ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

কালিদাস কর্মকার: একজন আমৃত্যু কর্মময় চারুশিল্পী

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১৯
কালিদাস কর্মকার: একজন আমৃত্যু কর্মময় চারুশিল্পী

ঢাকা: গতিময় এক জীবন ছিল চিত্রশিল্পী কালিদাস কর্মকারের। এ দেশের কৃষিসমাজের গতিময়তাকে তিনি তার যেমন ক্যানভাসে তুলে এনেছিলেন, তেমনিভাবে এর প্রভাব ছিল তার জীবনেও। আত্মমগ্ন এ শিল্পী হঠাৎ করেই গত শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) চলে গেছেন নিজের সৃজনভুবন ছেড়ে। 

সোমবার (২১ অক্টোবর) তার নাগরিক শ্রদ্ধানুষ্ঠান এসে তার বন্ধু-স্বজনরা বললেন, প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা এক মানুষের কথা। বললেন, আমৃত্যু ক্লান্তিহীন কর্মময় জীবন ছিল কালিদাস কর্মকারের।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদে কালিদাস কর্মকারের সহপাঠী ছিলেন প্রখ্যাত ভাস্কর-শিল্পী হামিদুজ্জামান খান। অশ্রুসজ্জ্বল চোখে শেষ দেখা দেখছিলেন প্রিয় বন্ধুকে। বললেন, ও আমার শুধু বন্ধু নয়। আমার প্রাণের বন্ধু। বাড়ি থেকে প্রথম যেদিন চারুকলা অনুষদে পা রেখেছিলাম, সেদিন থেকেই ওর সঙ্গে পরিচয়। বন্ধুত্ব। ওর চলে যাওয়ার মধ্য দিয়ে সেই বন্ধুত্বের ইতি ঘটলো।

একটু থেমে বললেন, কালিদাস আন্তর্জাতিক মানের শিল্পী ছিলেন। বাংলাদেশের চিত্রকলায় আধুনিকতার ছোঁয়া দিয়েছিল সে। এ দেশের স্থাপনাশিল্পের পথিকৃৎ ছিল ও। আমৃত্যু ক্লান্তিহীন কর্মময় এক জীবন পার করেছে সে। শুধু তাই নয়, নতুন শিল্পীদের সবসময় অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে কালিদাস। চারুকলা অনুষদে কালিদাস কর্মকার শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলেন শিল্পী রফিকুন নবীকে।  

ছাত্রের প্রয়াণে ব্যথিত শিক্ষক রফিকুন নবী বললেন, চারুকলায় বেশ কয়েক বছর তাকে আমি দেখেছি। সবসময় এক ধরনের কর্মব্যস্ততা তাকে তাড়িয়ে বেড়াতো। এত এত মাধ্যমে সে কাজ করেছে, মাঝে মধ্যে নিজের কাছেই বিষ্ময় মনে হতো। তার চলে যাওয়াটা আকষ্মিক। এটি আমাদের পীড়া দিয়েছে। তার চলে যাওয়াটা শিল্পকলার জন্য অপূরণীয় এক ক্ষতি।

শিল্পী হাশেম খান বলেন, কালিদাস কর্মকার বাংলাদেশের শিল্পকে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত করার জন্য নিরলস কাজ করেছেন। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, এ বিষয়টি তাকে কেউ বলে দেয়নি। সে নিজেই কাজটি করেছেন।

শিল্পী মনিরুল ইসলামের কাছে কালিদাস কর্মকার মানে একটি প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর এক মানুষের নাম। এ তথ্য জানিয়ে তিনি বললেন, প্রাণচঞ্চলতা আর উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে সবসময় ছবি আঁকতো সে। সে সময়ের চেয়ে এগিয়ে ছিল। কখনও তাকে ক্লান্ত হতে দেখেনি।

চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, কালিদাস কর্মকার বহু ধরনের কাজ করতেন। সেটিকে একটি ভিন্নমাত্রা দিতেন। নিজে যেমন চিত্রকর্মের ফর্ম গড়েছেন, ঠিক তেমনিভাবে সেটিকে ভেঙে আবার নতুন কিছু করেছেন। শিল্পমাধ্যমের এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে তিনি কাজ করেননি।  

কালিদাস কর্মকার ‘একটি সময়ের নাম’ উল্লেখ করে শিল্পী রোকেয়া সুলতানা বললেন, তিনি একটি সময়ের নাম, প্রতীকের নাম। তিনি আমাদের কর্মে চির জাগ্রত থাকবেন তারুণ্যের উচ্ছ্বলতা নিয়ে।

পটুয়া কামরুল হাসানের সঙ্গে কালিদাস কর্মকারের সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে প্রাবন্ধিক মফিদুল হক বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা উত্তর সময়ে কালিদাস কর্মকার এক ভিন্নমাত্রার কাজ নিয়ে আমাদের সামনে হাজির হয়েছিলেন। তার কথা মনে হলে পটুয়া কামরুল হাসানের কথাও চলে আসে। তাদের সম্পর্কটা ছিল গুরু-শিষ্যের মতো। সেখান থেকে তারা অনেকগুলো শিল্পকর্ম আমাদের উপহার দিয়েছিলেন। তার আসাটা যেমন হঠাৎ করে, চলে যাওয়াটাও হঠাৎ করে। রেখে গেছে তার অজস্র সৃষ্টিকর্ম। সেগুলো সঠিকভাবে সংরক্ষণ এবং নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য কাজ করতে হবে।

কালিদাস কর্মকারের সৃজনকর্মকে সংরক্ষণের জন্য সবার সহযোগিতা চেয়ে তার বড় মেয়ে কঙ্কা কর্মকার বলেন, বাবা প্রতি মুহূর্তে দেশ ও দেশের শিল্পকর্মকে প্রচার করেছেন। এখন থেকে প্রতিবছর বাবার নামে আমরা দুই বোন প্রদর্শনী করবো। তার সৃজনশীল কাজ সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে। যার কারণে মানুষ তাকে মনে চিরদিন রাখবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১৯
ডিএন/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।