েছে ৮ লাখ ৯৬ হাজার ২৬৯টি। অর্থাৎ চাহিদার বিপরীতে স্থানীয় উৎপাদন অনুসারে এবার ঘাটতি আছে ৩৫ হাজার ৩৮৭টি কোরবানির পশু। চট্টগ্রামে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বা হৃষ্টপুষ্ট কোরবানির পশুর মধ্যে গরুর সংখ্যাই বেশি। এবার মোট উৎপাদিত কোরবানি পশুর মধ্যে গরু আছে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৮১৩টি। এছাড়া ৬৪ হাজার ১৬৩টি মহিষ, ২ লাখ ৫১ হাজার ৭৪টি ছাগল এবং ৫৫ হাজার ৬৯৭টি ভেড়া রয়েছে।
স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পশুর মধ্যে নগরের পাঁচলাইশ থানা এলাকায় ২০ হাজার দুইটি, ডবলমুরিংয়ে ১০ হাজার এবং কোতোয়ালীতে চার হাজার ৩৩১টি গবাদিপশু হৃষ্টপুষ্ট করা হয়। এছাড়া সাতকানিয়া উপজেলায় ৪৮ হাজার ১২৪টি, চন্দনাইশে ৪৮ হাজার চারটি, আনোয়ারায় ৬৫ হাজার ২১১টি, বোয়ালখালীতে ৩১ হাজার ১৬০টি, পটিয়ায় ৭৮ হাজার ৭৯১টি, কর্ণফুলীতে ৩৩ হাজার ৬২৯টি, মীরসরাই উপজেলায় ৬০ হাজার ৭৮০টি, সীতাকুণ্ডে ৫৯ হাজার ২১৩টি, হাটহাজারীতে ৪৮ হাজার ২৮০টি, রাঙ্গুনিয়ায় ৫১ হাজার ৮১৪টি, ফটিকছড়িতে ৭৮ হাজার ৫৩০টি, লোহাগাড়ায় ৪০ হাজার ৬২টি, রাউজানে ৩৫ হাজার ৭০১টি, বাঁশখালীতে ৬২ হাজার এবং সন্দ্বীপে ৮৫ হাজার ২৫০টি গবাদিপশু রয়েছে।
বিই/টিসি