ঢাকা: দীর্ঘ দুই দশক পর গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ৬ ও ৭ অক্টোবর বিবিসি বাংলায় প্রচারিত দুই পর্বের সাক্ষাৎকারটি সম্প্রচারের পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি প্রশংসায় ভাসছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সাক্ষাৎকার তাকে একজন পরিণত, দূরদর্শী এবং মানবিক রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে, যিনি ব্যক্তিগত বেদনা, প্রতিহিংসা কিংবা আবেগের ঊর্ধ্বে উঠে দেশের গণতন্ত্র ও জনগণের সার্বভৌমত্বকে জীবনের সর্বোচ্চ ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছেন। তারা বলছেন, এই সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে তারেক রহমানের সংযমী ভাষা, রাষ্ট্রনায়কোচিত পরিমিত বোধ, দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে নির্মোহ ভাবনা এবং ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডিকে রাজনৈতিক পুঁজি না করার মতো বিরল গুণাবলী।
দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে লন্ডনে নির্বাসিত তারেক রহমান বিবিসিতে দেওয়া তার সাক্ষাৎকারের প্রথমেই জানিয়েছেন, দীর্ঘ এ সময় তার শারীরিক উপস্থিতি বিদেশে থাকলেও, মন ও মানসিকতায় সবসময় তিনি বাংলাদেশের সঙ্গেই ছিলেন। তিনি বলেন, ‘ফিজিক্যালি হয়তো আমি এই দেশে (লন্ডনে) আছি, বাট মন মানসিকতা সবকিছু মিলিয়ে তো আমি গত ১৭ বছর ধরে বাংলাদেশেই রয়ে গিয়েছি। ’ রাজনীতি সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, তার এই বক্তব্য মাতৃভূমির প্রতি গভীর টান এবং রাজনৈতিক দায়িত্ববোধের ইঙ্গিত বহন করে।
নিপীড়নের দুঃসহ স্মৃতি পেরিয়ে সংযত প্রত্যাবর্তন:
বিবিসির এই সাক্ষাৎকারে গণমাধ্যম থেকে তারেক রহমানের দীর্ঘদিনের দূরত্ব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি জানান, এটা তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত ছিল না, বরং তৎকালীন স্বৈরাচার সরকারের সময় কোর্ট থেকে আদেশ দিয়ে তার কথা বলার অধিকারকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এমনকি প্রেসক্লাবে কথা বলতে গিয়েও তাকে ‘ফেরারী’ আখ্যা দিয়ে বাধা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এই প্রতিকূলতা তাকে দমাতে পারেনি। তার ভাষায়, ‘আমি কথা বলেছি, হয়তো আপনারা তখন কথা নিতে পারেননি অথবা শুনতে পারেননি। ইচ্ছা থাকলেও ছাপাতে পারেননি, হয়তো প্রচার করতে পারেননি। কিন্তু আমি বলেছি, আমি থেমে থাকিনি। ’ এ সময় তিনি জানান, ওই সময়গুলোতে তিনি সামাজিক মাধ্যমসহ বিভিন্ন পন্থায় দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন।
তারেক রহমানের সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন বিবিসির সম্পাদক মীর সাব্বির
এই দীর্ঘ নির্বাসন ও বাধা-বিপত্তির পর তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনের ইঙ্গিত ছিল সাক্ষাৎকারের এক উজ্জ্বল দিক। তিনি বলেন, ‘কিছু সঙ্গত কারণে হয়তো ফেরাটা হয়ে ওঠেনি এখনো। ইনশআল্লাহ দ্রুতই ফিরে আসবো। ’ তার এই কথা দেশের ও দলের মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে বলে মনে করছেন রাজনীতি সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, আসন্ন নির্বাচনের আগেই তার দেশে ফেরার ইতিবাচক মনোভাব প্রমাণ করে, তিনি জনগণের প্রত্যাশিত নির্বাচনের সময়ে তাদের পাশেই থাকতে চান।
