ঢাকা, শুক্রবার, ৭ আষাঢ় ১৪৩২, ২০ জুন ২০২৫, ২৩ জিলহজ ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

ইডিসিএলে থামেনি দুর্নীতি-নিয়োগ বাণিজ্য

পিংকি আক্তার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১:৫১, জুন ১৯, ২০২৫
ইডিসিএলে থামেনি দুর্নীতি-নিয়োগ বাণিজ্য

এসেনসিয়াল ড্রাগস্ কোম্পানি লিমিটেডের (ইডিসিএল) দুর্নীতি নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ থাকছে প্রথম পর্ব

দেশের একমাত্র ওষুধ প্রস্তুতকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান এসেনসিয়াল ড্রাগস্ কোম্পানি লিমিটেড- ইডিসিএল, যা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। আওয়ামী সরকারের আমল থেকেই নানা কারণে প্রতিষ্ঠানটি সমালোচিত সেখানকার কর্মকর্তাদের কর্মকাণ্ডের জন্য।

বিশেষ করে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মোটা অঙ্কের অবৈধ আর্থিক লেনদেন থেকে শুরু করে টেন্ডার বাণিজ্য, স্বজনপ্রীতি, অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, নিম্নমানের ওষুধ উৎপাদন এবং অর্থ লোপাটের মতো গুরুতর অভিযোগ প্রতিষ্ঠানটিকে বিতর্কিত করেছে। বিভিন্ন সময়ে দুদকের অভিযানে তার প্রমাণও মিলেছে।

সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ ফ্যাসিস্টমুক্ত হলেও এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানিতে এখনও চলছে আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তাদের দাপট। গত কয়েকমাস ধরে প্রতিষ্ঠানটিতে ছাঁটাই কার্যমক্রম চলছে নতুন এমডি সামাদ মৃধার ছত্রছায়ায়। এ পর্যন্ত কোম্পানি থেকে ছাঁটাই করা হয়েছে সাড়ে চারশরও বেশি কর্মীকে। আর এ ছাঁটাই নিয়ে চলছে বিতর্ক। কারণ নতুন এমডির মাধ্যমেই চলছে নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা দুর্নীতি ও অপকর্ম।  

এমডি সামাদ মৃধা

২০১৪ সালে ইডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান আওয়ামীপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) নেতা এহসানুল কবির। দুদকে ৪৭৭ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। শুরুতে দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেলেও ১০ বছর টানা এই পদে ছিলেন তিনি। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অবস্থা বেগতিক বুঝতে পেরে ২ অক্টোবর তিনি ইস্তফা দেন। এরপরই ইডিসিএলের ১৮৫তম বোর্ড সভার অনুমোদনক্রমে মো. সামাদ মৃধাকে এই পদে বসানো হয়। জানুয়ারিতে আমেরিকা থেকে দেশে এসে এমডি পদে যোগ দেন দ্বৈত নাগরিক যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্টধারী সামাদ মৃধা, যিনি ৫ আগস্টের পর হঠাৎ করে বনে যান বিএনপির রাজনৈতিক কর্মী।

নতুন বাংলাদেশে ইডিসিএল দুর্নীতিমুক্ত করতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তাকে ডেকে এনে নিয়োগ দেওয়া হয়। অথচ সেই তিনিই অনিয়ম দুর্নীতিতে মেতে উঠেছেন। এরইমধ্যে তার বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ জমা পড়েছে। তার দুর্নীতি তদন্তে কমিটি করেছে মন্ত্রণালয়। শিগগিরই সে কমিটি কাজ শুরু করবে।

নতুন এমডি সামাদ মৃধা যোগ দেওয়ার চারদিনের মধ্যেই নিজ ক্ষমতাবলে আপন ভাতিজা নাজমুল হুদাকে নিয়োগ দেন সিনিয়র অফিসার ও ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে। এর তিনদিনের মাথায় তাকে ডেপুটি ম্যানেজার হিসেবে পদোন্নতি দেন। এ নিয়োগের বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কিছু জানে না।  

এমডি সামাদ মৃধার আপন ভাতিজা ও নিক্সন চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী নাজমুল হুদা (গোল চিহ্নিত)

জানা গেছে, নাজমুল আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। শেখ হাসিনার আমলে শেখ পরিবারের আত্মীয় নিক্সন চৌধুরীর জন্য তার ভোট চাওয়ার ছবি এখন ঘুরছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তবে এ বিষয়ে নাজমুলের কাছে জানতে চাইলে তিনি নানা অজুহাত দেখান। আর এ নিয়োগের বিষয়ে এমডি সামাদ মৃধার বক্তব্য পরিষ্কার। তিনি বলেন, আর্থিক লেনদেনের জন্য চাই বিশ্বস্ত কাছের লোক। তাই আপন ভাতিজাকে নিয়োগ দিয়েছি।  

