ঢাকা, শনিবার, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০৭ জুন ২০২৫, ১০ জিলহজ ১৪৪৬

ক্রিকেট

দ. আফ্রিকা ছেড়ে নিউজিল্যান্ডে নতুন অধ্যায় শুরু ওয়াল্টারের

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪:৩৪, জুন ৬, ২০২৫
দ. আফ্রিকা ছেড়ে নিউজিল্যান্ডে নতুন অধ্যায় শুরু ওয়াল্টারের ছবি: সংগৃহীত

দুই মাস ধরে চলা গুঞ্জনটাই শেষ পর্যন্ত সত্যি হলো। দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় দলের কোচিং ছেড়ে অবশেষে নিউজিল্যান্ডের হেড কোচ হিসেবে দায়িত্ব নিলেন রব ওয়াল্টার।

তিন সংস্করণেই আগামী তিন বছরের জন্য ব্ল্যাকক্যাপসদের দায়িত্বে থাকবেন ৪৯ বছর বয়সী এই দক্ষিণ আফ্রিকান।

দক্ষিণ আফ্রিকার ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি দলের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় গত এপ্রিলে আচমকাই পদত্যাগ করেন ওয়াল্টার। তখন থেকেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে কানাঘুষা শুরু হয়, পারিবারিক কারণে তিনি নিউজিল্যান্ডের চাকরির দিকে ঝুঁকছেন। গ্যারি স্টেড যখন কিউইদের সাদা বলের দলের দায়িত্ব ছাড়ার ঘোষণা দেন, তখন জল্পনা আরও জোরাল হয়।

প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল, সংস্করণভিত্তিক কোচিং নীতিতে যাবে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট। তবে শেষ পর্যন্ত একক কোচের পথেই হেঁটেছে তারা। গ্যারি স্টেড বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, কোনো সংস্করণেই আর চুক্তি নবায়ন করছেন না তিনি। তার পরদিন অর্থাৎ আজ ওয়াল্টারের নাম ঘোষণা করে তিন সংস্করণের দায়িত্ব একাই তুলে দিল বোর্ড।

ওয়াল্টারের অভিজ্ঞতা এবং নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে তার সম্পর্ক এই নিয়োগের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে। খেলোয়াড় হিসেবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নাম না থাকলেও কোচিংয়ে তার পরিচিতি দীর্ঘ দিনের। বিশেষ করে নিউজিল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেটে তার সাফল্য ছিল নজরকাড়া। ওটাগো ভোল্টস ও সেন্ট্রাল স্ট্যাগসের কোচ হিসেবে একাধিক মৌসুমে দলকে টেনে নিয়েছেন শিরোপার খুব কাছাকাছি।

তার কোচিংয়ে সেন্ট্রাল স্ট্যাগস ফোর্ড ট্রফি ও প্লাঙ্কেট শিল্ড জিতেছে, রানার্স আপ হয়েছে আরও একটি মৌসুমে। নিউ জিল্যান্ড ‘এ’ দলের দায়িত্বও সামলেছেন একসময়। আন্তর্জাতিক ফ্র্যাঞ্চাইজি অভিজ্ঞতা আছে আইপিএলের দিল্লি ডেয়ারডেভিলস ও পুনে ওয়ারিয়র্সে সহকারী কোচ হিসেবে। দক্ষিণ আফ্রিকার ইস্টার্ন টাইটান্সের দায়িত্বে থাকার সময়ও নজর কেড়েছেন।

ওয়াল্টার পরিবারসহ অনেক আগেই থিতু হয়েছেন নিউজিল্যান্ডে। থাকেন নেপিয়ারের কাছে হক’স বেতে। কোচিংয়ের ব্যস্ততায় দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যে দৌড়ঝাঁপ করে হাঁপিয়ে উঠেছিলেন তিনি। তাই এবার সুযোগ পেয়েই সেই চাপ থেকে মুক্তি নিলেন।

দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে কোচিং অভিজ্ঞতাও কম নয়। তার অধীনে ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ ও ২০২৫ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেমিফাইনালে পৌঁছেছে দলটি। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও খেলেছে ফাইনাল। অথচ চুক্তির মেয়াদ ছিল আরও দুই বছরের বেশি।

তবে এবার তার চ্যালেঞ্জ হবে আরও গভীর। ইতিহাসের সবচেয়ে সফল কোচ গ্যারি স্টেডের উত্তরসূরি হিসেবে দায়িত্ব নিচ্ছেন ওয়াল্টার। গত সাত বছরে যেভাবে কিউই দলকে সামনের সারিতে নিয়ে এসেছেন স্টেড, সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখা তো বটেই, আরও এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যাশা থাকবে ওয়াল্টারের কাঁধে।

নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের এই নতুন অধ্যায়ে ওয়াল্টারের সামনে বেশ কিছু বড় আসর অপেক্ষা করছে। ২০২৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপ, দুটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ (২০২৬ ও ২০২৮), বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দেড় চক্র এবং সম্ভব হলে ২০২৮ লস অ্যাঞ্জেলস অলিম্পিকস। সবকিছুই পড়ছে এই মেয়াদের মধ্যে।

চ্যালেঞ্জটা তিনিও ভালো করেই জানেন। দায়িত্ব পাওয়ার পর দেওয়া প্রথম প্রতিক্রিয়ায় ওয়াল্টার বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই ব্ল্যাকক্যাপরা দারুণ এক দল হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। সেই দলের কোচ হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া সম্মানের। এই দলে অনেক প্রতিভাবান ক্রিকেটার ও কোচিং স্টাফ রয়েছেন। সামনের সময়ে যেসব বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা ও গুরুত্বপূর্ণ সিরিজ রয়েছে, সেগুলোর জন্য প্রস্তুত হওয়া রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা হবে। ’

আগামী মাস থেকেই শুরু হচ্ছে তার কোচিং অধ্যায়। প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট, জিম্বাবুয়ে সফর। যেখানে দুটি টেস্ট খেলবে নিউজিল্যান্ড। এরপর ঘরের মাঠে একটি ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলবে তারা, প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে ও ওয়াল্টারের পুরোনো দল দক্ষিণ আফ্রিকা।

সব মিলিয়ে এক নতুন শুরু। কিন্তু ভক্ত-সমর্থকদের চাওয়া একই। সাফল্যের গল্প যেন আগের মতোই চলতে থাকে। এখন দেখার, ওয়াল্টারের হাতে নতুনভাবে কতটা উড়তে পারে কিউইরা।

আরইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।