ঢাকা, শনিবার, ১৮ আশ্বিন ১৪৩২, ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ১১ রবিউস সানি ১৪৪৭

বাংলানিউজ স্পেশাল

গতি বেড়েছে ঢাকার সড়কে, বড় চ্যালেঞ্জ অটোরিকশা

আবাদুজ্জামান শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:৩৯, অক্টোবর ২, ২০২৫
গতি বেড়েছে ঢাকার সড়কে, বড় চ্যালেঞ্জ অটোরিকশা

রাজধানী ঢাকার সড়ক মানেই যানজটের যন্ত্রণা। একসময় এ শহরে গাড়ি চলাচলের গড় গতি ছিল ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার।

কিন্তু জনসংখ্যা ও যানবাহনের চাপ বাড়ার পাশাপাশি অব্যবস্থাপনার কারণে সেই গতি নেমে আসে মাত্র পাঁচ কিলোমিটারে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকা নগরবাসীর জন্য রোজকার এক বিভীষিকা হয়ে দাঁড়ায়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন, ডাইভারশন এবং নিয়ন্ত্রণমূলক কিছু পদক্ষেপ নেওয়ায় পরিস্থিতির খানিকটা উন্নতি হয়েছে বলে দাবি করছে ট্রাফিক বিভাগ। বর্তমানে যান চলাচলের গড় গতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ কিলোমিটারে।

যদিও দুই কোটির বেশি মানুষের ঢাকা পুরোপুরি যানজটমুক্ত করা বেশ কঠিন। তবু নগরবাসী মনে করছে, সঠিক ব্যবস্থাপনা, নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ ও জনসচেতনতায় সড়কে যে উন্নতি ঘটছে, সেটা আরও ভালো হওয়া সম্ভব। এক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। প্রথম দিকে এই অটোরিকশা অলি-গলিতে চললেও এখন মূল সড়কও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অননুমোদিত বাহনগুলো। অবশ্য বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে হুটহাট আন্দোলন ও সড়ক অবরোধও যানজটের নেপথ্যে বিষফোঁড়া হয়ে আছে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ২০২২ সালের রমজানে পরিচালিত এক জরিপ অনুসারে, প্রথম রোজায় অর্থাৎ ৩ এপ্রিল ঢাকার মূল সড়কগুলোতে গাড়ির গড় গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় চার দশমিক আট কিলোমিটার। অথচ ২০০৫ সালে একই ইনস্টিটিউটের আরেক জরিপ অনুসারে, সেসময় ঢাকা শহরে ঘণ্টায় গাড়ির গড় গতি ছিল প্রায় ২১ কিলোমিটার। সবশেষ ট্রাফিক পুলিশের তথ্য অনুসারে, বর্তমানে ঢাকার সড়কে যানবাহনের গড় গতি প্রায় ১১ কিলোমিটার

ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় যে পরিবর্তন
নগরে যানবাহনের গতি কমে গিয়েও খানিকটা বেড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, অনেক সড়কে গাড়ির গতিপথ পরিবর্তন (ডাইভারশন) চালু হয়েছে। চত্বর দিয়ে সরাসরি প্রবেশ বন্ধে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়েছে এবং এর মধ্য দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে যানবাহন। আগে যেখানে এক সড়ক থেকে অপর সড়কে সোজাসুজি চলাচল করা যেতো, বর্তমানে তা সম্ভব নয়।  

যেমন—এখন বাংলামোটর থেকে শাহবাগ হয়ে সোজাসুজি প্রধান সড়ক পার হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না, পাশাপাশি ডানে মোড় নিয়েও এলিফ্যান্ট রোডের দিকে যাওয়ার ব্যবস্থা নেই। শাহবাগ মোড়ে একপাশে সড়কের মাথায় কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে বন্ধ করা হয়েছে। এতে যানবাহনকে বারডেম হাসপাতালের পাশে বামে ঢাকা ক্লাবের পাশে রাস্তায় গিয়ে ইউটার্ন নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে হয়, পাশাপাশি এলিফ্যান্ট রোডসহ সেদিকের অন্যান্য রাস্তায়ও যেতে হয়। এমনভাবে ঢাকায় প্রায় ৭০টি জায়গায় ট্রাফিক পুলিশ যানজট নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ডাইভারশনের ব্যবস্থা করেছে।