‘আমি’ ‘আমরা’ নয়, ‘জনগণ’:
এই সাক্ষাৎকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো তারেক রহমানের ভাষা ব্যবহার। হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ও সাবেক শিবির নেতা মির্জা গালিব মন্তব্য করেছেন, “আমি, আমার দল, আমার দেশ ইত্যাদি ফার্স্ট পারসন শব্দাবলী প্রায় বাদ দিয়ে তিনি ‘জনগণ’, ‘দেশ’ ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করেছেন, যা এক ধরনের অন্তর্ভুক্তিমূলক ও জনমুখী ভাষা। ”
তারেক রহমান ব্যক্তিগত কষ্ট বা অর্জনকে বড় করে না দেখে, বারবার জনগণের অধিকার, দেশের স্বার্থ এবং গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলেছেন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে তারেক রহমানকে ‘একমাত্র মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে দলের কতিপয় নেতা আখ্যা দিলেও, তিনি বিনয়ের সঙ্গে এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘আমি অবশ্যই এই জুলাই আন্দোলনে আমাকে কখনোই মাস্টারমাইন্ড হিসেবে দেখি না। ’ তার মতে, এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড কোনো দল বা কোনো ব্যক্তি নয়, এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ।
তিনি বেদনা প্রকাশ করে জানান, এই আন্দোলনে শহীদদের মধ্যে ৬৩ শিশুও শহীদ হয়েছে এবং প্রায় ৩০ হাজার মানুষ বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বা পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ‘এই আন্দোলনের ক্রেডিট দল-মত নির্বিশেষে বাংলাদেশের জনগণের, কোনও একটি রাজনৈতিক দলের নয়। ’ তারেক রহমানের মতে, এখন সকলের উচিত হবে, সরকার ও রাজনৈতিক দল নির্বিশেষে, শহীদ পরিবার এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো, তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করা এবং তাদের আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানানো।
আন্দোলনের ক্রেডিট দল-মত নির্বিশেষে বাংলাদেশের জনগণের উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আন্দোলনে মাদরাসার ছাত্ররা ছিলেন। আমরা দেখেছি গৃহিনীরা পর্যন্ত রাস্তায় নেমে এসেছেন সন্তানের পেছনে। কৃষক, শ্রমিক, সিএনজি চালক, ছোট দোকান কর্মচারী বা দোকান মালিক থেকে আরম্ভ করে গার্মেন্টস কর্মীরা নেমে এসেছিলেন। আমরা দেখেছিলাম সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্মচারীরা নেমে এসেছিলেন এই আন্দোলনে। এই আন্দোলনের ক্রেডিট দল-মত নির্বিশেষে বাংলাদেশের জনগণের, কোনও একটি রাজনৈতিক দলের নয়। ’
এই বক্তব্য একজন প্রকৃত রাষ্ট্রনায়কের দূরদর্শিতা ও বিনয়ের পরিচায়ক বলে মনে করছেন রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টরা। তিনি আবেগের রাজনীতি নয়, বরং বাস্তব পরিবর্তনের কথা বলেছেন বলে মনে করছেন তারা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই বক্তব্যের মাধ্যমে তারেক রহমান প্রমাণ করেছেন, রাজনীতি মানে শুধু স্মৃতিচারণ নয়, জনগণের আস্থা জাগানো। তিনি দীর্ঘ নির্বাসনের পরও ফিরে এসেছেন নেতা হিসেবে, ভিকটিম হিসেবে নয়।
নির্বাসন, নির্যাতন ও সংযমী নেতা:
দীর্ঘ নির্বাসিত জীবন, ভাইয়ের অকাল মৃত্যু, মায়ের অসুস্থতা এবং নিজের ওপর অকথ্য নির্যাতনের পরেও তারেক রহমান ‘আমি’, ‘আমার বাবা’, ‘আমার মা’- এর মতো শব্দ পরিহার করে ‘জনগণ’, ‘দেশ’, ‘দেশের স্বার্থ’ এবং ‘আমরা’ শব্দ ব্যবহারে মনোযোগী ছিলেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই দৃষ্টান্ত একজন পরিপক্ক রাষ্ট্রনায়কের বৈশিষ্ট্য, যিনি ব্যক্তিগত বেদনার ঊর্ধ্বে উঠে বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থকে দেখেন।
আওয়ামী লীগের আমলে তার পরিবারের ওপর দুর্বিষহ নির্যাতন বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি যখন এখানে (লন্ডনে) আসি, আমার ছোট ভাইকে আমি রেখে এসেছিলাম। আমি যখন এই দেশে আসি আমার সুস্থ মাকে আমি রেখে এসেছিলাম। একটি ঘর রেখে এসেছিলাম। যেই ঘরে আমি এবং আমার ছোট ভাই বড় হয়েছি। যেই ঘরে আমার বাবার স্মৃতি ছিল। যেই ঘরে আমাদের দুই ভাইয়ের সন্তানরা জন্মগ্রহণ করেছিল। যেই ঘরে আমার মায়ের বহু স্মৃতি ছিল। সেই স্মৃতিগুলোকে ভেঙে চুড়ে ধুলায় মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। যে ভাইকে আমি রেখে এসেছিলাম সেই এখন আর নেই। যেই সুস্থ মাকে রেখে এসেছিলাম সেই সুস্থ মা এখন সুস্থ নেই। শুধু অসুস্থই নন, উনার উপরে মানসিক এবং শারীরিক নির্যাতনও করা হয়েছে। ’
নিজের নির্যাতিত হওয়ার ঘটনা বর্ণনা করে তারেক রহমান বলেন, ‘আমি শারীরিকভাবে নির্যাতিত হয়েছি। যেই নির্যাতনের চিহ্ন এখনো কখনো কখনো আমাকে সহ্য করতে হয়। জেল জুলুম খেটেছি আমি। বিভিন্নভাবে মিথ্যা অপপ্রচারের শিকার হয়েছি আমি। সবকিছুর ভেতর দিয়েই আমি পেরিয়ে এসেছি। ’
তিনি তার পরিবারের ওপর অবর্ণনীয় নির্যাতন, ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোর অকাল মৃত্যু, মায়ের অসুস্থতা এবং নিজের ওপর চালানো নিপীড়নের কথা উল্লেখ করলেও, তা আবেগপ্রবণ হয়ে করেননি। বরং তিনি এই ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডিকে রাজনৈতিক পুঁজি হিসেবে ব্যবহার না করে দেশের বৃহত্তর স্বার্থকে সামনে এনেছেন। এখানেই তিনি ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা, যিনি প্রায় প্রতিটি বড় বক্তৃতার শুরুতেই ১৯৭৫ সালের পারিবারিক ট্র্যাজেডির প্রসঙ্গ এনে ‘স্বজনপ্রীতির আবেগের রাজনীতি’ তৈরি করেন।
সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল এই সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘এই সাক্ষাৎকারে এমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ দিক উঠে এসেছে, যা শুধু রাজনৈতিক নয়, বরং দার্শনিক ও নৈতিক প্রশ্নেরও জন্ম দেয়। তারেক রহমান নিজের ১৭ বছরের রাজনৈতিক ইতিহাস এমনভাবে বর্ণনা করেছেন, যা হৃদয় স্পর্শ করে। মা, ভাই, পরিবার, স্মৃতি—সবকিছুর ওপর দিয়ে যে নির্যাতন গেছে, তা তিনি সংযমী ভাষায় বলেছেন। তার বক্তব্যে কোনো ক্রোধ নেই, আছে মমতা ও পরিমিত বোধ। তার বক্তব্যে শুনে আমার চোখে পানি এসে গিয়েছিল। সবচেয়ে বড় কথা, তিনি ব্যক্তিগত প্রতিশোধের কথা বলেননি। ’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এ কে এম মহিউদ্দিন বলেন, ‘সাক্ষাৎকারে তিনি ভাই আরাফাত রহমান কোকো ও পরিবারের কষ্টের কথা উল্লেখ করলেও সেটা ছিলো খুবই সংক্ষিপ্তভাবে। তবে তিনি সেই আবেগকে রাজনৈতিক পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করেননি। এখানেই তারেক রহমান ফ্যাসিস্ট হাসিনার থেকে আলাদা। ’
