ঢাকা: ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট পাসের ক্ষেত্রে আরও বিনিয়োগ-ব্যবসাবান্ধব ও কর্মসংস্থানমুখী করা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ব্যবসায়ী নেতা- তরুণ উদ্যোক্তা সাকিফ শামীম। তিনি মনে করেন এবারের বাজেট কেবল হিসাব-নিকাশে সীমাবদ্ধ না থেকে দিকনির্দেশক হয়ে উঠবে।
তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতির স্বতন্ত্র পথচলায় নতুন জাতীয় বাজেট যে সময় এসেছে, তা একদিকে যেমন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিচ্ছে, তেমনি জটিল ও সংকটপূর্ণ বাস্তবতার সম্মুখীন হওয়ার চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বিশেষ করে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে হবে। এতে সাধারণ মানুষ বাজারে স্বস্তি পাবেন।
দেশের স্বাস্থ্যখাতের একজন অন্যতম উদ্যোক্তা ও ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতাল অ্যান্ড সুপার স্পেশালিটি সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সাকিফ শামীম বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমান সময়টা দেশের জন্য সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক পরীক্ষার সময়, একদিকে ক্রমবর্ধমান রাজস্ব ঘাটতি অপরদিকে অপরিমেয় বৈদেশিক ঋণের বোঝা, যা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে নানাবিধ চাপ সৃষ্টি করছে। এই পরিস্থিতিতে বাজেট কেবল হিসাব-নিকাশের নয়, বরং দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, দায়িত্বশীলতা এবং টেকসই উন্নয়নের দিকনির্দেশক হয়ে উঠবে এটাই প্রত্যাশা করছি।
তিনি বলেন, শুনেছি এ বছর স্বাস্থ্য ও শিক্ষাখাতে টাকার অংকে বরাদ্দ কিছুটা কমেছে। এটা কতটা যৌক্তিক হবে সেই প্রশ্ন কিন্তু আছে। বরং বলবো সাধারণ নাগরিকদের মৌলিক অধিকার চিকিৎসা ও শিক্ষা ব্যয় কমিয়ে আনতে এখাতে বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন।
সরকারের রাজস্ব আয়, লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় দীর্ঘদিন ধরে যথেষ্ট কম জানিয়ে তিনি বলেন, কর নীতিতে নানা ধরনের গুণগত ও কাঠামোগত দুর্বলতা এখনও দূর হয়নি, যার ফলে কর আদায়ে ফাঁকফোকর রয়ে যাচ্ছে। করপোরেট সেক্টর থেকে শুরু করে ব্যক্তি করদাতাদের মধ্যে কর সঠিকভাবে আদায়ের জটিলতা দেশের রাজস্ব সংগ্রহে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এর সঙ্গে রাজস্ব সংগ্রহ ব্যবস্থাপনার অপ্রতুল ডিজিটাইজেশন ও দুর্নীতির বিষয়গুলো যোগ হলে সংকট আরও গভীরতর হয়। কর সংগ্রহ ব্যবস্থাপনা আরও স্বচ্ছ, আধুনিক ও কার্যকর করা এই মুহূর্তে সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও সুরক্ষার সঙ্গে সামাজিক ন্যায়বিচার বজায় রাখা বেশ গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাজস্ব ঘাটতির কারণে সরকার উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ কমিয়ে দিলে তা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গুণগত মানে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এক্ষেত্রে কর ব্যবস্থা এমনভাবে তৈরি করতে হবে যা সম্পদের সঠিক পুনর্বণ্টন নিশ্চিত করে এবং সামাজিক বৈষম্য কমায়।
বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা সংস্কার হওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, সরাসরি ভোট হওয়ায় এফবিসিসিআইতে ব্যবসায়ীরা যোগ্যনেতা নির্বাচিত করার সুযোগ পাবেন। আগামী এফবিসিসিআই নির্বাচনে সহ-সভাপতি প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে সাকিফ শামীম বলেন, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সরকারকে সহযোগিতা করা হবে। তবে এজন্য বেশকিছু বিষয়ে নজর দেওয়া প্রয়োজন।
উৎপাদনশীল খাতে ঋণের ব্যবহার যেন যথাযথভাবে হয়, সেই নিশ্চয়তা দিতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ বর্তমানে জিডিপির প্রায় ৪০ শতাংশেরও বেশি, যা উদ্বেগের বিষয়। বহু অর্থায়ন প্রকল্পে উচ্চ সুদের ঋণ গ্রহণ এবং পুনঃঋণের অব্যবস্থাপনা ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক ভারসাম্যহীনতার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিদেশি ঋণ একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থায়নের উৎস হলেও, সঠিক পরিকল্পনা ও নিবিড় মূল্যায়ন ছাড়া তা টেকসই উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। বৈদেশিক ঋণের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমেই অবকাঠামো ও উৎপাদনশীল খাতের আধুনিকায়ন সম্ভব, যা দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য।
তিনি বলেন, বিশ্ব অর্থনীতিতে সাম্প্রতিক মন্দা, মুদ্রাস্ফীতি এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা বাংলাদেশের বাজেট নীতিতে সরাসরি প্রভাব ফেলছে। উন্নত দেশগুলোতে সুদের হার বৃদ্ধির ফলে বৈদেশিক ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে খরচ বেড়েছে, যা আমাদের দেশের ঋণপরিশোধ সক্ষমতাকে কমিয়ে দিচ্ছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি ও কাঁচামালের মূল্য ওঠানামা বাংলাদেশের আমদানি ব্যয় বাড়িয়ে দেয়, যা বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ বাড়ায় এবং মুদ্রাস্ফীতি বাড়ার আশঙ্কা তৈরি করে। এই জটিল বৈশ্বিক পরিবেশে বাজেটের মাধ্যমে দেশের আর্থিক আত্মনির্ভরতা বাড়ানো এবং বৈদেশিক ঝুঁকি মোকাবিলায় কৌশলগত পদক্ষেপ গ্রহণ করাই এখন অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।
এলক্ষ্যে স্থানীয় উৎপাদনশীলতা বাড়ানো, নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎসে বিনিয়োগ, এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে বৈচিত্র্য আনতে হবে। এসব উদ্যোগ জাতীয় বাজেটে প্রতিফলিত হলে, আমাদের অর্থনীতি বৈশ্বিক ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাবে এবং আঞ্চলিক ও বিশ্ববাজারের প্রতিযোগিতায় স্থিতিশীলতা বজায় রাখবে।
সাকিফ- শামীম বলেন, সরকারের নতুন বাজেটের মূল লক্ষ্য হবে- কর ব্যবস্থাকে শক্তিশালী ও বহির্বিভাগীয় কর ফাঁকি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এছাড়া বাজেটে প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, কর ব্যবস্থাকে ডিজিটাল রূপান্তর এবং ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নত করা গেলে, কর সংগ্রহ অনেকাংশেই বাড়ানো সম্ভব হবে।
জিসিজি/এমএম