ঢাকা, শনিবার, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০৭ জুন ২০২৫, ১০ জিলহজ ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

রপ্তানির সিদ্ধান্তেও সংকট কাটছে না চামড়ার বাজারের

গৌতম ঘোষ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭:২৫, জুন ৬, ২০২৫
রপ্তানির সিদ্ধান্তেও সংকট কাটছে না চামড়ার বাজারের পুরনো ছবি

ঢাকা: বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম কাঁচা চামড়ার বাজার হওয়ার গৌরব বাংলাদেশের, অথচ কোরবানির মৌসুমে সেই চামড়া পানির দামে বিক্রি হওয়ার বেদনাবিধুর বাস্তবতা বছরের পর বছর ধরে অব্যাহত। ন্যায্য দাম না পাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কোরবানিদাতা, মৌসুমি ব্যবসায়ী এবং ক্ষুদ্র চামড়া সংগ্রাহকরা।

এই সংকট নিরসনে দীর্ঘ বিরতির পর সরকার তিন মাসের জন্য শিথিল করেছে কাঁচা ও ওয়েট ব্লু  চামড়া রপ্তানির শর্ত, যা বাজারে মূল্যবৃদ্ধি ও চাহিদা বাড়ানোর আশা জাগাচ্ছে। তবে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, বিনিয়োগে দ্বিধা, টানা বর্ষণ, ব্যাংক ঋণে জটিলতা ও সরকারের নির্ধারিত উচ্চমূল্য— সব মিলিয়ে এ বছরও অনেক চামড়া অবিক্রিত থেকে যাওয়ার শঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে সরকারের কাঁচা ও ওয়েট ব্লু  চামড়া রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা স্থগিতের সিদ্ধান্তে যখন আড়তদারদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে, তখন ট্যানারি মালিকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে স্পষ্ট অসন্তোষ। তাদের দাবি, কাঁচা চামড়ার রপ্তানির অনুমতি অল্পমেয়াদে বাজারে দাম বাড়ালেও দীর্ঘমেয়াদে দেশের ট্যানারি শিল্প হুমকির মুখে পড়বে। বাংলাদেশ ফিনিশড চামড়া শিল্প সমিতির এক নেতার ভাষায়, ক্রাস্ট ও ফিনিশড চামড়া উৎপাদনে আমরা দেশে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছি। এর মাধ্যমে লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এখন যদি রপ্তানির নামে কাঁচা চামড়া বিদেশে চলে যায়, তাহলে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা কীভাবে পূরণ হবে? ওয়েট ব্লু  চামড়া রপ্তানির সুযোগ কতটা যৌক্তিক— তা নতুন করে পর্যালোচনা করা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশ থেকে ওয়েট ব্লু  চামড়ার রপ্তানি একসময় নিয়মিতই হতো— বিশেষ করে ১৯৯০ সালের আগ পর্যন্ত। এরপর দীর্ঘ সময় এ রপ্তানি বন্ধ থাকলেও ২০২১ সালে কেস টু কেস ভিত্তিতে সীমিতভাবে মাত্র এক কোটি বর্গফুট ওয়েট ব্লু  চামড়া রপ্তানির অনুমতি দিয়েছিল সরকার। তবে চলতি বছর প্রথমবারের মতো এই নিষেধাজ্ঞা সবার জন্য সাময়িকভাবে শিথিল করে দেওয়া হয়েছে, যার আওতায় কাঁচা ও ওয়েট ব্লু— দুই ধরনের চামড়াই রপ্তানি করা যাবে। বাংলাদেশ মূলত চীন, হংকং, দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি, জাপান ও স্পেনের মতো দেশে ফিনিশড চামড়া রপ্তানি করে থাকে। এবার সেইসব দেশের প্রতিই কাঁচা ও ওয়েট ব্লু  চামড়া রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে চীন ও ভিয়েতনামের সঙ্গে সরকারিভাবে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা বাংলাদেশ থেকে পশুর চামড়া আমদানিতে আগ্রহও প্রকাশ করেছে।

খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, এবারের কোরবানির মৌসুমেও চামড়া খাতে একাধিক সংকট দেখা দিয়েছে। একদিকে চলছে টানা বর্ষণ, যা চামড়া সংরক্ষণের জন্য বড় হুমকি। বৃষ্টির পানি চামড়ায় পড়লে তা দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়, ফলে সংগ্রহ ও সংরক্ষণ— দুই ক্ষেত্রেই বাড়ছে ঝুঁকি। অন্যদিকে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও অনিশ্চয়তা বিনিয়োগকারীদের মনোবলে বড় প্রভাব ফেলেছে। অনেক বড় ব্যবসায়ী বর্তমানে আত্মগোপনে থাকায় এবং পরিস্থিতির অবনতি আশঙ্কায় অনেকেই বিনিয়োগ থেকে পিছু হটছেন। যারা এগিয়ে আসছেন, তারা অত্যন্ত হিসাব করে অর্থ খাটাচ্ছেন। অথচ প্রতি বছর এই মৌসুমেই হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ হয়ে থাকে চামড়া সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে। এছাড়া রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ব্যাংকগুলোও চামড়া খাতে ঋণ প্রদানে সতর্ক হয়ে উঠেছে। ফলে অনেক ব্যবসায়ী চামড়া কিনতে প্রয়োজনীয় অর্থায়ন পাচ্ছেন না, যা বাজারে ধস নামার অন্যতম আশঙ্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

সূত্রের খবর, চলতি বছর কোরবানির পশুর চামড়া কেনার জন্য ব্যাংকগুলো ২৩২ কোটি টাকা ঋণ দেবে বলে জানানো হয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় ৩৮ কোটি টাকা কম। ২০২৪ সালে চামড়া খাতে ব্যাংকগুলো ২৭০ কোটি টাকা ঋণ সরবরাহ করেছিল। চামড়া খাতে খেলাপি ঋণের প্রবণতা বেশি থাকায় প্রতি বছর ঋণের পরিমাণ ধাপে ধাপে কমছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর ফলে ব্যাংকগুলোর মধ্যে এ খাতে বিনিয়োগ বা ঋণদানে আগ্রহের ব্যাপক ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। এই ঋণ সংকট বাজারে ঋণের প্রাপ্যতা সীমিত করে দিচ্ছে, যা চামড়া ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কোরবানির পশুর চামড়া সংক্রান্ত বাজার নিয়ন্ত্রণ এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতা রোধে বর্তমান সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে। বিশ্ববাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অভ্যন্তরীণ বাজারে কাঁচা চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে, যা কার্যকর হলে ব্যবসায়ীদের কোনো ধরনের আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা থাকবে না। প্রতিবছর কোরবানির মৌসুমে সিন্ডিকেটের কারণে চামড়ার বাজারে ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হন। এই সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে এবং বাজারে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে, সরকার তিন মাসের জন্য কাঁচা চামড়া সরাসরি রপ্তানির সুযোগ প্রদান করেছে। এর ফলে মধ্যস্বত্বভোগীদের নিয়ন্ত্রণ দুর্বল হয়ে পড়বে এবং ব্যবসায়ীদের সঠিক মূল্য আদায়ের পথ সুগম হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সরকারি এ পদক্ষেপে চামড়া খাতের উন্নয়ন এবং ব্যবসায়ীদের কল্যাণ নিশ্চিতকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার পাশাপাশি দেশের বাণিজ্যে স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে।

এছাড়া নির্ধারিত মূল্যের বাইরে চামড়া কেনাবেচা করলে কিংবা জাতীয় এই সম্পদ নষ্টের সঙ্গে জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সরকার সাফ জানিয়ে দিয়েছে। এ লক্ষ্যে দেশের সকল জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) আগেভাগেই প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হবে, যাতে স্থানীয় পর্যায়ে বাজার তদারকি ও আইন প্রয়োগ নিশ্চিত করা যায়। চামড়া যেন তড়িঘড়ি করে অল্প দামে বিক্রি করতে বাধ্য না হয়, সে জন্য চামড়া সংরক্ষণের ব্যবস্থা জোরদার করা হচ্ছে। বিশেষ করে লবণের সরবরাহ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বেসরকারি খাতের পাশাপাশি সরকারি উদ্যোগেও সারা দেশে অতিরিক্ত প্রায় ১ লাখ টন লবণ সরবরাহ করা হবে, যার মধ্যে ৩০ হাজার টন লবণ বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে চামড়া সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে। সরকার মনে করছে, এসব উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে কোরবানির মৌসুমে কাঁচা চামড়ার বাজারে স্বচ্ছতা, স্থিতিশীলতা এবং ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