এরপর একই মাসে তিনি অতিরিক্ত ডিআইজি মো. নাসিরুল ইসলামের আপন ভাতিজা শাফায়াত হোসেনকে এমডি সেকশনে অফিসার পদে নিয়োগ দেন। শাফায়াত নিয়মিত ডিআইজির গাড়িতে করে অফিসে আসেন বলে জানিয়েছেন কোম্পানির কর্মীরা। এই নিয়োগের ব্যাপারেও বেখবর মন্ত্রণালয়। জানা যায়, ডিবির নাসিরের সঙ্গে দহরম মহরম থেকেই এই নিয়োগ।  

ছাঁটাইয়েও টাকা! 
কোম্পানির ঢাকা প্ল্যান্টে ২৭ ফেব্রুয়ারিতে ১২৫ ক্যাজুয়াল কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়। পরে ৩০ জনের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়া হয় মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে। আর পুরো আর্থিক লেনদেনটিই হয় গোপনে, যার নেতৃত্বে ছিলেন মহাব্যবস্থাপক মো. মনিরুল ইসলাম (প্রশাসন ও মানবসম্পদ), পিএস নাজমুল হুদা, এডমিন অফিসার তুষার, এডমিন সেকশনের পিওন হাবিব, এমডির পিওন ইব্রাহীম শিকদার ও এমডির আত্মীয় শওকত।  

এ বিষয়ে সামাদ মৃধার কাছে জানতে চাইলে পুরো বিষয়টিই হেসে উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘মানুষ বলে আমি টাকা নিয়ে রিজয়েন করিয়েছি। আসলে বিভিন্ন সুপারিশের কারণে আমাকে এটা করতে হয়েছে। ’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী বলেন, ‘মাগুরা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখরের মদদপুষ্ট হয়ে ইডিসিএলে নিয়োগ পান মনিরুল। একটি বেসরকারি ওষুধ কোম্পানির ম্যানেজার থেকে সরাসরি খুলনা এসেনসিয়াল ল্যাটেক্স প্লান্টের (কেইএলপি) ডিজিএম পদে আসীন হন তিনি। এরপর সেখানে গড়ে তোলেন নিজের সিন্ডিকেট। নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ২০২২ সালে নারীঘটিত এক অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে বগুড়া প্লান্টে বদলি করা হয়। কিন্তু ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ইডিসিএলের প্রাক্তন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ডা. এহসানুল কবির জগলুলের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে ঢাকা হেড অফিসে পারচেজ কমিটির প্রধান হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। পরে ইডিসিএলে বর্তমান এমডি আব্দুস সামাদ মৃধা দায়িত্বে এলে মনিরুলের কপাল খুলে যায়। সরাসরি প্রশাসন ও মানবসম্পদ বিভাগের মহাব্যবস্থাপকের (জিএম) পদ জুটিয়ে নেন তিনি। এরপরই তিনি অতিরিক্ত জনবলের দোহাই দেখিয়ে চাকরিচ্যুত করার কাজে নামেন।  

আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী হিসেবে মনিরুল বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেন 

অনিয়ম আর দুর্নীতির কাজে তাকে সরাসরি সহায়তা করছে তারই গড়ে তোলা পুরোনো সিন্ডিকেট। এক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করছেন খুলনা এসেনসিয়াল ল্যাটেক্স প্লান্টের উপ-ব্যবস্থাপক ও ইনচার্জ (হিসাব ও অর্থ) কাজী তানজীমা তাবাচ্ছুম (২৩৪৯)। তার হাত ধরেই সেখানে আধিপত্য বিস্তার করেন মনিরুল। গোপালগঞ্জ কোটায় চাকরি পাওয়া তাবাচ্ছুমকে সঙ্গী বানিয়ে অনৈতিকভাবে ওভারটাইম সুবিধা দেওয়াসহ বিভিন্ন আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। খুলনা প্ল্যান্টে তাবাচ্ছুমের সহযোগী হিসেবে কাজ করেন সহকারী হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা খাদিজা আফরিন (৩৭১২), সহকারী কর্মকর্তা (প্রশাসন) শেখ মিজানুর রহমান (৪৬৭৮), কনিষ্ঠ কর্মকর্তা (নিরপেক্ষ) সুজিত কুমার মণ্ডল (৪১০১), কনিষ্ঠ কর্মকর্তা (প্রশাসন) অনন্যা ইউসুফ (২৩১৬), মো. আশিকুজ্জামান (৪৯০৭), সোনিয়া সুলতানা (৩৭০৪), শাপলা খাতুন (০৬২৮) ও গাড়িচালক কামাল হোসেন।