নেটিজেনরাও এই পার্থক্যটি বিশেষভাবে আলোচনা করছেন, যেখানে তারেক রহমানের বক্তব্যে দেশের ভবিষ্যৎ, গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকার প্রাধান্য পেয়েছে, ব্যক্তিগত বেদনার নয়।
আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামী প্রসঙ্গ:
তারেক রহমান তার সাক্ষাৎকারে সরাসরি আওয়ামী লীগকে দল হিসেবে নিষিদ্ধ করার কথা বলেননি। বরং তিনি আইনের শাসনের ওপর জোর দিয়েছেন। সাংবাদিক মাসুদ কামাল এই প্রসঙ্গে তারেক রহমানের সতর্ক দৃষ্টিভঙ্গির প্রশংসা করে বলেছেন, “তিনি অত্যন্ত সতর্ক ছিলেন। বলেছেন- ‘যদি দল হিসেবে তারা অন্যায় করে থাকে, তাহলে দেশের আইন অনুযায়ী তার বিচার হবে। ’ তিনি নিষিদ্ধের কথা বলেননি, বলেছেন আইনের শাসনের কথা- এটাই তার পরিণত রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি। ”
তারেক রহমান বিশ্বাস করেন, ‘যে দল বা ব্যক্তি মানুষ হত্যা করে, খুন-গুম করে, দেশের সম্পদ লুট করে- জনগণ তাদের সমর্থন করতে পারে বলে আমি মনে করি না। ’ এই বক্তব্যে পরোক্ষভাবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলোর বিচার জনগণের বিবেচনার ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কেও তারেক রহমান তার উদার গণতান্ত্রিক মনোভাবের প্রকাশ ঘটিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের স্বীকৃত আইন-কানুনের মধ্যে থেকে রাজনীতি করার অধিকার সকলের আছে এবং বিএনপি বহুদলীয় রাজনীতিতে বিশ্বাসী। ’ ৭১ সালে জামায়াতের বিতর্কিত ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘৭১ সালে কোন রাজনৈতিক দল যদি তাদের কোনও বিতর্কিত ভূমিকা থেকে থাকে, তাহলে তাদের জবাব তারাই দেবেন। ওটা তো আর আমি দিতে পারবো না। ’ এই মন্তব্য জামায়াতের অতীতের দায় তাদের নিজেদেরই বহন করতে হবে, বিএনপির নয়—এই বার্তা দেয়।
আসন্ন নির্বাচন এবং বিএনপির নির্বাচনী কৌশল:
ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের সিদ্ধান্তকে তারেক রহমান স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আনন্দিত যে দেরিতে হলেও সরকার জিনিসটি উপলব্ধি করতে পেরেছে। ’ তিনি মনে করেন, যত দ্রুত নির্বাচন হবে, তত দ্রুত দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। বিএনপির নির্বাচনী কৌশল প্রসঙ্গে তারেক রহমান জানান যে, বিএনপি প্রায় ৬৪টি রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে নিয়ে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল এবং এখন রাষ্ট্র পুনর্গঠনেও সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে চায়।
তিনি উল্লেখ করেন, ২০১৬ সালে বিএনপি প্রথমে ২১ দফা, পরে ২৭ দফা এবং অবশেষে অন্যান্য দলের মতামত নিয়ে ৩১ দফা রূপরেখা ঘোষণা করেছে। এই জোটবদ্ধ রাজনীতিকে তিনি দেশের জন্য ইতিবাচক হিসেবে দেখেন। এ সময় জানান, জামায়াতে ইসলামী যদি আলাদা জোট গঠন করে, সেটিকে বিএনপি কোনো চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে না, বরং নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে স্বাগত জানাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘ইলেকশন হলে তো ইলেকশনে প্রতিযোগিতা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকতেই পারে। এতে উদ্বেগের কী আছে?’
