রাজধানীর কাঁটাবন মোড় থেকে সামান্য এগোলেই চোখে পড়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয়। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ভূমিসংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে এই কার্যালয়ে ভিড় জমান অনেক মানুষ।
সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে কথা বললে বোঝা যায়, অনেকে মিসকেসজনিত সমস্যার কারণে দীর্ঘদিন থেকে ভোগান্তির শিকার। কেউ পৈতৃক সূত্রে জমিসংক্রান্ত সমস্যার সমাধান চান, কেউ খাজনা জমা দিতে এসে আইডি নম্বরের জটিলতায় আটকে আছেন। অনেকে অভিযোগ করেন, আধুনিক ডিজিটাল ব্যবস্থাপনার নাম করে সার্ভার ডাউন, নথিপত্রের ঘাটতি ও জটিল প্রক্রিয়ার কারণে দিনভর অফিসে ঘুরে ঘুরে শেষমেশ কাজ শেষ করতে হয়।
উচ্চ আদালতের এক আইনজীবী ঘুরছিলেন পৈতৃক সূত্রে নিজেদের পাওয়া একখণ্ড জমিসংক্রান্ত মিসকেসের অভিযোগের সমাধান পেতে।
আব্দুর রহমান নামের একজন বলেন, ‘একবার নামজারি করতে গিয়ে অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছিল। একেক সময় একেক রকম কাগজপত্র চায়, দিলেও সমস্যা দেখিয়ে ভোগান্তিতে ফেলেছে। ’
বাবু মিয়া নামের একজন জানান, হাজারীবাগে একটি তিনতলা বাড়িতে তিনি থাকেন। এটি নিজের নামেই কাগজপত্র।
নিয়মিত খাজনাও পরিশোধ করেছেন ২০২৪ সাল পর্যন্ত। বছরখানেক আগে তিনি জানতে পারেন, কোনো এক অজ্ঞাত ব্যক্তি এই বাড়ির জায়গাটি নিজের দাবি করে অভিযোগ দাখিল করেছেন এসি ল্যান্ড অফিসে। অভিযোগ করার পর ওই ব্যক্তির আর কোনো খোঁজ নেই। গত এক বছরে চারবার হাজিরার জন্য ডাকলেও আসেনি। তাই রায় তাঁর পক্ষেই আসবে বলে শুনানির অপেক্ষায়।
চকবাজারের বাসিন্দা মো. কুতুব উদ্দিন আসেন নামজারির একটি সনদের জন্য। তিনি বলেন, ‘ডিজিটালে আমরা তেমন একটা পরিবর্তন দেখিনি। আজ একটা নামজারির সার্টিফিকেটের আবেদন করতে আসছিলাম। আজ পাইনি, অফিসার ছুটিতে আছেন। পরে হয়তো দেবেন। ’
তিনি বলেন, ‘অফিসের লোকজন কইতাছে যে আইডি থেইক্কা আগে জমা দিছি হেই আইডি থেইক্কা দেওন লাগবো। যে জমা দিছিলো হের নাম্বার আছে কিন্তু ফোন ধরে না। এহন একটা হয়রানি না? ভূমি অফিস থেকে বলতাছে নতুন কইরা আইডি খোলা যাইবো না। এহন আমার প্রশ্ন হইলো, তাইলে আমি আর কোনো দিনও খাজনা দিতাম পারমু না?’ (এই ব্যক্তির বক্তব্য হচ্ছে—আইডি নম্বর যে করা লাগে এই বিষয়টি বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষই জানেন না। তিনিও জানতেন না। কিন্তু এখন এই বিষয়টির কোনো সমাধান তিনি খুঁজে পাচ্ছেন না। )