খুলনা প্ল্যান্টে চাকরিচ্যুতদের একজন হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘অতিরিক্ত জনবল দেখিয়ে ১০ এপ্রিল আমাদের চাকরিচ্যুতির নোটিশ দেওয়া হয়। অথচ চাকরিচ্যুত করা হয় ২০ মার্চে। ওখানে সবকিছু চলে প্রতিষ্ঠানটির গাড়িচালক সিবিআই নেতা কামাল হোসেনের কথায়। এমনকি তাকে টাকা দিয়ে অনেকেই এখন নিজের চাকরি টিকিয়ে রেখেছেন। এই প্ল্যান্টে যত মালি, ক্লিনার সবই তার তদবিরে নিয়োগ দেওয়া। আর এসব তিনি করছেন মনিরুল ইসলামের ইশারায়।  

তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুরো বিষয়টিই অস্বীকার করেন কামাল হোসেন। তিনি বলেন, চাকরি দেওয়ার সুযোগ তার নেই। আর এ ধরনের টাকা-পয়সার কোনো লেনদেনের সঙ্গেও তিনি জড়িত নন।  

চাকরি থেকে বহিষ্কার হওয়া কয়েকজন ভুক্তভোগীর কথা প্রতিষ্ঠানের এমডি সামাদ মৃধাকে জানালে তিনি একটি তদন্ত করেন, যেখানে একজনের বিরুদ্ধে মাদকাসক্তির অভিযোগ পান। জানা গেছে, মাদকাসক্ত ওই কর্মী মনিরুলের ভাতিজা।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চাকরিচ্যুত এক কর্মী বলেন, ‘দেখেন, ঠিকভাবে অফিস করেও আমরা আজ চাকরিচ্যুত শুধু মনিরের লোক নই বলে। অথচ মনির এখানে অসংখ্য লোকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাদের চাকরি দিয়েছে। আর মনিরের তদবিরের লোক ও তার মাদকসেবী ভাতিজা নিলয় ঠিকভাবে অফিস না করেও খুলনা প্ল্যান্টে বহাল তবিয়তে আছে। ’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মনির বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের রুলস মেনেই ছাঁটাই করা হচ্ছে, তবে নিজের ভাতিজার বিষয়ে প্রশ্ন করতেই রেগে যান তিনি।  

শ্রমিক লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মনিরুল

সূত্র জানায়, মনিরুল ইসলামের ভাতিজা নিলয়ের মাদকসেবনের ভিডিও এমডি সামাদ মৃধা দেখানো হয়। কিন্তু তিনি কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে বরং তার নিয়োগ দুই মাস পূর্বের তারিখে দেখিয়ে চাকরি স্থায়ী করে মধুপুর প্ল্যান্টে বদলি করে দেন।

মনির আওয়ামী লীগের দোসর, আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে তিনি দীর্ঘদিন জড়িত। শুধু তাই নয়, তারেক রহমানের ফাঁসিও চেয়েছিলেন তিনি। তাহলে তিনি কীভাবে এখনও বহাল তবিয়তে চাকরি করছেন, প্রশ্ন চাকরিচ্যুত এক ভুক্তভোগীর।  

নিয়োগ বাণ্যিজের আখড়া ইডিসিএল, এমন অভিযোগে বারবার সংবাদ শিরোনাম হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু ৫ আগস্টের পরও সেই সমালোচনা ঘোঁচেনি বরং আরও তীব্র হয়েছে। এর প্রমাণ মেলে যখন প্রতিষ্ঠানে এমডি পদের মতো দায়িত্বে থাকা লোক চাকরি দেওয়ার বিনিময়ে ফেসবুক স্ট্যাটাস সরিয়ে নেওয়ার কথা বলেন।  

‘সামাদ মৃধা আমাকে কল করে বলেন, ভাইয়া আপনার কয়টা লোককে চাকরি দিয়ে দিতে চাই, আপনি ডিমান্ড করেন কত লোকের চাকরি দরকার, দয়া করে আপনার দেওয়া ফেসবুক স্ট্যাটাসটা তুলে নেন’, বলছিলেন সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাক্টিভিস্ট ও প্রবাসী সাংবাদিক।  

সামাদ মৃধার দুর্নীতি নিয়ে গত ২৯ মে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন ওই সাংবাদিক। আর সেই পোস্ট সরাতেই ঘুষ হিসেব লোক নিয়োগ দিয়ে দেওয়ার কথা বলেন তিনি।