ব্যবসায়ী ফরহাদ রেজা প্রায়ই গাড়ি নিয়ে ব্যবসার কাজে বিভিন্ন জায়গায় যান। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সড়কে যানজটের কারণে গাড়ি পেছন দিকেও নেওয়া যাচ্ছে না, সামনেও নেওয়া যাচ্ছে না, এমন অভিজ্ঞতাও হয় মাঝেমধ্যে। তবে ট্রাফিক পুলিশ সড়কে যানজট নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ায় কিছুটা লাঘব হয়েছে যানজট। যেমন—রামপুরা, খিলগাঁও, মালিবাগ, রামপুরা মহানগর প্রজেক্ট, হাজীপাড়া, চৌধুরীপাড়াসহ আশেপাশের এলাকায় গলি থেকে যানবাহন নিয়ে প্রধান সড়ক পার হওয়ার কোনো নিয়ম নেই। গাড়ি নিয়ে গলি থেকে সড়কে উঠেই নিয়মমাফিক ডানে অথবা বামে কিছুদূর গিয়ে ইউটার্ন নিয়ে অপর রাস্তায় উঠে তারপরে নির্দিষ্ট জায়গায় যেতে হবে। পুরো ঢাকা শহরের প্রায় জায়গায় মোড়ে মোড়ে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা যায় ট্রাফিক পুলিশকে। যানজট নিয়ন্ত্রণের এই ব্যবস্থাপনা সবাই মানছে অথবা মানতে বাধ্য হচ্ছে।

ভিক্টর পরিবহনের বাসচালক শাহিন আহমেদ জানান, তিনি সদরঘাট থেকে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করেন। তার অভিজ্ঞতায়, ডাইভারশন ব্যবস্থা এখন অনেকটা কার্যকর হয়েছে। অধিকাংশ চালক নিয়ম মানছেন।  

সুলতানা কামাল দুই কন্যা সন্তানের মা। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমার দুটি সন্তানকেই স্কুলে নিতে হয়। রামপুরা মহানগর প্রজেক্ট থেকে রিকশায় দুই বাচ্চাকে নিয়ে স্কুলের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হয়। মেইন রাস্তা গেলে আগে যেভাবে সরাসরি রাস্তা পার হয়ে ডান দিকে যাওয়া যেত, বর্তমানে যাওয়া যাচ্ছে না। সড়কে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া। অনেক দূর গিয়ে পরে ইউটার্ন নিয়ে আবার একই রাস্তার বিপরীতে গিয়ে যেতে হয়।

এদিকে যথেচ্ছ রাস্তা পারাপারেও বিভিন্ন জায়গায় নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ দেখা গেছে। কারওয়ান বাজার ও শাহবাগ মোড়ের এলাকাগুলোতেও কাঁটাতারের ব্যারিকেডের কারণে যেনতেনভাবে মানুষজনের রাস্তা পারাপারও অনেক কমে গেছে। তবে প্রগতি সরণি, রামপুরাসহ কিছু এলাকার সড়কে এমন সমস্যা রয়েই গেছে। পাশে ফুটওভার ব্রিজ থাকলেও লোকজনকে নিজ দিয়েই হাত উঁচু করে রাস্তা পার হতে দেখা যায়।

সড়কে বিশৃঙ্খলার নেপথ্যে আন্দোলন ও অটোরিকশা
এদিকে ট্রাফিক পুলিশ নানা পদক্ষেপের মাধ্যমে সড়কের পরিস্থিতির উন্নতি করতে চাইলেও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও হুটহাট আন্দোলন-সড়ক অবরোধের কারণে পূর্ণ সফল মিলছে না। অনেক ক্ষেত্রে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা সড়কে দুর্ঘটনারও কারণ হচ্ছে। আর যত্রতত্র সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন-বিক্ষোভ তৈরি করছে মারাত্মক যানজট ও ভোগান্তির।

ব্যবসায়ী ফরহাদ রেজা ভোগান্তির বিষয়গুলো তুলে ধরে বলেন, বর্তমানে যানজটের বড় কারণ হচ্ছে—যখন তখন অনুমতিবিহীনভাবে যে কেউ সড়কে নেমে অবরোধ করে দাবি আদায়ের চেষ্টা করছে। এতে করে সড়কে হঠাৎ তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এসব অবরোধের কারণে সড়কে যানজটের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। তবে বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে যানবাহন নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা চোখে পড়ার মতো। যদিও পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে সড়কে মহামারির মতো যানজট লেগেই থাকতো। ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়ি নিয়ে এক জায়গায় বসে থাকতে হতো। নষ্ট হতো কর্মঘণ্টা, হতো আর্থিক ক্ষতি।