শামছুজ্জামান নামের এক ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, তাঁর বাবা প্রায় ৩০ বছর আগে লালবাগের এক ব্যক্তির কাছ থেকে তিন শতাংশ জায়গা কেনেন। জায়গাও তাঁদের দখলেই আছে। কিন্তু সর্বশেষ সিটি জরিপের সময় তাঁর বাবার কেনা জায়গা পুনরায় বিক্রেতার হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়। ২০০২ সালে বিষয়টি তিনি জানার পর তাঁর বাবা মামলা করেন। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রায় ২৩ বছর পর বিষয়টি শামছুজ্জামান জানতে পারেন। গত কয়েক বছরে কয়েকবার এটি নিয়ে কানুনগোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেছেন। কয়েকবার শুনানিও হয়েছে। কিন্তু জরিপের এই ভুলটি সংশোধনের কোনো পথ এখনো বের হয়নি।
হাজারীবাগের বাসিন্দা অলিউর রহমান। বেড়িবাঁধ এলাকায় ৯২ একর জমি তাঁর দাবি করে তিনি মিসকেস করেছেন। তিনি বলেন, ‘২০১৯ সাল থেইক্কা এইটা নিয়ে দৌড়াচ্ছি। আদালতের রায় আমার পক্ষে—কিন্তু জায়গা আমার দখলে নেই। এখন মামলার রায় জমা দিতে আসছি। সিএস আমার নামে আরএস আর সিটি জরিপ তাদের নামে দেখাচ্ছে। কিন্তু মূল দলিল আমার নামে আমার কাছেই আছে। ’
লালবাগের বাসিন্দা মোস্তফা নাজমুল হাসান সজিব। তিনি বলেন, নামজারি আমার আগেই ছিল। বালাম বই থেকে কম্পিউটারে তথ্য হালনাগাদ করতে গিয়ে তারা ভুল করেছে। যে নামজারি করছে ওটার নম্বর ১০। বিক্রিকৃত জায়গার নম্বর ১২। কিন্তু ১০ নম্বরই দিয়ে রেখেছে। একই দাগে দুজনের জায়গা এখন। ’
তিনি বলেন, ‘অনলাইনে অভিযোগ করা বা সমাধানের কোনো সুযোগ নেই। মিসকেস করতে হয়, শুনানি করতে হয়। তিন মাস ধরে ঘুরছি। আমি দুইবার শুনানিতে আসছি। আগেরবার বলছিল আমরা দেখছি। দেখি আজ কী বলে। ’
এদিকে মিরপুরের সেনপাড়া পর্বতা ভূমি অফিস ঘুরে দেখা যায় দুর্ভোগের নানা চিত্র। মিরপুর-১০ নম্বর থেকে আসা তাহমিনা আক্তার বলেন, ‘ভাই-বোনদের মধ্যে বাড়ি ভাগাভাগি হয়েছে। তাই নামজারি করতে এসেছি। অফিস থেকে বলছে আগে দাগ নম্বর দিতে হবে। যদিও আগে দাগ নম্বর ছিল, তারা বলছে কি যেন সমস্যা হয়েছে। নতুন করে দাগ নম্বরের কাগজ ওঠাতে রবিবার যেতে বলছে। ’
সেনপাড়া এলাকার বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম শাওন বলেন, ‘নামজারি করার জন্য অনলাইনে আবেদন করেছিলাম। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আবেদনটি জমা হওয়ার কথা। ১১ দিন পার হলেও আবেদন লিপিবদ্ধের কোনো নোটিফিকেশন পাইনি। তাই সশরীরে আবেদন জমা দিতে এসেছি। এসে দেখি সার্ভার ডাউন। এরপর আবার কাজের জন্য এক বেঞ্চ থেকে অন্য বেঞ্চে পাঠানো হয়েছে। মূলত হয়রানি করে টাকা আদায় করার ফন্দি। ’
টোলারবাগ কামারপাড়া থেকে আসা কামাল হোসেন বলেন, ‘খাজনা দিতে এসেছিলাম। সার্ভারে সমস্যার কারণে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। পরে এক কর্মকর্তার কথায় টাকা জমা দিয়ে চলে এসেছি। ’ তিনি বলেন, সার্ভার চালু হলেই জমা হয়ে যাবে।