এ বিষয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, আমরা এবার কাঁচা চামড়া বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে কয়েকটি সমন্বিত উদ্যোগ নিয়েছি। সরকারিভাবে বিনামূল্যে লবণ বিতরণ করা হচ্ছে, চামড়া সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এবং লবণ লাগাতে যে শ্রম ব্যয় হয়, সেটিও মূল্য নির্ধারণে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। সবদিক চিন্তা করেই এবার চামড়ার যে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে, তা যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত।

তিনি আরও জানান, দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি কাঁচা চামড়া চীনের ও ভিয়েতনামের মতো বাজারে রপ্তানির উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। এতে বাজারে চাহিদা ও মূল্য— উভয়ই স্থিতিশীল থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সব মিলিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে চামড়া খাতকে রক্ষায় এবং মৌসুমি ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণে একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, যা সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে এবারের কোরবানির মৌসুমে চামড়া নিয়ে অতীতের মতো নৈরাজ্য সৃষ্টি হবে না বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিএইচএসএমই) সূত্রে জানা গেছে, এবছর কোরবানির পশুর চামড়ার সংখ্যা ১ কোটি ১৫ লাখ পিস ছাড়িয়ে যেতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে গরু, ছাগল ও ভেড়ার চামড়া। গত বছর এই সংখ্যা ছিল এক কোটিরও বেশি। চামড়ার পরিমাণে এই বৃদ্ধি ট্যানারি শিল্পের জন্য বড় সুযোগ তৈরি করলেও, এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ইতোমধ্যে চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণের প্রস্তুতি শুরু করেছে ট্যানারি মালিক, আড়তদার এবং মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। চামড়া যাতে যথাসময়ে সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা যায়, সেজন্য স্থানীয় পর্যায়ে লবণ সরবরাহ, পরিবহন ব্যবস্থা এবং মূল্য তদারকি সংক্রান্ত নানা দিক নজরে রাখছে সংশ্লিষ্ট মহল। বিএইচএসএমই আশা প্রকাশ করেছে, সরকারের সদিচ্ছা ও বাজারব্যবস্থাপনার সমন্বয়ে এ বছর চামড়া খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাবে, যা শিল্পখাতকে দীর্ঘমেয়াদে টেকসই উন্নয়নের পথে নিয়ে যেতে সহায়ক হবে।

বিএইচএসএমই মহাসচিব টিপু সুলতান বাংলানিউজকে বলেন, ‘সরকার কাঁচা চামড়া রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা তিন মাসের জন্য তুলে নিয়েছে সেটা ভালো উদ্যোগ। কিন্তু আমাদের তো সেই সক্ষমতা নেই চামড়া রপ্তানির জন্য। আমাদের আগে সক্ষম করে তুলতে হবে। কাঁচা চামড়া রপ্তানি খবরে দাম বাড়বে এটা ঠিক। এই চামড়া যারা কিনবে সেসব বড় ব্যবসায়ীরা সরকার পরিবর্তনের ফলে আত্মগোপনে আছে। তারা এবার অনেকেই চামড়া কিনবে না। রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিবেশে অনেকে অর্থ বিনিয়োগ করতে সাহস পাচ্ছেন না। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ব্যাংকগুলো চামড়া কেনায় ঋণ দেওয়া কমিয়ে দিয়েছে। ’

তিনি আরও বলেন, ‘কাঁচা চামড়া রপ্তানির বিষয়টি ভালোভাবে নেননি ট্যানারি মালিকরা। তারা যদি চামড়া কেনা কমিয়ে দেয় সেটি ভালো হবে না। সরকার আবার এ বছর চামড়ার দাম গড়ে ৫ থেকে ৭ টাকা বাড়িয়েছে। তারপর বৃষ্টির মৌসুম টানা বৃষ্টি হলে চামড়া নষ্ট হয়ে যাওয়ার একটা শঙ্কা রয়েছে। সব মিলিয়ে চামড়ার বাজারে এক ধরনের শঙ্কা রয়ে গেছে। ’

এ বিষয়ে বিএইচএসএমইর সাবেক সভাপতি ও মাহবুব অ্যান্ড ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী আফতাব খান বাংলানিউজকে বলেন, ‘চামড়ার ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে কাঁচা ও ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানির সুযোগ নিঃসন্দেহে সরকারের ভালো উদ্যোগ। এর সুফল সবাই পাবে। অনেক সময় ট্যানারি চামড়া নিতো না, সে জিম্মিদশা কাটবে। তবে কিছুটা সমস্যাও আছে, যেমন, কাঁচা চামড়া রপ্তানি করতে হলে একটা প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়। আমাদের সেটা নেই বা সক্ষমতাও অনেক ক্ষেত্রে নেই। কারণ আমারা আগে কখনো চামড়া রপ্তানি করিনি। আমাদের নতুন বাজার ধরা ও রপ্তানিকারক খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে। ’