‘এখানে শ্রমিক হিসেবে ক্যাজুয়াল ভিত্তিতে চাকরি নিতে একজনকে ৮ লাখ টাকা দিয়েছিলাম। এরপর এপায়েনমেন্ট লেটার পাই। ক্যাজুয়াল থেকে এখনও স্থায়ী হতে পারলাম না, চাকরিটা চলে গেল’, বলছিলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মী।  

চাকরি চলে যাওয়ার পরও কেন নিজের নাম গোপন রাখতে চাচ্ছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার অনেক আত্মীয়ও একইভাবে টাকা দিয়ে এপায়েনমেন্ট লেটার পেয়েছে। আমার নাম সামনে এলে তাদের চাকরিও রিস্কে পড়তে পারে। ’

খবর নিয়ে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগ নিয়োগই টাকার বিনিময়ে। আর এই টাকা বিভিন্ন হাত বদল হয়ে ঢোকে কর্তাদের পকেটে। আর পুরো প্রক্রিয়াটি ঘটে অতি গোপনে। এ বিষয় নিয়ে জনস্মুখে কেউই কথা বলতে চান না, কেননা এখানে একই পরিবারের কয়েকজনের একসাথে চাকরি করার নজির কম না। তাই টাকার বিনিময়ে পাওয়া চাকরি হারানো ভয়ে সবারই মুখে কুলুপ এঁটে থাকেন। বছরের পর বছর এভাবেই চলছে ইডিসিএলের নিয়োগ বাণিজ্য।

‘এইখানে টাকার খেলা চলে। আর এর সাথে এমডি থেকে শুরু করে সবাই জড়িত। এই যে এমডি আসার পর এত মানুষের চাকরি গেল, এখন তিনি আবার টাকা নিয়ে লোকবল নিয়োগ দেবেন, চাকরি চলে যাওয়া অনেককেই কিন্তু তিনি ফিরিয়েছেন মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে। আমরা অনেক দেখছি, এমডি আসে যায়, কিন্তু নিয়োগ, টেন্ডারবাজি এগুলো আর বদলায় না। ’ বলছিলেন সেখানে কর্মরত পুরোনো এক কর্মী।  

১৯৮৩ সালে এসেনসিয়াল ড্রাগস্ কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল) প্রতিষ্ঠা করে সরকার। ঢাকায় প্রধান কারখানা ছাড়াও খুলনা এসেনসিয়াল ল্যাটেক্স প্ল্যান্ট (কেইএলপি) হলো ইডিসিএলের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদন ইউনিট। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারের জন্য মানসম্পন্ন পুরুষ কনডম উৎপাদন হয় এখানে। এছাড়া বগুড়ায় ইডিসিএলের আরেকটি বৃহৎ উৎপাদন কেন্দ্র রয়েছে। সেখানে সেফালোস্পোরিন প্রকল্পের অধীনে আধুনিক ওষুধ উৎপাদনের সুবিধা রয়েছে। গোপালগঞ্জ ও টাঙ্গাইলের মধুপুরে এসেনসিয়াল ড্রাগসের প্ল্যান্ট রয়েছে।  

এমডি সামাদ মৃধার অনিয়মের বিষয়ে তদন্তের জন্য কমিটি করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।  

মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মোজাম্মেল হোসেন খান বলেন, ‘এমডি যে নিয়োগগুলো নিজ ক্ষমতাবলে দিয়েছেন, সে বিষয়ে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার ব্যাখ্যা সন্তোসজনক ছিল না বলে আমরা তার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত পাওয়া সব অভিযোগ তদন্ত করতে একটি কমিটি গঠন করেছি। তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর সে অনুয়ায়ী ব্যবস্থা নিতে পারব। ’
 
এ বিষয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব সাইদুর রহমান বলেন, ‘আগের মতো যখন খুশি নিজ মতো করে লোক নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি এখন আর নেই। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ থাকবে। আর আমাদের কাছে এরইমধ্যে তার (এমডি) বিষয়ে কয়েকটি অভিযোগ এসেছে, যা নিয়ে আমরা তদন্ত করছি। এসেনেশিয়ালে এ ধরনের অপকর্ম আর দুর্নীতি মানা হবে না। অপরাধ প্রমাণ হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’
 
এসেনসিয়াল ড্রাগসের দুর্নীতির বিষয়ে করা কমিটির সভাপতি স্বাস্থ্যসেবার অতিরিক্ত সচিব এটিএম সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, কিছুদিনের মধ্যেই চার সদেস্যর তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করবে। এরইমধ্যে তাদের কাছে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত আসতে শুরু করেছে। তদন্ত প্রক্রিয়া শেষে রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেন তিনি।

পিএ/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।