মিরপুর-১ নম্বরের বাসিন্দা শেখ সেলিম জানান, অনলাইনে আবেদন করলেও বেশির ভাগ সময় সেই আবেদন লিপিবদ্ধ হয় না। সশরীরে এসে আবেদন লিপিবদ্ধ করতে হয়। অফিসে এসেও ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। বেশির ভাগ সময় সার্ভার বন্ধ থাকায় দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়।
একাধিক দালালের সঙ্গে কথা হলে তাঁরা জানান, ডিজিটাল সেবার পর থেকে কাজ অনেক জটিল হয়ে গেছে। বেশির ভাগ সময় সার্ভারে সমস্যা থাকা এবং প্রয়োজনীয় নথিপত্র না পাওয়ায় কাজ করতে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। নামজারিতে নানা কঠোরতার কারণে কমে গেছে জমি বেচাকেনাও। আগে যেখানে ১০০ আবেদনে অন্তত ৮০টি জমির নামজারি হয়েছিল, বর্তমানে আট থেকে ১০টি হচ্ছে। এমন দীর্ঘসূত্রতার কারণে হয়রানিতে পড়ছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।
চকবাজারের বাসিন্দা মো. কুতুব উদ্দিন আসেন নামজারির একটি সনদের জন্য। তিনি বলেন, ‘ডিজিটালে আমরা তেমন একটা পরিবর্তন দেখিনি। আজ একটা নামজারির সার্টিফিকেটের আবেদন করতে আসছিলাম। আজ পাইনি, অফিসার ছুটিতে আছেন। পরে হয়তো দেবেন। ’
তিনি বলেন, ‘অফিসের লোকজন কইতাছে যে আইডি থেইক্কা আগে জমা দিছি হেই আইডি থেইক্কা দেওন লাগবো। যে জমা দিছিলো হের নাম্বার আছে কিন্তু ফোন ধরে না। এহন একটা হয়রানি না? ভূমি অফিস থেকে বলতাছে নতুন কইরা আইডি খোলা যাইবো না। এহন আমার প্রশ্ন হইলো, তাইলে আমি আর কোনো দিনও খাজনা দিতাম পারমু না?’ (এই ব্যক্তির বক্তব্য হচ্ছে—আইডি নম্বর যে করা লাগে এই বিষয়টি বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষই জানেন না। তিনিও জানতেন না। কিন্তু এখন এই বিষয়টির কোনো সমাধান তিনি খুঁজে পাচ্ছেন না। )
শামছুজ্জামান নামের এক ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, তাঁর বাবা প্রায় ৩০ বছর আগে লালবাগের এক ব্যক্তির কাছ থেকে তিন শতাংশ জায়গা কেনেন। জায়গাও তাঁদের দখলেই আছে। কিন্তু সর্বশেষ সিটি জরিপের সময় তাঁর বাবার কেনা জায়গা পুনরায় বিক্রেতার হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়। ২০০২ সালে বিষয়টি তিনি জানার পর তাঁর বাবা মামলা করেন। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রায় ২৩ বছর পর বিষয়টি শামছুজ্জামান জানতে পারেন। গত কয়েক বছরে কয়েকবার এটি নিয়ে কানুনগোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেছেন। কয়েকবার শুনানিও হয়েছে। কিন্তু জরিপের এই ভুলটি সংশোধনের কোনো পথ এখনো বের হয়নি।
হাজারীবাগের বাসিন্দা অলিউর রহমান। বেড়িবাঁধ এলাকায় ৯২ একর জমি তাঁর দাবি করে তিনি মিসকেস করেছেন। তিনি বলেন, ‘২০১৯ সাল থেইক্কা এইটা নিয়ে দৌড়াচ্ছি। আদালতের রায় আমার পক্ষে—কিন্তু জায়গা আমার দখলে নেই। এখন মামলার রায় জমা দিতে আসছি। সিএস আমার নামে আরএস আর সিটি জরিপ তাদের নামে দেখাচ্ছে। কিন্তু মূল দলিল আমার নামে আমার কাছেই আছে। ’