মনোনয়ন প্রক্রিয়া ও তৃণমূলের গুরুত্ব:
মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় অতীতের পেশিশক্তি, টাকার প্রভাব বা পারিবারিক বিষয় বিবেচনার অভিযোগ অস্বীকার করে তারেক রহমান বলেন, বিএনপি সবসময় জনসম্পৃক্ত ও সক্ষম প্রার্থীকে অগ্রাধিকার দেবে। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের দলের এমন একজন ব্যক্তিকেই নমিনেশন দিতে চাইবো, যে ওই এলাকার সমস্যা সম্পর্কে সচেতন আছে, যার সাথে ওই এলাকার মানুষের সম্পৃক্ততা আছে, ওঠাবসা আছে, যে ওই এলাকার মানুষের সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম। ’ তিনি জোর দেন যে, তৃণমূলের মতামত এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সমর্থন রয়েছে এমন ব্যক্তিকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে। এটি তৃণমূলকে শক্তিশালী করা এবং জনসম্পৃক্ত নেতৃত্ব গড়ে তুলতে তার অঙ্গীকার।
তারেক রহমানের নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও প্রধানমন্ত্রীর পদ:
তারেক রহমান নিশ্চিত করেছেন যে, তিনি আসন্ন নির্বাচনে একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে অংশ নেবেন। তিনি বলেন, ‘আমাকে আসতেই হবে। স্বাভাবিকভাবেই মাঠেই ইনশআল্লাহ থাকবো আমি। ’ তবে প্রধানমন্ত্রী পদের প্রত্যাশী হওয়া না হওয়ার সিদ্ধান্ত তিনি সরাসরি নিজের ওপর নেননি, বরং এটিকে বাংলাদেশের জনগণের সিদ্ধান্ত বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘এটি সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশের জনগণ। ’ দলও এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বলে তিনি জানান। এই বিনয়ী ও জনমুখী অবস্থান তারেক রহমানের পরিপক্কতার পরিচায়ক বলে মনে করছেন রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টরা।
জামায়াতে ইসলামীর অন্যতম শীর্ষ আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির তারেক রহমানের সুচিন্তিত শব্দচয়নকে প্রশংসা করে বলেছেন, ‘সাক্ষাৎকারে তারেক রহমান অত্যন্ত সুচিন্তিতভাবে শব্দচয়ন করেছেন। ’ তিনি আরও বলেন, ‘তারেক রহমান অত্যন্ত গাইডেড কথা বলেছেন। শব্দগুলো একটা থেকে আরেকটা আলাদা করে বলার চেষ্টা করেছেন। কেউ যেন চাইলেও এক শব্দকে আলাদাভাবে ব্যবহার করে ভিন্ন অর্থ তৈরি করতে না পারে। বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির মধ্যে তারেক রহমান একজন। ফলে তিনি যে কথা বলবেন, যে স্পিরিট শো করবেন, সেটা জাতির জন্য শিক্ষণীয়।
খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক ভূমিকা:
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য ও রাজনৈতিক ভূমিকা প্রসঙ্গে তারেক রহমান গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, স্বৈরাচারী সরকার তাকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে জেলে নিয়েছিল এবং চিকিৎসার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছিল। তারেক রহমান বিশ্বাস করেন যে, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই জন প্রত্যাশিত নির্বাচনে, ‘উনার শারীরিক সক্ষমতা যদি এলাও করে উনাকে নিশ্চয়ই উনি কিছু না কিছু ভূমিকা রাখবেন। ’
বিএনপির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব ও পারিবারিক প্রভাব:
বিএনপির নেতৃত্বে পরিবারের প্রভাব নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, রাজনীতিতে পরিবারের প্রভাব নয়, বরং জনগণের সমর্থন ও সাংগঠনিক ক্ষমতাই আসল। তিনি নিজের উদাহরণ দিয়ে বলেন যে, তিনি রাজনীতিতে আসার পর শারীরিক নির্যাতন, জেল-জুলুম, মিথ্যা মামলা এবং অপপ্রচারের শিকার হয়েছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘রাজনীতি পরিবারকরণ হয় না। এটি সমর্থনের ভিত্তিতে হয়। ’ তার স্ত্রী বা কন্যা ভবিষ্যতে রাজনীতিতে আসবেন কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা পরিস্থিতি বলে দেবে। ’
