ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ আষাঢ় ১৪৩২, ১৯ জুন ২০২৫, ২২ জিলহজ ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক বয়কট করা জামায়াতের অভিমান ভাঙলো যেভাবে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২:১৪, জুন ১৯, ২০২৫
ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক বয়কট করা জামায়াতের অভিমান ভাঙলো যেভাবে বৈঠক শেষে কথা বলেছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: লন্ডনে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর দেওয়া যৌথ ঘোষণার প্রতিবাদে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ থেকে সরে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

 মঙ্গলবার (১৭ জুন) অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় পর্যায়ের বৈঠকে জামায়াতের নেতাদের আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তারা উপস্থিত হননি।

দলটির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, ওই ঘোষণায় জামায়াতকে উপেক্ষা করা হয়েছে বলে তারা মনে করেন। সেই প্রতিক্রিয়ায় সংলাপ বয়কটের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।  

বিষয়টি নিশ্চিত করে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের চলমান সংলাপে তারা থাকছেন না।

এ প্রসঙ্গে দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, মঙ্গলবারের বৈঠকে তারা ‘অন প্রোটেস্ট’ অংশ নেননি। তাকে বৈঠকে অংশ নেবেন কিনা, প্রশ্ন করা হয়। উত্তরে আযাদ বলেন, আমরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবো বৈঠকে যাবো কিনা।

মঙ্গলবারের বৈঠকে অনুপস্থিত থাকার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, কমিশনের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের পর নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের যে ঘোষণা দিয়েছেন, সেটি আমরা গ্রহণ করতে পারছি না। আমরা আশা করেছিলাম, লন্ডন থেকে ফিরে তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসে বিষয়টি ব্যাখ্যা করবেন।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের একটি সূত্র জানায়, প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের লন্ডন সফর এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে যৌথ ঘোষণার পর জামায়াতের মধ্যে ‘উপেক্ষিত’ হওয়ার বোধ তৈরি হয়। এই ‘অভিমানের’ কারণেই তারা বৈঠকে অংশ নেয়নি।

নাখোশ জামায়াতের সেই অভিমান ভেঙেছে। বুধবার দলটির শীর্ষ নেতারা ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে অংশও নিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক মহলে চলছে আলোচনা। প্রশ্নও উঠেছে, কীভাবে বয়কটের অবস্থান থেকে সরে এসে বৈঠকে বসলো জামায়াত বা কীভাবে দলটিকে বৈঠকে আনা হলো?

জানা গেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা জামায়াতকে টেলিফোন করেছিলেন। তিনি বৈঠকে নিরপেক্ষ থাকার আশ্বাস দেন। আর সেকারণেই অভিমান ভাঙে জামায়াতের।  

বুধবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে যোগ দিয়ে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের প্রস্তাবকে সমর্থন করে জামায়াত। পাশাপাশি, রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতিকে এনসিসির বাইরে রাখার পরামর্শ দেয়। রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়ানোর প্রস্তাবেও সমর্থন জানায় দলটি।

রাজধানীর ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে সংলাপ শুরু হয়। জামায়াতের নেতারা এতে অংশ নিতে এলে তাদের হাসিমুখে স্বাগত জানান অন্য রাজনৈতিক দলের নেতারা। কেউ কেউ তাদের সঙ্গে করমর্দন করেছেন, কেউ কোলাকুলিও করেন।  

মিলনায়তনের দরজার সামনে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার জামায়াতের প্রতিনিধিদলের নেতা সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরকে শুভেচ্ছা জানান। তারা হাসিমুখে করমর্দন করেন। পরে তারা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। প্রধান উপদেষ্টা বিশেষ সহকারী মনির হায়দারও জামায়াতের নায়েবে আমিরের সঙ্গে করমর্দন করেন, শুভেচ্ছা জানান।

সংলাপ শুরু হলে একে একে কথা বলতে শুরু করেন রাজনৈতিক নেতারা। জামায়াতের নেতারা কথা বলার কিছু সময় পর ‘অভিযোগ’ তুলে সংলাপ ওয়াকআউটের ঘোষণা দেয় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণফোরামসহ কয়েকটি দলের প্রতিনিধিরা। তাদের ভাষ্য, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে ‘জামায়াত নেতাদের বেশি কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়েছে’।  

ঘটনাটি তখন ঘটে যখন জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের বক্তব্য শেষ করেন ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দীন আহমেদ বক্তব্য শুরু করেন। প্রথমে গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান হৈ চৈ করে সংলাপস্থল থেকে বের হয়ে যান। তিনি উঁচু আওয়াজে বলতে থাকেন, ‘এখানে কিসের সংলাপ হচ্ছে? কার সঙ্গে সংলাপ করবো? তারা যা ইচ্ছা তা-ই করছে। ’

পরে অবশ্য কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার তাদের সম্মেলনে ফেরান। এ সময় সিপিবি সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, জামায়াতে ইসলামীর তিনজন কথা বলেছেন। আমাদের একজন কথা বলতে গেলে তাকে বাধাগ্রস্ত করা হয়। আমরা প্রতিবাদ করেছি। উনারা সেটা নোট নিয়েছেন। তাই আমরা সংলাপে ফিরে যাচ্ছি।

এসব ঘটনার পর সংলাপ চলাকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ করেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি বলেন, লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বৈঠকে নির্বাচনের সময় নির্ধারণে জামায়াতে ইসলামীর আপত্তি নেই। আপত্তি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের যৌথ বিবৃতিতে। প্রধান উপদেষ্টা ও তারেক রহমানের বৈঠককে আমরা ওয়েলকাম জানিয়েছি। ওখানে নির্বাচনের তারিখ নিয়ে তিনি যে কথা বলেছেন, সেটাতেও আমাদের তেমন কোনো আপত্তি নেই। আমাদের প্রস্তাবনায় ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলের সময়সীমা ছিল। ডিসেম্বর হলেও আমাদের প্রস্তাবের ভেতর থাকতো, ফেব্রুয়ারিতেও আছে, এপ্রিলে হলেও থাকতো।

তিনি আরও বলেন, কিন্তু আমরা খুব বিস্মিত হয়ে দেখলাম একটি দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে তারা যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। এ দেশে ১০০টিরও বেশি রাজনৈতিক দল আছে। তাহলে তো এমন কালচার তৈরি হবে— উনি (প্রধান উপদেষ্টা) যাদের সঙ্গেই কথা বলবেন, জয়েন্ট স্টেটমেন্ট দিতে হবে। এই যৌথ বিবৃতিতে আমাদের আপত্তি। এতে অনেক রাজনৈতিক দলই বিব্রত হয়েছে।

সামগ্রিক বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বাংলানিউজকে বলেন, লন্ডনের বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতি আমাদের কাছে ভালো লাগেনি। আমাদের দৃষ্টিতে এটা পক্ষপাত মূলক আচরণ বলে মনে হয়েছে। ফলে মঙ্গলবারের বৈঠকে আমরা অংশ নিইনি। পরে প্রধান উপদেষ্টা আমাদের ফোন করে নিরপেক্ষ থাকার আশ্বাস দেন। তার ভিত্তিতে আমরা আজকের সংলাপে অংশ নিয়েছি।  

টিএ/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।