বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের চিকিৎসা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে বিসিবি। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন দেশে চিকিৎসার জন্য খেলোয়াড়দের পাঠাতে গিয়ে ভিসাজনিত জটিলতা আর অনিশ্চয়তায় পড়তে হয়েছে বোর্ডকে।
প্রতিটি ক্যাটাগরির ক্রিকেটারদের জন্য নির্দিষ্ট করা হবে চিকিৎসার গন্তব্য দেশ ও হাসপাতাল। গুরুতর চোট বা বিশেষ চিকিৎসার প্রয়োজন পড়লে নিয়ম ভেঙে অন্য দেশেও পাঠানো হবে ক্রিকেটারদের।
তবে মূল পরিকল্পনায় শীর্ষে থাকছে কাতারের বিশ্বখ্যাত এসপেটার হাসপাতাল, যেটি ফিফার স্বীকৃত মেডিকেল সেন্টার এবং আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির গবেষণা কেন্দ্র হিসেবেও পরিচিত। ২০০৯ সালে ফিফা একে ঘোষণা করে ‘মেডিকেল সেন্টার ফর এক্সিলেন্স’ আর ২০১৪ সালে আইওসি একে স্বীকৃতি দেয় চোট প্রতিরোধ ও ক্রীড়াবিদদের স্বাস্থ্য গবেষণার জন্য।
বিশ্বের বড় বড় ক্রীড়াবিদদের চিকিৎসার জন্য বহুবার আলোচনায় এসেছে এই হাসপাতাল। ২০২৩ সালে অস্ত্রোপচার করান নেইমার, চিকিৎসা নেন আনহেল দি মারিয়া, মো. ফারাহ, ইয়া ইয়া তোরের মতো বিশ্বখ্যাত ক্রীড়াবিদরা। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের জন্যও হাসপাতালটি নতুন নয়। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, অভিষেক দাস এবং আশিকুর জামান এর আগে এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
শুধু বিদেশে নয়, দেশের মাটিতেও ক্রিকেটারদের জন্য চিকিৎসা সুবিধা বাড়াতে চাইছে বিসিবি। এজন্য পরিকল্পনা হচ্ছে মিরপুরের একাডেমি ভবনে একটি ‘মিনি মেডিকেল ইউনিট’ স্থাপনের। বর্তমানে বিসিবির মূল ভবনে চিকিৎসা কার্যক্রম চলে, তবে ম্যাচ চলাকালে দুর্নীতিবিরোধী ইউনিটের বিধিনিষেধের কারণে সেখানে প্রবেশ করতে পারেন না খেলোয়াড়রা। নতুন মেডিকেল ইউনিট হলে জিম আর একাডেমি মাঠের কাছেই থাকবে পুনর্বাসনের সব ব্যবস্থা। এতে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া আরও সহজ ও কার্যকর হবে বলে মনে করছে বিসিবির মেডিকেল বিভাগ।
বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম ইতোমধ্যেই এসপেটার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। পরিকল্পনা চলছে, সেখান থেকে চিকিৎসক এনে স্থানীয় ফিজিওদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার। বিসিবির মেডিকেল বিভাগের প্রধান মনজুর আলম দেশের একটি গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ‘আমরা শুধু বিদেশে চিকিৎসা নয়, মিরপুরেই ক্রিকেটারদের প্রাথমিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে চাই। এজন্য আল্ট্রাসনোগ্রামসহ আধুনিক সব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করব। একই সঙ্গে এসপেটারের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের এনে স্থানীয় চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে। ’
সব মিলিয়ে নেইমারদের হাসপাতালে চিকিৎসা নেবে টাইগাররা—এমন খবর শুধু প্রতীকী নয়, বরং বাংলাদেশের ক্রিকেট চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য এক নতুন যুগের সূচনা। ক্রিকেটারদের ক্যারিয়ার দীর্ঘায়িত করা, চোট কমানো এবং পুনর্বাসন প্রক্রিয়াকে আরও বৈজ্ঞানিক করার লক্ষ্যে বিসিবির এই উদ্যোগকে অভিনব মোড় হিসেবে দেখা হচ্ছে।
আরইউ