ঢাকা, সোমবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

বাংলা ও কোরিয়ান সাহিত্য নিয়ে তুলনামূলক আলোচনা

শিল্প-সাহিত্য ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩০৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০২৩
বাংলা ও কোরিয়ান সাহিত্য নিয়ে তুলনামূলক আলোচনা

ঢাকা: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ও কোরিয়ান সাহিত্য নিয়ে তুলনামূলক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।  

গত বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) প্রকাশনা সংস্থা উজানের আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, যেসব দেশ ও সংস্কৃতির সঙ্গে আমাদের আদি সংস্কৃতির সাযুজ্য আছে সেগুলোর অভিজ্ঞতা আমাদের বেশি সমৃদ্ধ করবে।

এক্ষেত্রে কোরিয়ার সাহিত্য ও আদি সংস্কৃতি আমাদের অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধি আনতে পারে।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক কথাসাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক হামীম কামরুল হক। প্রবন্ধে তিনি কোরিয়া এবং বাংলাদেশের ইতিহাস, রাজনীতি-সাহিত্যের নানা দিক তুলে ধরে দুই দেশের সাহিত্যের পার্থক্য ও সাযুজ্যের বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করেন।  

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক কবি ও কথাসাহিত্যিক রায়হান রাইন আলোচনায় জোর দেন সাহিত্যের মিথ্যা দিয়ে, শিল্পের মিথ্যা দিয়ে বাস্তবের সত্যকে রূপান্তরের মাধ্যমে সাহিত্যে উপস্থাপনের ওপর। তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার কথাসাহিত্যিক হ্যান ক্যাঙের গল্প ও উপন্যাসের প্রসঙ্গ ধরে বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন লেখকের লেখা নিয়ে আলোচনা করেন।

তিনি বলেন, বাংলা সাহিত্য বাস্তবতার গভীর এক খাদে আটকে আছে। বাস্তব পরিস্থিতি বাস্তবভাবে উপস্থাপনের এ প্রবণতার বাইরে বাংলা ভাষায় যে সাহিত্য সৃষ্টি হয়েছে সবই যেন প্রান্তিক। এ প্রান্তিকতাকে মূল ধারায় নিয়ে আসা জরুরি।

আলোচকরা বলেন, সাহিত্য এবং অন্যান্য শিল্প মাধ্যমে পশ্চিমা সংস্কৃতি ও সাহিত্যের প্রভাব বলয়ের বাইরে এসে নিজেদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, দর্শন, প্রসঙ্গ, অনুষঙ্গ, প্রকরণ, উপদান ও উপকরণের মাধ্যমে আমাদের বাংলা সাহিত্যের রূপান্তর জরুরি। এক্ষেত্রে শুধু পশ্চিমের সাহিত্য নয়, নানা দেশের সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অভিজ্ঞতা বিনিময়ের ওপর জোর দেন তারা।

আলোচনায় কোরিয়ার কবিতা ও বাংলা কবিতা নিয়ে তুলনামূলক আলোকপাত করেন জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমির সহযোগী অধ্যাপক কবি সোহেল হাসান গালিব।  

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক কবি ও প্রাবন্ধিক তারেক রেজা আলোচনা করেন সাহিত্যের প্রকরণ ও সৌন্দর্য নিয়ে। সাহিত্যে বিষয়ের প্রাধান্য, প্রাসঙ্গিক ও অপ্রাসঙ্গিকতার নানা দিক তুলে ধরেন তিনি।  

লেখক ও অনুবাদক অধ্যাপক খোরশেদ আলম কোরিয়ার কবিতা অনুবাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। তার বক্তব্যে উঠে আসে উনিশ ও বিশ শতকের কোরিয়া ও বাংলার সমাজ ও সাহিত্যের রূপান্তরে বিভিন্ন দিক।  

গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী এবং অন্যান্যের আলোচনায় উঠে আসে বাংলাদেশ-কোরিয়ার বৌদ্ধিক ঐতিহ্য-দর্শন, মরমিবাদ ও দুই সংস্কৃতির রূপান্তরে ইউরোপের সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রভাবের নানা বিষয়-আশয়।

অনুষ্ঠানের সভাপতি বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের পরিচালক কবি ও অধ্যাপক শামীম রেজা বাংলা সাহিত্য এবং প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের সাহিত্যের প্রসঙ্গ টেনে বিশ্বসাহিত্যের রাজনীতির নানা অভিজ্ঞতা উপস্থাপন করেন। প্রতিবছর যে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয় সেখানে এবং এ পর্যন্ত যত নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে সেসবের মধ্যে স্কানডিনেভিয়ান দেশগুলো এবং ইউরোপের দেশগুলোর প্রাধান্য ও বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তের সঙ্গে বৈষম্য-ভারসাম্যহীনতার নানা প্রসঙ্গ উঠে আসে তার বক্তব্যে।

তিন ঘণ্টার এ আয়োজন সঞ্চালনায় ছিলেন দিলশাদ চৌধুরী ও ফয়সাল রাব্বি। অনুষ্ঠানের শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন প্রকাশনা সংস্থা উজানের সমন্বয়ক লেখক ও সাংবাদিক ষড়ৈশ্বর্য মুহম্মদ।

আলোচনা অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। প্রকাশনা সংস্থা উজানের এ আয়োজনে সহযোগিতা করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠান এলটিআই কোরিয়া। আলোচনার পাশাপাশি ছিল বাংলায় অনূদিত কোরিয়ান সাহিত্যের বিভিন্ন বইয়ের প্রদর্শনী।

বাংলাদেশ সময়: ২২৫৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০২৩
আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।