ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

প্রিয় পাঁচ কবিতা ও কবিতার গল্প | সারাজাত সৌম

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬০৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৪, ২০১৬
প্রিয় পাঁচ কবিতা ও কবিতার গল্প | সারাজাত সৌম

বাংলানিউজের শিল্প-সাহিত্য বিভাগের বিশেষ আয়োজন ‘প্রিয় পাঁচ কবিতা ও কবিতার গল্প’র এবারের পর্বে থাকছে, কবি সারাজাত সৌমর নিজের লেখা প্রিয় পাঁচ কবিতা ও সেগুলো লেখার পেছনের গল্প। 

কবি সারাজাত সৌমর জন্ম ২৫ এপ্রিল, ১৯৮৪, ময়মনসিংহে। যৌথভাবে সম্পাদনা করেন লিটল ম্যাগাজিন ও ঘুঘু।

বাংলানিউজের শিল্প-সাহিত্য বিভাগের বিশেষ আয়োজন ‘প্রিয় পাঁচ কবিতা ও কবিতার গল্প’র এবারের পর্বে থাকছে, কবি সারাজাত সৌমর নিজের লেখা প্রিয় পাঁচ কবিতা ও সেগুলো লেখার পেছনের গল্প।  


প্রিয় পাঁচ কবিতা

বাজিকর
তারই চোখ আমারই চোখে জীবাশ্মের মতো কোথায় যে উড়ছে কখন!
কারখানার শব্দরে মতো ফেটে পড়ছে চারদিকে শরীর-সন্ধ্যা এবং সানাই।

দেখো পিতলের পিন থকে উড়ে যাচ্ছে ফুল-ফলের স্বভাব আমারই। যতোদূর
এই পা পেঁচানো আছে পাপে কিংবা প্রেমে, তারই ঘর এখন পড়ে আছে উদলাই।

শূন্য থকে ছুটে আসছে সফরীর ঘোর, আর তোমার হাতের তালুতে মেহেদি
আঁকা ঘোড়াটি লাফিয়ে পড়ছে জগতে-যেন তার প্রতিটি শব্দ ছড়িয়ে দিচ্ছে
রৌশনাই।

এই চোখ বাজি ও বাজিকর হতেই পারে আজ রাতে-মিথ্যা ও মিথের ব্যবহারে।
আর দাবার ঘরগুলি ভরে গেছে শকুনে-শ্মশানে, উড়ে যাচ্ছে বালক হওয়াই মিঠাই।

ব্যক্তিগত জামা 
ব্যক্তিগত জামা থেকে মুছে না কখনো জামের দাগ! গোপন বৃষ্টিরা জানে কতোটা
গভীরে পৌঁছে চুমু খায় এমন প্রণয় প্রজাপতি-ডানার নিচে পড়ে থাকে জন্মদাগ।

কালো জড়ুলেরা গন্ধ ফেলে আসে বাগানে। বসন্ত বৈভব তার-পথে ফেলে যায়
কোকিলের ডাক! বিকালের বিড়ালগুলো তখন ফুলের কাছে মায়া-মীন!

আর বিগত দিনের শব্দগুলো আছড়ে পড়ে পাতা ও পতঙ্গের পায়ে। যেন বৃষ্টিরা
জানে কতোটা ঝরে গেলে আকাশ খুলে দেয় তার ফুলেল জামা।

মাকে বলিনি কখনো
মাথার কাঁটা দিয়ে বেঁধে রাখো চুলের ঝগড়া-এই বিকট বিকেল! আর তোমার
রাঙা ঠোঁট থুতু দিয়ে বাড়ি ফিরে যাক আজ, তারপরও তোমার সাথে দেখা হবে
এক ঘর আলোর নিচে।

মাকে বলিনি কখনো-আমার বয়স হয়েছে, প্রেম ও প্রতারণার জল থেকে উঠে এসে
আমি ঘুমাতে যাবো তোমার কোলে। কারণ বাবা যেহেতু তুমুল প্রেমিক এখনো-বাসের
হাতল ধরে ঠিকই বাড়ি ফিরছেন প্রতিদিন নিয়ম করে।