পুরনো বিএনপি বনাম নতুন প্রেক্ষাপট:
২০০১-২০০৬ সালের বিএনপি সরকারের সঙ্গে বর্তমান বিএনপির পার্থক্য প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, এই ১৯ বছরে বাংলাদেশ ও বিশ্ব অনেক পরিবর্তিত হয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারী এবং তথ্যপ্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যাপক প্রসার মানুষের চিন্তা-ভাবনা ও মনোজগতকে ভিন্নভাবে প্রভাবিত করেছে। তিনি জানান, তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও কর্মসূচি মানুষের বেটারমেন্ট এবং অর্থনৈতিক উন্নতির ওপর গুরুত্ব দেবে। এটি প্রমাণ করে যে, বিএনপি নতুন প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে পরিবর্তিত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে প্রস্তুত।
দুর্নীতির অভিযোগ ও সুশাসনের প্রতিশ্রুতি:
বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ, বিশেষ করে দুর্নীতির সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে সমালোচনার জবাবে তারেক রহমান যুক্তি দেন যে, ২০০১ সালে প্রকাশিত টিআইবির সূচকটি মূলত ১৯৯৬-২০০১ সালের আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ের দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরেছিল। তিনি দাবি করেন, ২০০১-২০০৬ সালের বিএনপি সরকারের সময়ে দুর্নীতির সূচক পর্যায়ক্রমিকভাবে নেমে এসেছিল।
তিনি স্বীকার করেন, দুর্নীতি একটি সামাজিক ব্যাধি এবং এটি দূর করতে সময় লাগবে। তিনি ভোটারদের আশ্বস্ত করেন যে, যদি বিএনপি সরকার গঠনের সুযোগ পায়, তাহলে তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে যাতে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে সম্মানের সাথে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। তারেক রহমান আরও প্রতিশ্রুতি দেন যে, বিএনপি সরকার গঠন করলে দলের কোনো নেতাকর্মী যদি অনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়, তবে দল তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে এবং দেশের আইন অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের কাজ করবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক ও প্রত্যাশা:
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক কেমন, এমন প্রশ্নে তারেক রহমান জানান যে, এটি একটি রাজনৈতিক বিষয়, ব্যক্তিগত নয়। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রথম থেকে যে কথাটি বলেছি যে, আমরা চাই, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সফল হোক। ’ তিনি এই সরকারের মূল দুটি লক্ষ্যের কথা উল্লেখ করেন: কিছু প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধন এবং একটি প্রত্যাশিত, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও স্বাধীন নির্বাচন। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, সরকার তাদের ওপর অর্পিত প্রধান দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবে। লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের পর ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের কথা এসেছিল। এই বৈঠকে সৌজন্যমূলক কথাবার্তা ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, বিশেষ করে জনগণ সুযোগ দিলে বিএনপি কী কী পদক্ষেপ নেবে তা নিয়ে।
এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মূল্যায়ন:
এক-এগারো বা সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘এক-এগারোর সরকার তো একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একটি সরকার ছিল। ’ তিনি অভিযোগ করেন, সেই সরকার দেশের গণতান্ত্রিক ভিত্তি ভেঙে দিতে চেয়েছিল এবং রাজনীতিকে বিরাজনীতিকরণ করে দেশকে এক অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিতে চেয়েছিল। তিনি এই সময়কে দেশের গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর বলে আখ্যায়িত করেন।
‘সবার আগে বাংলাদেশ’ বিএনপির কূটনীতির মূলনীতি:
বিএনপি সরকার গঠন করলে কূটনীতির মূলনীতি কী হবে, জানতে চাইলে তারেক রহমান দৃঢ়ভাবে বলেন, ‘বিএনপির মূলনীতি একটাই- সবার আগে বাংলাদেশ। ’ তিনি স্পষ্ট করেন যে, তার জনগণ, তার দেশ এবং তার সার্বভৌমত্বকে অক্ষুণ্ণ রেখে, এর স্বার্থকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বাকি সব কূটনৈতিক সম্পর্ক পরিচালিত হবে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ স্লোগানের সঙ্গে এর তুলনা করা হলে তিনি বলেন, ‘না, ওদেরটা ওরা বলেছে, আমি বাংলাদেশি। আমার কাছে বাংলাদেশের স্বার্থ বড়, আমার কাছে বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থ বড়। ’
বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে তারেক রহমান তার ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ নীতিটি আবারও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এখানে কোনো নির্দিষ্ট দেশের বিষয় নয়, বরং তার কাছে তার দেশের মানুষের স্বার্থই সবার আগে। তিনি বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই আমি আমার পানির হিস্যা চাই। অবশ্যই আমি দেখতে চাইনা না যে, আরেক ফেলানী ঝুলে আছে। অবশ্যই আমরা এটা মেনে নেবো না। ’
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর শেখ হাসিনা দিল্লিতে অবস্থান করছেন এবং ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের যে শীতলতা দেখা গেছে, তা নিয়ে তারেক রহমান মন্তব্য করেন, ‘এখন তারা যদি স্বৈরাচারকে সেখানে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের বিরাগভাজন হয়, সেখানে তো আমাদের কিছু করার নেই। এটা বাংলাদেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তাদের সাথে শীতল থাকবে। সো, আমাকে আমার দেশের মানুষের সাথে থাকতে হবে। ’ অর্থাৎ, তিনি জনগণের ইচ্ছাকেই এখানে প্রাধান্য দেবেন।
সংস্কারের প্রস্তাবনা ও বিএনপির ‘নোট অব ডিসেন্ট’:
সংস্কারের বিষয়ে যেখানে ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলোকে ‘জুলাই সনদ’ হিসেবে নির্বাচনের আগে আইনি ভিত্তি দেওয়া হবে না কি নির্বাচিত সংসদ তা করবে, এই বিতর্ক প্রসঙ্গে তারেক রহমান স্পষ্ট করেন যে, বিএনপি কোনো ‘হাইড অ্যান্ড সিক’ করছে না। তিনি নেপালের উদাহরণ দিয়ে বলেন, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলো নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই সিদ্ধান্ত নেবেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, বিএনপি মনে করে যে, যেগুলো শুধুমাত্র আইন দিয়ে করলে হয়ে যায়, সেগুলো হয়ে যাক। যেগুলোর সাংবিধানিক এনডোর্সমেন্ট লাগবে, সেগুলো আমরা মনে করি যে, নির্বাচিত সংসদ হওয়ার পরে সেখানে গ্রহণ করাটাই ভালো হবে। কারণ, নির্বাচিত সংসদকে বাদ দিয়ে কিছু করলে তা ভবিষ্যৎতের জন্য একটি খারাপ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। ’