লালবাগের বাসিন্দা মোস্তফা নাজমুল হাসান সজিব। তিনি বলেন, নামজারি আমার আগেই ছিল। বালাম বই থেকে কম্পিউটারে তথ্য হালনাগাদ করতে গিয়ে তারা ভুল করেছে। যে নামজারি করছে ওটার নম্বর ১০। বিক্রিকৃত জায়গার নম্বর ১২। কিন্তু ১০ নম্বরই দিয়ে রেখেছে। একই দাগে দুজনের জায়গা এখন। ’
তিনি বলেন, ‘অনলাইনে অভিযোগ করা বা সমাধানের কোনো সুযোগ নেই। মিসকেস করতে হয়, শুনানি করতে হয়। তিন মাস ধরে ঘুরছি। আমি দুইবার শুনানিতে আসছি। আগেরবার বলছিল আমরা দেখছি। দেখি আজ কী বলে। ’
এদিকে মিরপুরের সেনপাড়া পর্বতা ভূমি অফিস ঘুরে দেখা যায় দুর্ভোগের নানা চিত্র। মিরপুর-১০ নম্বর থেকে আসা তাহমিনা আক্তার বলেন, ‘ভাই-বোনদের মধ্যে বাড়ি ভাগাভাগি হয়েছে। তাই নামজারি করতে এসেছি। অফিস থেকে বলছে আগে দাগ নম্বর দিতে হবে। যদিও আগে দাগ নম্বর ছিল, তারা বলছে কি যেন সমস্যা হয়েছে। নতুন করে দাগ নম্বরের কাগজ ওঠাতে রবিবার যেতে বলছে। ’
সেনপাড়া এলাকার বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম শাওন বলেন, ‘নামজারি করার জন্য অনলাইনে আবেদন করেছিলাম। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আবেদনটি জমা হওয়ার কথা। ১১ দিন পার হলেও আবেদন লিপিবদ্ধের কোনো নোটিফিকেশন পাইনি। তাই সশরীরে আবেদন জমা দিতে এসেছি। এসে দেখি সার্ভার ডাউন। এরপর আবার কাজের জন্য এক বেঞ্চ থেকে অন্য বেঞ্চে পাঠানো হয়েছে। মূলত হয়রানি করে টাকা আদায় করার ফন্দি। ’
টোলারবাগ কামারপাড়া থেকে আসা কামাল হোসেন বলেন, ‘খাজনা দিতে এসেছিলাম। সার্ভারে সমস্যার কারণে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। পরে এক কর্মকর্তার কথায় টাকা জমা দিয়ে চলে এসেছি। ’ তিনি বলেন, সার্ভার চালু হলেই জমা হয়ে যাবে।
মিরপুর-১ নম্বরের বাসিন্দা শেখ সেলিম জানান, অনলাইনে আবেদন করলেও বেশির ভাগ সময় সেই আবেদন লিপিবদ্ধ হয় না। সশরীরে এসে আবেদন লিপিবদ্ধ করতে হয়। অফিসে এসেও ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। বেশির ভাগ সময় সার্ভার বন্ধ থাকায় দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়।
একাধিক দালালের সঙ্গে কথা হলে তাঁরা জানান, ডিজিটাল সেবার পর থেকে কাজ অনেক জটিল হয়ে গেছে। বেশির ভাগ সময় সার্ভারে সমস্যা থাকা এবং প্রয়োজনীয় নথিপত্র না পাওয়ায় কাজ করতে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। নামজারিতে নানা কঠোরতার কারণে কমে গেছে জমি বেচাকেনাও। আগে যেখানে ১০০ আবেদনে অন্তত ৮০টি জমির নামজারি হয়েছিল, বর্তমানে আট থেকে ১০টি হচ্ছে। এমন দীর্ঘসূত্রতার কারণে হয়রানিতে পড়ছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।
সৌজন্যে: কালের কণ্ঠ