কিন্তু এমন না যে আমি চুলের গন্ধ ভুলে গেছি। দেখো প্রতিটি গাড়ি তার হুইসেল ফেলে
যাচ্ছে পথে, আর তারই তো চুল মেঘের মতো এখনো খেলা করে বিদ্যুৎ-বৃষ্টির ভিতরে।

পিঙ্গল ডানা
রোদেরও আছে রেশমি চুড়ি-শব্দ হলেই আমার ঘুম ভাঙ্গে। আর পাখির মিনার থেকে দেখা
যায় সেই সব বন-উপবন তোমার আচঁল দিয়ে ঘেরা! 
তবু সাহসে পা বাড়াই-বলি, এ জীবন ভরে আছে শীত ও শৈলপ্রভায়। অথচ ঝর্ণার পাশ
দিয়ে চলে গেছে যে অন্ধ মীন তার শরীরে কামিনীর ঘ্রাণ-কুয়াশায় মুড়া।
তারপর কুহেলিকা-পাঁপড়ির ভাষা শিখে হাঁটতে থাকি, ছায়ার পেছনে দেখি একটি প্রজাপতি
ও পুরনো চিঠির পাশে পড়ে আছে আমারই পিঙ্গল ডানা!

প্রকৃতি
অতঃপর প্রাসঙ্গিক পারুল-এই পায়রার দিনে। বৃষ্টিরা জানে বনের প্রেম নিয়ে কতোটা অলস
বনরুই! তবু হরিণ পালের স্মৃতি ঘুঘুদের কাছে-তারই আঙুল ছুঁয়ে আমি এবার জলে যাবো।
আর জলপিপিদের পায়ের ছন্দ থেকে পদ্মের হাসি-মাছেদের গুঞ্জন ঠেলে দুই-একটা শুশুক উঁকি
দিলে, আকাশ আমাদের বাড়ি আসে। জানি এবার তুমুল বর্ষা হবে-তজবিহ দানার মতো জ্বলে
উঠবে বুনোফুল।  
অথচ গাছেরা কখনো সরে দাঁড়ায় না পাখির গ্রীবা থেকে! পাতারা পিয়ানো-বাজে সাঁওতাল
গৃহে। এবার তুমুল বৃষ্টি হবে-শরীরে-অশরীরে, আমি জলে ডুব দিয়ে শুনবো উড়ে যাওয়া
পানকৌড়ির গান।
 

কবিতার পেছনের গল্প
আসলে প্রিয় বলবার যেমন শেষ নেই ঠিক গল্প বলবারও শেষ নেই। যা সুন্দর তাইই ভাবনা আসে মনে। আর এই ভাবনা থেকেই লেখা। কবিতা কিংবা গল্প যাই বলি না কেন এরা প্রথমে বিমূর্ত, তারপর মূর্তিমান চোখে ভাসে। লেখা যাই হোক তার পেছনে যে কারণই থাকুক আর যেভাবেই আসুক, শেষ পর্যন্ত লেখাটাই প্রস্ফূটিত। ধরি আমার আঙুল নেই আবার আছে! আবার নেই তার চোখ-কান। তবুও লিখি! কেন লিখি? এটা যেমন কোনো গল্প বলে শেষ করা যাবে না ঠিক তেমনি শেষও হবে না। আসলে শিল্পের শেষ নেই, থাকে না। তার নানান বাঁক, নানান চেহারা নানাভাবেই আসে এবং আসতেই থাকে। তেমনভাবেই এই কবিতাগুলো লেখা, হয়তো এগুলো নাও লেখা হতে পারতো। শেষ পর্যন্ত লেখা হয়েছে আর এটাই বোধ করি আরও অন্যকিছু অন্যভাবে লেখার গল্প বা প্রেরণা হয়ে থাকবে। আবার নাও হতে পারে এ লেখার কিছুই! কেবল সুন্দর চলমান প্রতিটি  লেখার ক্ষেত্রে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৬
এসএনএস

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।