সংস্কারের বিষয়ে ‘এক ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা বা দলের প্রধান থাকতে পারবেন না’ এমন প্রস্তাব নিয়ে বিএনপির ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বা দ্বিমত পোষণ প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, বিএনপি সবসময়ই সংস্কারের পক্ষে ছিল। তিনি মনে করিয়ে দেন যে, অতীতে যখন স্বৈরাচার ছিল, তখন বিএনপিই প্রথম ‘এক ব্যক্তি দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না’ এমন প্রস্তাব উত্থাপন করেছিল। তিনি বিএনপির দ্বিমত পোষণকে গণতন্ত্রের অংশ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। তারেক রহমান বলেন, বিএনপি ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিলে সেটি সমস্যা, অর্থাৎ বিএনপিকে এগ্রি (সম্মত) করতে হবে সবার সাথে, তাহলে ঠিক আছে। কিন্তু বিএনপি যদি কোনোটার সাথে একমত না হয়, তাহলে বেঠিক। এটি তো গণতন্ত্র হলো না। তার মতে, গণতন্ত্রের অর্থই হলো বিভিন্ন মত থাকবে এবং সব বিষয়ে ঐকমত্য না হয়ে কিছু বিষয়ে দ্বিমত থাকতেই পারে।
জুলাই সনদ বনাম ৩১ দফা ও বাস্তবায়নের উপায়:
বিএনপির ৩১ দফা এবং জুলাই সনদের মধ্যে কোনটি অগ্রাধিকার পাবে, জানতে চাইলে তারেক রহমান জানান, প্রথমে ঐকমত্য কমিশনে যে বিষয়গুলোতে সকলে মিলে একমত হয়েছে, সরকার গঠনের সুযোগ পেলে সেগুলোতে জোর দেওয়া হবে। এর পাশাপাশি, ৩১ দফায় যে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতিগুলো রয়েছে, সেগুলোরও বাস্তবায়ন করা হবে। তিনি বলেন, ‘ওটা তো আমাদের রাজনৈতিক কমিটমেন্ট। এটাও যেমন পলিটিক্যাল কমিটমেন্ট, ওটাও আমাদের পলিটিক্যাল কমিটমেন্ট। ’
সোশ্যাল মিডিয়া ও মিমের প্রতি মনোভাব:
তারেক রহমানকে নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে অনেক আলোচনা, মিম এবং কার্টুন তৈরি হয়। ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ মিমটি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তারেক রহমান জানান, ‘আমি এনজয় করি বেশ। ’ তিনি নিয়মিত এসব দেখেন বলেও জানান। তবে তিনি সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহারকারীদের কিছু সচেতনতার বিষয়ে গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, সোশ্যাল মিডিয়া দ্রুত যোগাযোগ স্থাপনে সাহায্য করলেও, এর অপব্যবহারও হতে পারে। তার মতে, প্রত্যেক মানুষের মতামত প্রকাশের অধিকার আছে, কিন্তু মত প্রকাশের ফলে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কি না, তা বিবেচনা করা উচিত। দ্বিতীয়ত, ডিসইনফরমেশন বা মিসইনফরমেশনের বিষয়ে সতর্ক থাকার এবং ‘ফ্যাক্ট চেক’ করার গুরুত্বের ওপর তিনি জোর দেন।
তারেক রহমানের এই সাক্ষাৎকারটি দীর্ঘদিনের নীরবতা ভেঙে তার রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনকে এক নতুন মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তার মার্জিত ও পরিমিত বোধ, ব্যক্তিগত বেদনা, নিপীড়ন ও প্রতিহিংসার ঊর্ধ্বে উঠে জনগণের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়া এবং দূরদর্শী রাষ্ট্রনায়কোচিত দৃষ্টিভঙ্গি তাকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। এই সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. জাহেদ উর রহমান বলেন, ‘তারেক রহমান বাংলাদেশের একজন ডিফেক্টো লিডার । যেহেতু তারেক রহমান বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, তাই উনার বক্তব্যকে আমরা ক্রিটিক্যালি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করবো। তবে পুরো সাক্ষাৎকারটি ম্যাচিউরড ছিল। প্রশ্নগুলোর স্মার্ট উত্তর দিয়েছেন। ’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সাক্ষাৎকার কেবল একটি রাজনৈতিক বক্তব্য নয়, বরং গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার এবং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার এক দৃঢ় অঙ্গীকার এবং তা তারেক রহমানকে একজন অভিজ্ঞ, সংযমী এবং প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
এসবিডব্লিউ/এজে