শনিবার সন্ধ্যায়, ট্রেন্ট ব্রিজে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে ব্যাট করতে নেমে শোয়েব বশিরের বলে ক্যাচ দিয়ে আউট হন সিকান্দার রাজা। তার সতীর্থরা যখন ইনিংস ব্যবধানে হার নিয়ে হতাশায় ডুবছিলেন, তখন রাজার সত্যিকারের যাত্রা কেবল শুরু।
ঠিক ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে, তার পিএসএল দল লাহোর কালান্দার্স মাঠে নামবে ফাইনাল খেলতে। এর আগেও, প্লে-অফ নিশ্চিত করতে তিনি ইংল্যান্ড থেকে উড়ে এসেছিলেন এক ম্যাচের জন্য, এরপর আবার ফিরে গিয়েছিলেন টেস্ট খেলতে। এবারও সেই একই আত্মনিবেদন।
লাহোর যাত্রার নাটকীয়তা
টেস্ট শেষ হতেই লাহোর কালান্দার্স রাজাকে দ্রুত ফেরত আনার পরিকল্পনা করে। একজন বন্ধুর গাড়িতে চেপে তিনি যান বার্মিংহামে, যেখান থেকে সবচেয়ে দ্রুত ফ্লাইট পাওয়া যাবে। বিজনেস ক্লাস না পেয়ে ইকোনমি ক্লাসে উড়ে যান দুবাই, সেখানে ছয় ঘণ্টার অপেক্ষা, এরপর গাড়িতে আবুধাবি গিয়ে লাহোরগামী ফ্লাইটে ওঠেন।
এত কিছুর পর যখন তিনি গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে পৌঁছান, তখন লাহোরের অধিনায়ক শাহিন আফ্রিদি টস জিতে জানিয়ে দেন—“সিকান্দার রাজা আমাদের একাদশে আছেন। ”
রাজার অনুভব: ‘শুধু বলটা দেখো’
ম্যাচ শেষে রাজা বলেন, “আমি পুরোপুরি মানসিক ও শারীরিকভাবে বিধ্বস্ত ছিলাম। মাথায় কিছুই ছিল না, শুধু বলটা দেখছিলাম। কী হবে, কী করব—কিছু ভাবিনি। যেদিকে বল যাচ্ছে, সেদিকে সেরা শটটাই খেলতে চেয়েছি। ”
স্মরণীয় পারফরম্যান্স
বল হাতে নিজের দ্বিতীয় ডেলিভারিতেই রাইলি রুশোকে আউট করেন রাজা। তবে, তার সত্যিকারের মহিমা প্রকাশ পায় শেষদিকে, যখন লাহোর ম্যাচ থেকে কার্যত ছিটকে পড়তে চলেছিল।
২০ বলে ৫৭ রান দরকার, মোহাম্মদ আমির বল করছেন, ঠিক এমন সময়ে রাজা স্ট্রাইকে। প্রথম বলে মিডউইকেটে চার, পরের বলে দারুণ এক ছক্কা। এরপর কিছু সময় স্ট্রাইক পাননি, তবে কুশল পেরেরা দুর্দান্ত ব্যাটিং চালিয়ে যান।
শেষ ওভারে লাহোরের দরকার ছিল তিন বলে ৮ রান। ফাহিম আশরাফ নিখুঁত ইয়র্কার করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু রাজা ছিলেন তৈরি—কভার পয়েন্টের ওপর দিয়ে বিশাল ছক্কা। পরের বলে আরও এক চার—আর এরসঙ্গে গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে আতশবাজি, উল্লাস আর কাঁধে রাজাকে উঁচিয়ে ধরা।
‘এই জয়ের পেছনের গল্পটাই সবচেয়ে বড়’
রাজা বলেন, “শেষ তিনটা ম্যাচ আমরা ‘নকআউট’ খেলেছি। এই দলের চেয়ে বেশি প্রস্তুত আর কেউ ছিল না। দুই বছর আগেও আমরা শেষ বলে জিতেছিলাম। তবে এবারেরটা আলাদা, কারণ এই জয়ের পেছনের গল্পটাই অবিশ্বাস্য। ”
“পরশু ২৫ ওভার বল করেছি, গতকাল ২০ ওভার ব্যাট করেছি। বার্মিংহামে ডিনার, দুবাইয়ে ব্রেকফাস্ট, আবু ধাবিতে লাঞ্চ, আবার পাকিস্তানে ডিনার। এটাই হয়তো একজন পেশাদার ক্রিকেটারের জীবন—আর আমি গর্বিত, কৃতজ্ঞ। ”
এমএইচএম