ট্যানারিশিল্পের মালিকদের গুরুত্ব না দিয়ে সরকারের কাঁচা ও ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানির সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী বলে মনে করেন বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইউএ) ভাইস চেয়ারম্যান এম এ আউয়াল। তিনি বলেন, এতে করে চামড়াশিল্প নগরীতে ক্রাস্ট ও ফিনিশড চামড়া উৎপাদনে ট্যানারি মালিকদের ১০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ ছাড়া পরিবেশ দূষণ বাড়বে এবং ফুটওয়্যার ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান লোকসানে পড়বে। লেদার সেক্টরের মোট রপ্তানি আয় শতকরা ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কম হবে। ফলে ট্যানারি সেক্টরে নিয়োজিত হাজার হাজার শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তা বেকার হয়ে পড়বেন।

দেশের কাঁচা চামড়ার বাজারে সর্বশেষ বড় মূল্যবৃদ্ধি দেখা গিয়েছিল ২০১৩ সালে, যখন কোরবানির গরুর প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম ছিল ৮৫ থেকে ৯০ টাকা। কিন্তু এরপর থেকে নানা অর্থনৈতিক ও কাঠামোগত কারণে চামড়ার মূল্য ধারাবাহিকভাবে কমে আসে। এক দশকের বেশি সময় পর চলতি বছর সরকার চামড়ার মূল্য সামান্য হলেও বাড়িয়েছে, যা বাজারে কিছুটা স্বস্তির ইঙ্গিত দিলেও পুরোনো রেকর্ড থেকে এখনও অনেক পিছিয়ে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এবছর ঢাকায় কোরবানির গরুর লবণযুক্ত চামড়ার সর্বনিম্ন মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১,৩৫০ টাকা; যা মফস্বলে নির্ধারিত হয়েছে ১,১৫০ টাকা। প্রতি বর্গফুট হিসাবে ঢাকায় গরুর লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। যা গত বছর ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। অর্থাৎ, চলতি বছর প্রতি বর্গফুটে গরুর চামড়ার দাম গড়ে ৫ টাকা করে বেড়েছে। এছাড়া, খাসির লবণযুক্ত চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি বর্গফুট ২৭ টাকা এবং বকরির চামড়ার মূল্য ২২ টাকা, যা গত বছরের তুলনায় ২ টাকা করে বেশি। মূল্যবৃদ্ধির এই প্রবণতা সামান্য হলেও বাজারে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করতে পারে, যদি সঠিকভাবে তদারকি ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা হয়।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দেওয়া সর্বশেষ তথ্যমতে, ২০২৫ সালের পবিত্র ঈদুল আজহায় কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৭টি। এর মধ্যে ৫৬ লাখ ২ হাজার ৯০৫টি গরু ও মহিষ, ৬৮ লাখ ৩৮ হাজার ৯২০টি ছাগল ও ভেড়া, এবং ৫ হাজার ৫১২টি অন্যান্য প্রজাতির প্রাণী কোরবানির উপযোগী। চাহিদার তুলনায় এবারও গবাদিপশু উদ্বৃত্ত থাকতে পারে ২০ লাখ ৬৮ হাজারের বেশি, যা অভ্যন্তরীণ সরবরাহে কোনো সংকট তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে দিয়েছে।

অন্যদিকে, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত ১১ মাসে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে প্রায় ১০৬ কোটি মার্কিন ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেশি। এই প্রবৃদ্ধিকে দেশের চামড়া শিল্পের জন্য ইতিবাচক ইঙ্গিত হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বৈশ্বিক বাজারে চামড়ার চাহিদা বৃদ্ধি ও রপ্তানি আয় বাড়ার এই ধারা অব্যাহত রাখতে হলে কোরবানির সময় সংগৃহীত কাঁচা চামড়ার মান ও সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনায় বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করা গেলে ঈদুল আজহার সময় সংগৃহীত চামড়া থেকেই দেশের চামড়া শিল্পে দীর্ঘমেয়াদে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশা করা যাচ্ছে।

জিসিজি/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।