বাসচালক শাহিন আহমেদও মনে করেন, সড়ক অবরোধই এখন সবচেয়ে বড় যানজটের কারণ। তাছাড়া বর্তমানে সড়কে আরেকটি ঝামেলার কারণ হচ্ছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বা ইজিবাইক। অননুমোদিত এসব বাহনের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। বর্তমানে অনেক দুর্ঘটনার কারণ হচ্ছে প্রধান সড়ক দিয়ে অটোরিকশার দাপুটে চলাচল। অধিকাংশ অটোরিকশা চালকের কোনো ট্রেনিং নেই, লাইসেন্স নেই। সামনের দিকে পা উঁচু করে ইঞ্জিনচালিত গাড়ির সঙ্গে তারা প্রতিযোগিতা করে থাকে। অবশ্যই তাদের নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।  

ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তারা যা বলছেন
ঢাকা মেট্রোপলিটন ট্রাফিক বিভাগের সংশ্লিষ্টদের ভাষ্যে, পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে ঢাকা শহরে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে এত পদক্ষেপ ছিল না। তাছাড়া রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে ট্রাফিক নিয়ম কার্যকর করা কঠিন ছিল। সেই সময়কার অনেক নেতা ডাইভারশন বা ইউটার্ন ব্যবহার করতে চাইতেন না। ট্রাফিক পুলিশ তাদের রাস্তা ফাঁকা করে দিত চাপের কারণে। বর্তমানে সেই চাপ তেমন আর নেই। ট্রাফিক বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে। ঢাকার যানজট আগের তুলনায় অনেকটাই কমেছে। ট্রাফিক ডাইভারশন ও নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা অনেকটাই কার্যকর হচ্ছে।  

ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তারাও মনে করেন, বর্তমানে ঢাকায় যানজটের পেছনে অটোরিকাশা ও সড়ক অবরোধ বড় সমস্যা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অবরোধের কারণে যানজট ছড়িয়ে পড়ে। আর অনেকবার ডিএমপির পক্ষ থেকে অটোরিকশাগুলোকে প্রধান সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হলেও কিছুই করতে পারেনি। সরকারি নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে সহিংস আন্দোলন করে তারা সড়কেই থেকে গেছে।

সম্প্রতি দুটি বড় পরীক্ষা এসএসসি ও এইচএসসির সময় পরীক্ষার্থীদের নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে পৌঁছানোর বিষয়টি তুলে ধরে তারা বলছেন, এই পরীক্ষার সময় কেন্দ্রে যেতে শিক্ষার্থীদের যানজটে বসে থাকতে হয়নি। শিক্ষার্থীরা মোটামুটি যানজটমুক্তভাবে পরীক্ষা কেন্দ্রে সঠিক সময়ে গিয়েছে। ট্রাফিক বিভাগ অক্লান্ত পরিশ্রম করে সেই কাজ সফল করেছে।

সদ্য দায়িত্ব পাওয়া ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন) ও সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার (ডিএমপি, ট্রাফিক) মো. সরওয়ার বলেন, ২০০৫-০৬ সালের দিকে ঢাকা শহরে সড়কে যানবাহনের গতি আনুমানিক ২১ কিলোমিটার ছিল। বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন কারণে পরিস্থিতির অবনতি হয়। ২০২৪ সালে যান চলাচলের সেই গতি নেমে আসে ৫ কিলোমিটারে। ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ অক্লান্ত পরিশ্রম করে বিভিন্ন জায়গায় যানজট লাঘবের জন্য গাড়ির গতিপথ পরিবর্তন (ডাইভারশন) এবং ডিজিটাল মামলা করাসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এছাড়া যতটুকু সম্ভব প্রধান সড়ক দিয়ে যেনতেনভাবে ও অসতর্কভাবে পথচারীরা রাস্তা পারাপার হতে না পারে, সেগুলো নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রধান সড়কে ব্যাটারি চালিত রিকশা নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। এই কারণেই বর্তমানে ঢাকা শহরে যানবাহনের গড় গতি বেড়ে ১০-১১ কিলোমিটার হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, যানজট নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ঢাকায় ৭০টি জায়গায় ডাইভারশন করা হয়েছে। কার্যকরী ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টের জন্য মোডিফিকেশনকৃত ইন্টারসেকশন উদ্যোগগুলো কার্যকর হয়েছে এবং প্রায় সব যানবাহন চালক এই নির্দেশনা মেনে চলাচল করছে।

ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় সড়কে যারা দায়িত্বে ছিলেন তাদের কাছ থেকে জানা গেছে, ওই সময় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় হস্তক্ষেপ করেছেন বিভিন্ন গলির বা এলাকার চুনোপুটি যুবলীগ, ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ নেতাসহ শীর্ষ পর্যায়ের মন্ত্রী-এমপিরা। তারা সড়কে গাড়ি নিয়ে বের হলেই কোনো ডাইভারশন অথবা ইউটার্ন, সড়কের কোনো নিয়মনীতি মানতেন না। তারা যেসব সড়ক দিয়েই যেতেন, কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশকে ডাইভারশন সরিয়ে সড়ক পরিষ্কার করে দেওয়ার জন্য তারা রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগাতেন।

বর্তমানে সড়কে দায়িত্বপ্রাপ্তরা বলছেন, এখন সড়কে যাতায়াতের জন্য জনগণকে যেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে বসে থাকতে না হয়, তারা যেন যানবাহন নিয়ে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারে—এটাই আমাদের কর্মের চ্যালেঞ্জ। যতটা সম্ভব ট্রাফিক বিভাগ যানজটমুক্ত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।

বিজ্ঞানভিত্তিক সমাধান প্রয়োজন, বলছেন বিশেষজ্ঞ
যানজট নিরসনে ট্রাফিক বিভাগ অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। এটা প্রশংসার যোগ্য উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিশ্রমের পাশাপাশি বিজ্ঞানভিত্তিক পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন জরুরি।

বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ড. এম শামসুল হক বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে গুগল ম্যাপে ঢাকার সড়কে লাল দাগের আধিক্যই প্রমাণ করে যে যানজট এখনো প্রকট। ইউটার্ন যেমন মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের মতো প্রশস্ত সড়কে কার্যকর, তেমনি অনেক সরু সড়কে তা যানজট আরও বাড়িয়ে তোলে। বিশেষ করে পিক আওয়ারে সড়কের প্রকৃত চিত্র বিশ্লেষণ করাই জরুরি—ভোরবেলায় যানজটমুক্ত সড়ক দেখে সিদ্ধান্ত নিলে বাস্তবতা প্রতিফলিত হয় না।

তিনি বলেন, ট্রাফিক বিভাগের মূল কাজ হলো যানবাহনের নিয়ন্ত্রণ। কিন্তু আজও সড়কে অবৈধ পার্কিং, ভাঙাচোরা ও অনুমোদনহীন যানবাহন পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি। মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও ফ্লাইওভার থাকা সত্ত্বেও যানজট কমছে না, কারণ বিজ্ঞানভিত্তিক নীতিমালা অনুসরণ করা হচ্ছে না।

‘উন্নত দেশগুলোতে দেখা যায়, ছোট ব্যক্তিগত গাড়িকে পারমিট দেওয়া হয় না বা দীর্ঘ সময় ও উচ্চ ব্যয়ে দেওয়া হয়, যাতে মানুষের আগ্রহ কমে যায়। তারা নাগরিকদের উৎসাহিত করে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহারে। অথচ আমাদের দেশে বিআরটিএ কিছু অর্থের বিনিময়ে সহজেই পারমিট দিয়ে দেয়, যা সড়কের ধারণক্ষমতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ’

এই বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ট্রাফিক বিভাগের পরিশ্রম তখনই ফলপ্রসূ হবে, যদি তারা সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে বোঝাতে পারে—সড়কে বিজ্ঞানভিত্তিক নীতিমালা ছাড়া সুফল সম্ভব নয়। অবৈধ গাড়ির সংখ্যা শত শত, মাঝে মাঝে কিছু ড্যাম্পিং হলেও তা যথেষ্ট নয়। সড়কের তুলনায় গাড়ির চাপ বেশি হলে বিজ্ঞান কাজ করবে না। অতএব, শুধু ট্রাফিক বিভাগ নয়—সরকারের সংশ্লিষ্ট সব বিভাগকে সমন্বিতভাবে বিজ্ঞানভিত্তিক পরিকল্পনায় এগিয়ে আসতে হবে, তাহলেই ঢাকার যানজট সমস্যার টেকসই সমাধান সম্ভব।

এজেডএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।